আসন্ন উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ ও এসএম জাহাঙ্গীরের কর্মী-সমর্থদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার বিকাল ৪টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে দু’পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে বিকাল সাড়ে ৫টায় চারটি আসনের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভার্চুয়ালে সাক্ষাতকার নেয় বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ড।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাক্ষাতকার উপলক্ষে ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮, নওগাঁ-৬ ও সিরাজগঞ্জ-১ এই চারটি আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দুপুর থেকে গুলশান কার্যালয়ে মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন। তবে ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহম্মেদ ও যুবদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে কার্যালয়ে আসেন। এ সময় নেতাকর্মীদের হাতে ব্যানার, ফেস্টুন দেখা যায়। এ দু’নেতার কর্মী-সমর্থকরা কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে নিজ প্রার্থীর পক্ষে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে কফিল উদ্দিনের কর্মী-সমর্থকদের ওপর অতর্কিতভাবে লাঠিসোঠা নিয়ে হামলা চালায় একদল যুবক।
কফিল উদ্দিনের সমর্থকদের দাবি, এসএম জাহাঙ্গীরের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। তবে জাহাঙ্গীরের পক্ষের নেতাকর্মীরা দাবি করেন, তারা হামলা করেননি। একপর্যায়ে এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হলে পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। লাঠিসোটা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আধা ঘণ্টা ধরে চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এতে অন্তত ১২ জন নেতা আহত হন। দু’জনের মাথা ফেটে রক্ত পড়তে দেখা যায়। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে উপস্থিত অন্যান্য কর্মী-সমর্থকদেরও ছুটাছুটি করতে দেখা যায়। পরে কফিল উদ্দিন ও এসএম জাহাঙ্গীর এবং সিনিয়র নেতারা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা জানান, এর আগেও সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম দফায় ঢাকা-৫ এর মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই প্রার্থী নবীউল্লাহ নবী ও সালাহউদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপর শুরু হয় ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই প্রার্থী কফিল উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর হোসেন সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া।
গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান জানান, গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিএনপি কার্যালয়ের আশপাশে পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বিকাল ৫টায় ঢাকা-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দিয়ে সাক্ষাতকার শুরু হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যরা নিজ নিজ বাসায় থেকে ভার্চুয়ালে প্রার্থীদের সাক্ষাতকার নেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরাই পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাক্ষাতকার চলছিল। সাক্ষাতকার শেষে পার্লামেন্টারি বৈঠকে প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।
এর আগে চারটি আসনের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দেন বিএনপির ২৮ জন প্রার্থী।
ঢাকা-১৮ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহম্মেদ, যুবদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ব্যবসায়ী নেতা বাহাউদ্দিন সাদী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, মহানগর উত্তরের নেতা হাজী মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, মো. আখতার হোসেন, ইসমাইল হোসেন, হাজী মোস্তফা জামান ও আব্বাস উদ্দিন।
ঢাকা-৫ আসনে হলেন- বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি নবী উল্লাহ নবী, বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, মো. জুম্মন মিয়া, আকবর হোসেন নান্টু ও আনোয়ার হোসেন সরকার।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনে হলেন- টিএম তহজিবুল রহমান তুষার, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, মো. রবিউল হাসান ও সেলিম রেজা এবং নওগাঁ-৬ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- আনোয়ার হোসেন, মো. আব্দুস শুক্কুর, এসএম ফারুক জেমস, মাহমুদুল আরেফিন স্বপন, আতিকুর রহমান রতন মোল্লা, শেখ মো. রেজাউল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, আবু জাহিদ মো. রফিকুল আলম রফিক ও ইছহাক আলী।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ঢাকা-৫ এবং নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ১৭ অক্টোবর। আর ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল এখনও ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন।