চার বছরে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে উল্লাসে মত্ত ছিল এসেক্স কাউন্টি ক্লাব। ঐতিহাসিক লর্ডসের ব্যালকনিতে শিরোপা উদযাপন ছিল বাঁধনহারা। কিন্তু এর মাত্রা এতোই বেশি ছিল যে রীতিমতো হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান উইল বাটলম্যান, মদ ঢেলে দেন দলের মুসলিম ক্রিকেটার ফিরোজ খুশির গায়ে।
আর তাতেই কালিমা লেগে যায় দলের শিরোপা আনন্দে। যেখানে ছিলো উৎসবের আমেজ, সেখানে মুসলিম ক্রিকেটারের গায়ে মদ ঢালার ছবি প্রকাশ পেতেই শুরু হয়ে যায় বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড়। রীতিমতো প্রশ্ন তোলা হয় এসেক্স ক্লাবের মূল্যবোধ নিয়ে। কেননা কোনো মুসলিম ক্রিকেটার সাধারণত মদজাতীয় যেকোনো সামগ্রী থেকে দূরেই থাকার চেষ্টা করেন।
ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার বব উইলিস ট্রফির ফাইনাল ম্যাচের শেষদিন। এসেক্স ও সমারসেটের মধ্যকার ম্যাচটি ড্র হয়। তবে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকায় শিরোপা চলে যায় এসেক্সের ঘরে। সেই শিরোপা নিয়ে মাঠে উদযাপন করতে না পারলেও, লর্ডসের ব্যালকনিতে উল্লাসে ফেটে পড়েন এসেক্সের ক্রিকেটাররা।
তখন স্বাভাবিকভাবেই দলের সঙ্গে ছিলেন ফাইনাল ম্যাচে না খেলা ২১ বছর বয়সী ফিরোজ খুশি। ফাইনাল ম্যাচটিতে ছিলেন না উইল বাটলম্যানও। কিন্তু দলের শিরোপা উল্লাসে যোগ দিতে তো আর সমস্যা নেই। সেই ভাবনায়ই লর্ডসের ব্যালকনিতে ছিলেন ফিরোজ ও বাটলম্যান।
উদযাপনের একপর্যায়ে ইংল্যান্ডের স্বাভাবিক রীতি মেনেই বিয়ার ও শ্যাম্পেন ছেটানো শুরু করেন ক্রিকেটাররা। তখন সঙ্গতকারণেই সেই ব্যালকনির একপাশে চলে যান ফিরোজ খুশি। কিন্তু সেখানেও বিয়ারের ছোঁয়া থেকে নিস্তার পাননি তিনি। উল্লাসের একপর্যায়ে উইল বাটলম্যান এক ক্যান বিয়ার প্রায় পুরোটা ঢেলে দেন ফিরোজ খুশির গায়ে।
Feroz-khushi-2
এই ছবি ছড়িয়ে পড়তেই তুলকালাম কাণ্ড শুরু হয়ে যায় ইংল্যান্ডে। বিশেষ করে কয়েকদিন আগেই যখন মাইকেল কারবেরি, এমিলি রেইনফোর্ড ব্রেন্ট, আজিম রফিকের মতো সাবেক ক্রিকেটাররা ইংল্যান্ডে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছিলেন, তখনই এমন এক ঘটনা বিতর্কের আগুন আরও উসকে দিচ্ছিল।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে সময় নেয়নি এসেক্স ক্লাব। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে বিষয়টি পরিষ্কার করে তারা। একইসঙ্গে বৈচিত্রতা ও নৈতিকতার শিক্ষার দিকেও জোর দেয়ার কথা বলেছে তারা।
বিবৃতিতে তারা লিখেছেন, ‘কাউন্টি এবং তার আশপাশের অন্যান্য অঞ্চলের বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষদের একসঙ্গে নিয়ে কাজ করায় গর্ববোধ করে এসেক্স। বেশ লম্বা সময় ধরেই এসেক্সে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড, ধর্ম এবং বর্ণের ক্রিকেটাররা একইসঙ্গে খেলেছে যাচ্ছেন। যেখানে সব গোত্রের সবার মূল চাহিদা হলো ক্রিকেট।’
‘ক্রিকেটকে সকলের কাছে পৌঁছে দিতে আমাদের ক্লাব নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে এবং বৈচিত্রতাকে মেনে নেয়ার শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রেও কাজ করে যাবে। বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মের মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখতে আরও অনেক কাজ করে যেতে হবে। সেটা হোক খেলাধুলা কিংবা সমাজের সাধারণ মানুষদের ব্যাপারে।’
এসেক্স এবং ইস্ট লন্ডনের জাতীয় ক্রিকেট লিগের কো-ফাউন্ডার সাজিদ প্যাটেল পুরো ঘটনাটিকে আপত্তিকর উল্লেখ করে বলেছেন, ‘ফিরোজ বারান্দার কোনায় দাঁড়িয়ে ছিল। নড়তেও পারছিল না। একটা কাজই সে করতে পারত- লাফ দেওয়া। তার গায়ে কারও অ্যালকোহল জাতীয় পদার্থ ঢালার ছবিটা একটি নারকীয় দৃশ্য।’
এদিকে এমন এক ঘটনায় পুরো দলের হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেম এসেক্সের অধিনায়ক টম ওয়েস্টলি। তিনি বলেছেন, ‘রোববার আমাদের উদযাপনের সময় দলের মাধ্যমে যেসব আপত্তিকর কাজগুলো হয়ে গেছে, তার জন্য আমি দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি। এসেক্সে আমরা ড্রেসিংরুমে সবার জন্য সমান সুবিধা ও শক্ত বন্ধনেই বিশ্বাস করি। মাঠ এবং মাঠের বাইরে সবার বিশ্বাসকে সমর্থন দেই আমরা।’
‘দল হিসেবে আমরা এখন সবাই একটা অবস্থানে এসেছি এবং সেদিনের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেছি। এমন একটা বিষয় ঘটে যাবে, তা আমরা বুঝতে পারিনি এবং আমরা সবাই অনেক বেশি হতাশ। সামনের দিনগুলোতে আমাদের দল যেকোনো কাজের ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকবে এবং বোর্ডের সহায়তায় ভালো কিছু শেখার দিকে মনোযোগী হবে।’