বিএনপির রাজশাহীর সমাবেশকে ঘিরে সিরাজগঞ্জে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠছে। মহাসমাবেশ সফল করতে বিএনপির মাঠে নামাকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। ১৮ নভেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া ও জেলা বিএনপির সভানেত্রী রুমানা মাহমুদসহ দলের নেতাকর্মীরা কামারখন্দে সমাবেশ সফল করতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য লিফলেট বিতরণ করার সময় আওয়ামী লীগের হামলায় দু’গ্রুপের সংঘর্ষ হয়।
এসময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী পাপিয়া ও সাবেক এমপি জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদসহ দলের অন্তত ১০ জন আহত হয়।
এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে দায়ী করেছে। আওয়ামীলীগ নেতা সেলিম রেজা বাদী হয়ে কামারখন্দ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ সুইট, ভিপি শামীম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কায়েসসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞতা ২শ’ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় দুজনকে পুলিশ আটক করেছে।
অন্যদিকে, শনিবার সকালে জেলা আওয়ামী লীগ বিএনপিকে দায়ী করে বিএনপির নৈরাজ্য ও লুটপাটের প্রতিবাদে জেলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং কামারখন্দে মানববন্ধন করেছে। অন্যদিকে বিএনপি হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করার পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আহত জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি রুমানা মাহমুদ জানান, আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী বিএনপির সমাবেশ সফল করার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াসহ সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে কামারখন্দ উপজেলার সদরে পথসভা ও লিফলেট বিতরনের শেষ পর্যায়ে গাড়িতে উঠার সময় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বিনা ভোটের এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্নার নির্দেশে আমাদের উপর হামলা চালায়। তারা কাঠের বাটাম দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করে।
আমি হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে আমার হাতে আঘাত লাগে এবং আমি মাটিতে পড়ে গিয়ে গুরুত্বর আহত হই। এ সময় কেন্দ্রীয় নেত্রী পাপিয়াসহ দলের আরো ৮-১০ জন আহত হয়।
তিনি জানান, এর আগেও আমাকে হত্যার উদ্দেশে দুইবার আক্রমণ করা হয়েছিল। একবার সরাসরি আমাকে গুলি করা হয়েছিল। ওই সময় আমার হাতে পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছিল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ হামলা করেছে। আবার আওয়ামী লীগ আমাদের দুষছেন এবং আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করছেন। নিজেদের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো আওয়ামী লীগের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, পুলিশের কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে তারা শিষ্টের দমন ও দুষ্টের পালন করার দায়িত্ব নিয়োজিত রয়েছেন। আওয়ামী লীগ যে বক্তব্য দিচ্ছে পুলিশও একই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে। এ ধরনের পুলিশ কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকলে তাদের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
আহত কেন্দ্রীয় নেত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া জানান, পরিকল্পিভাবে আওয়ামী লীগ আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। তিনি বলেন, থানায় গেলে পুলিশ মামলা নিবে না। এজন্য কোর্ট খুললে তারা কোর্টে মামলা দায়ের করবেন। তিনি বলেন, পুলিশের দায়িত্ব সবার জানমাল রক্ষা করা। অথচ পুলিশ এক তরফাভাবে শুধু আমাদেরকে লক্ষ্য করেই গুলি ছুড়েছে। যেসব পুলিশ সদস্যরা এসব কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে সেসব পুলিশ সদস্যদের তালিকা করে রাখা হচ্ছে বলেও জানান।
বিএনপির অভিযোগ মিথ্যাচার উল্লেখ করে সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না জানান, কামারখন্দ একটি শান্তিপ্রিয় থানা। বিএনপি পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে কামারখন্দকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে লাঠি ও রামদা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে। যা ভিডিওতে দেখা গেছে। বিএনপি কামারখন্দ উপজেলায় সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের সৃষ্টি করতেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি সবসময় মিথ্যাচার করে বেড়ায়। যদি তাদের হামলার উদ্দেশ্যে না থাকতো তবে কেন তাদের অফিস থেকে ককটেল ও লাঠিসোটা পাওয়া গেলো? তিনি ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুন্নবী প্রধান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিএনপির নেতৃবৃন্দ কি বলছে-সে বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।
নবচেতনা / এমএআর