সম্প্রতি ‘রুটের গাড়ি ভাড়া’ পরিশোধ সংক্রান্ত একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ‘গৃহদাহ’ শুরু হওয়ার কথা জানা গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৪ শাখা থেকে জারি করা চিঠিতে ‘গাড়ি প্রাধিকারপ্রাপ্ত নন’ এমন কর্মকর্তাদের ‘রুটের গাড়ি’ ব্যবহারের বার্ষিক ভাড়া পরিশোধ করতে বলা হলেও যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে তা পরিশোধ করতে চাচ্ছেন না অনেকে।
তাদের বক্তব্য হল- গাড়ি পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’দের বিনা সুদে ৩০ লাখ টাকা ঋণ দিয়ে গাড়ি কেনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপরন্তু প্রতি মাসে গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। এ সুবিধা গ্রহণের পরও সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘন করে যারা ‘রুটের গাড়িতে’ অফিসে আসা-যাওয়া করছেন, তাদেরও গাড়ি ভাড়া পরিশোধ করা উচিত।
সরকারের কাছ থেকে বিনাসুদে ও সহজ শর্তে ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনলেও বেশিরভাগ কর্মকর্তা কেন ‘রুটের’ মাইক্রোবাস কিংবা উন্নয়ন প্রকল্পের দামি গাড়ি ব্যবহার করছেন, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
অভিযোগ উঠেছে, এ ধরনের একটি অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চললেও এ বিষয়ে যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় এ সংক্রান্ত কঠোর নীতিমালাটি মূলত পরিণত হয়েছে ‘কাগুজে বাঘে’।
উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি নগদায়ন ঋণ সুবিধা চালু করা হয়। প্রথমে গাড়ি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধিকারপ্রাপ্ত যুগ্মসচিবদের এ সুবিধা দেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে উপসচিবরা এ সুবিধার আওতায় আসেন।
এ ধারাবাহিকতায় গাড়ি নগদায়ন নীতিমালার আওতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৪ হাজার কর্মকর্তাকে ঋণ দেয়া হয়েছে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ১২শ’ কোটি। এছাড়া প্রতি মাসে এসব গাড়ির পেছনে রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা বাবদ ব্যয় হচ্ছে সরকারের আরও প্রায় ২০ কোটি টাকা।
প্রশ্ন হল, সরকারি ঋণের টাকায় দামি গাড়ি কিনে প্রতি মাসে যারা রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা পাচ্ছেন, তারা কেন ‘রুটের গাড়িতে’ যাওয়া-আসা করবেন? এ প্রবণতা জরুরি ভিত্তিতে রোধ করা প্রয়োজন।
সরকার বেশকিছু শর্তে সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার ঋণ দিলেও অভিযোগ রয়েছে, সরকারি টাকায় কেনা গাড়ি দিয়ে তারা কেবল ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে আনা-নেয়াসহ পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছেন; আর দফতরে আসা-যাওয়া করছেন মন্ত্রণালয়ের গাড়িতে।
দেখা যাচ্ছে, সরকার মহৎ উদ্দেশ্যে এ ব্যবস্থাটি চালু করলেও সুবিধাভোগীরা ‘গাছেরটাও খাচ্ছেন, আবার তলারটাও কুড়াচ্ছেন’। এ অনিয়মের যথাযথ তদন্ত করে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া উচিত।