বেড়া (পাবনা)প্রতিনিধিঃ পাবনার বেড়া-সাঁথিয়া ফরিদপুর ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা নিয়ে বাঘাবাড়ি দুগ্ধাঞ্চল। এখানকার খামারের উৎপাদিত দুধ দেশে দুধের চাহিদার একটি বড় অংশ পুরণ করে থাকেন। গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দীর্ঘ দিন ধরে শিল্পের সংকট বিরাজ করছে। দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্যাকেটজাত দুধসহ সকল পণ্যের বিক্রয় মূল্য বাড়ালেও ক্রয় মূল্য বাড়াননি। ফলে ন্যায্য মূল্য বঞ্চিত হয়ে খামারিরা গো পালন কমিয়ে দিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দুধ উৎপাদনে। আর এই সুযোগে একটি অসাধু চক্র নকল দুধ উৎপাদনে আবার সক্রিয় হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গো-খামারি ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সম্ভাবনাময় এ শিল্পের চরম দুর্দিন বিরাজ করছে।করোনা কালীন সময়ে গরু মোতাতাজা করণ খামারগুলো গরু লালন পালন করে ব্যাপক লোকসানের মধ্যে রয়েছেন। এসময় লাভের মুখ না দেখায় অনেক প্রতিষ্ঠিত খামারি গো-পালন বন্ধ অথবা কমিয়ে দিয়েছেন।
অপর দিকে গাভী পালন করা খামাড়িরা তাদের উৎপাদিত দুধ স্থানীয় দুগ্ধ সংগ্রহশায় সরবরাহ করে উৎপাদন খরচও ঘরে তুলতে পারছেন না।এ নিয়ে তারা হতাশা প্রকাশ করছেন।
বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম মহল্লার নারী উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার গ্রহনকারী স্কুল শিক্ষিকা মাহফুজা খাতুন মিনা বলেন,তিনি ব্রাক কোম্পানিতে ফ্যাট মেপে দুধ বিক্রি করতেন। তাদের কাছে দুধ বিক্রি করে ৪২ থেকে ৪৫ টাকার বেশি পাচ্ছিলেন না। বাধ্য হয়ে তিনি খোলাবাজারে ৬০থেকে ৭০ টাকা লিটার দরে সেই দুধ বিক্রি করছেন। কোম্পানিগুলো দুধের ন্যায্য মূল্য বঞ্চিত করায় তিনি গরু পালন কমিয়ে দিয়েছেন।তার খামারের শতাধিক দুধেল গরুর মধ্যে এখন ৬০ টি গরু রয়েছে। তার মতে কোম্পানিগুলো দুধের ক্রয় মূল্য না বাড়ালে হাজার হাজার পরিবারের জীবন জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
সাঁথিয়া উপজেলার পার করমজা গ্রামের মালয়েশিয়া ফেরত আব্দুল্লাহ জানান,দশবছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় একটি গো-খামার গড়ে তুলেছিলেন। বাড়ির অদুরে স্থানীয় চতুর হাট থেকে বাছুর ষাড় কিনে তিন চারমাস ধরে পালন করে সেগুলো মোটা তাজাকরণ করে আবার বিক্রি করতেন।এভাবে চার পাঁচ বছর ধরে ভালই লাভ করছিলেন তিনি ।তবে গত দুই তিন বছর ধরে লোকসান গুনতে গুনতে তিনি গরু পালন ছেড়ে দিয়ে আবার মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য কাগজ পত্র ঠিক করছেন।
বেড়া উপজেলা হাটুরিয়া নাকালিয়া “মিল্ক ভিটা” সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ আলম জানান,তার এ সমিতিতে সমবায়ী খামারিরা আর দুধ দিচ্ছেন না। ফলে এখানকার দুগ্ধ সংগ্রহ কার্যক্রম একে বারে বন্ধ রয়েছে।
বেড়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন,এই মৌসুমে পশুগুলো কাঁচা ঘাষ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।সে কারণে দুধের উৎপাদন কম হচ্ছে।তিনি খামারিদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষন ও পরামর্শ দিচ্ছেন কিভাবে কম খরচে গরুগুলোর পুস্টি ঠিক রেখে পরিচর্যা করা যায়।
এদিকে নকল দুধ তৈরি করে একটি চক্র স্খানীয় বিভিন্ন দুগ্ধ সংগ্রশালায় বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এমন তথ্যের ভিত্তিতে বেড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিট্রেট রিজু তামান্না সম্প্রতি বেড়া উপজেলার পেঁচাকোলা গ্রামে অভিযান চালান। সে সময় তিনি বিপুল পরিমান নকল দুধ তৈরির উপকরণ ও যন্ত্রপাতিসহ কারখানার মালিক সঞ্জয় ঘোষকে আটক করেন। তাকে নকল দুধ তৈরি ও বিক্রির অভিযোগে দেড় বছরের কারাদন্ড ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালত।
বে-সরকারি দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান “পিউরী ডেয়রি মিল্ক লিঃ” ব্যবস্থাপনা পরিচালক মানিক হোসেন জানান, নকল দুধ তৈরিকারীরা এমন ভাবে দুধ তৈরি করছে যে তা ল্যাকটোমিটারে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। তারপর কোন কোন কোম্পানির অসাধু কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে তাদের সাথে এমন কাজে জড়িয়ে এ অঞ্চলের দুধের সুনাম নস্টের তৎপরতার লিপ্ত হচ্ছে বলে ধরে নেয়া যেতে পারে।
বেড়া উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ সবুর আলী বলেন, তিনি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সম্প্রতি বেড়া উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিট্রেট রিজু তামান্না উপজেলার পেঁচাকোলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে নকল দুধ তৈরি ও বিক্রয়ের অভিযোগে সঞ্জয় ঘোষ নামের এক দুধ ব্যবসায়ীকে আটক করে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা ও দেড় বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন। নকল দুধ তৈরিকারীদের বিরুদ্ধে এর আগে শুধু অর্থদন্ড প্রাদান করা হতো।এখন তারা ধরা পড়লেই জেল প্রদান করা হবে বলে তিনি কঠোর অবস্থান জানান।