করোনার জন্য দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান সাধারণ ছুটি আরও ৩৫ দিন বাড়ানো হয়েছে। ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এ ছুটি।
এ সময়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক অনলাইনে ও সরাসরি যোগাযোগ রাখতে শিক্ষকদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল এ ছুটি।
এদিকে ছুটি বৃদ্ধির ফলে আগামী বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সংকট আরও বেড়ে গেছে। সাধারণত প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি এবং এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা হয়।
এসএসসির শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের কাজ হয়ে থাকে নভেম্বরে। আর ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের একই কাজ হয়ে থাকে। ছুটি বাড়ানোর কারণে এ দুটি কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে আগামী বছরের পরীক্ষা দুটিও পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বৃহস্পতিবার বলেন, এ সময়ে বোর্ডগুলো পরবর্তী এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে কাজ করে থাকে।
নতুন ছুটির বিষয়টি সামনে আসায় আগামী বছরের এ দুটি পরীক্ষা নিয়ে নতুনভাবে পরিকল্পনা করা হবে। এক্ষেত্রে তাদের অসম্পূর্ণ শ্রেণিকাজ, লেখাপড়া, বিভিন্ন পরীক্ষা ইত্যাদি বিবেচনায় আসবে।
পরীক্ষা পেছানো হবে কিনা সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো চিন্তা করা হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান বলেন, যৌক্তিক কারণেই এসএসসি ও এইচএসসির সিলেবাস-শিক্ষাক্রম কমানোর সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে গোটা পাঠ্যবই শেষ করেই পরীক্ষা হওয়া বাঞ্ছনীয়।
করোনায় ক্লাস না হওয়ায় এখন সিলেবাস শেষ করতে কতদিন লাগবে সেটা হয়তো স্কুল-কলেজ খোলার পর বলা যাবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন এবং মূল্যায়ন শেষে পরীক্ষা বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। এ কারণে ইতোমধ্যে চলতি বছরের পিইসি, জেএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা।
পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষার্থীসহ অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিশেষ মূল্যায়নে নতুন ক্লাসে পদোন্নতির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ১ নভেম্বর থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ (বাড়ির কাজ) দেয়া শুরু হয়েছে।
প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্যও বিশেষ সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। এসব সিলেবাস তৈরির সময় শিক্ষার্থীদের বয়স অনুযায়ী জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জনের দিকে নজর দেয়া হয়েছে।
আর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গ্রেড দেয়া হবে তাদের জেএসসি ও এসএসসিতে অর্জিত ফলের ভিত্তিতে। এসব শিক্ষার্থীর ফল তৈরির কাজ চলছে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে না হওয়ার শঙ্কা আছে। কেননা, দীর্ঘ ছুটির কারণে সংকট তৈরি হয়েছে আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে। আরও ৩৫ দিন ছুটি ঘোষণা করায় এসব শিক্ষার্থীর শ্রেণি কার্যক্রমের সময় দাঁড়াল ৯ মাস।
সাধারণত বছরের জুলাইয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাক-নির্বাচনী আর অক্টোবর-নভেম্বরে নির্বাচনী পরীক্ষা নেয়া হয়। আর দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাক-নির্বাচনী বা অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা জুলাই-আগস্টে এবং ডিসেম্বরে নির্বাচনী পরীক্ষা হয়ে থাকে।
এরপর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করা হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রাক-নির্বাচনী এবং নির্বাচনী উভয় পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এসব পরীক্ষার্থীর একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাও হয়নি।
একাদশ শ্রেণিতে কলেজ পর্যায়ে নেয়া বিভিন্ন ক্লাস টেস্ট আর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে তাদের ‘অটো পাস’ দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসএসসি প্রোগ্রাম ২ বছরের জন্য হলেও ২৫ মাস পর পরীক্ষা নেয়া হয়। যদিও বাস্তবে এসব শিক্ষার্থী ২ বছরে ১৭-১৮ মাস পাঠদান পেয়ে থাকে। অন্যদিকে এইচএসসি ২ বছরের প্রোগ্রাম হলেও বাস্তবে পাঠদান হয়ে থাকে ১৬ মাসের মতো।
সেই হিসাবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা ইতোমধ্যে দাবি তুলেছেন যে, শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো লেখাপড়া করিয়ে এ দুটি পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
নইলে তাদের লেখাপড়া বা দক্ষতা অর্জনে ঘাটতি থাকবে। পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষায় গিয়ে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবে।
উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফেরদৌসুর রহমান নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর বাবা বলেন, ২১ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর তারা ভেবেছিলেন যে, ১৪ নভেম্বরের পর সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে।
এ সময়ে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা বিশেষ শ্রেণি কাজের সুবিধা পাবে। কিন্তু এ ছুটির কারণে সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে গেল। বিশেষ করে যথাসময়ে মূল পরীক্ষা না হওয়ার শঙ্কা তৈরি হল।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান জিয়াউল কবীর দুলু বলেন, ‘সরকার শিক্ষার্থীদের ভালোর দিকটি বিবেচনা করে ছুটি বাড়িয়েছে। আমরা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তবে আমরা এটাও চাই যে, এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম শেষ করেই যেন পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
নইলে শেখা ও জ্ঞান অর্জনে যে ঘাটতি থাকবে তা পরবর্তী জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে যেতে পারে। এ কারণে প্রয়োজন হলে পরীক্ষা পেছানো যেতে পারে।’