বিভাগীয় উপকমিটিগুলোতে আর বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের দেখতে চায় না আওয়ামী লীগ। ভবিষ্যতে কোনো কারণে উপকমিটিতে সাহেদদের মতো কাউকে জায়গা দেয়া হলে তার দায়দায়িত্ব কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিবকে নিতে হবে। এজন্য দলের হাইকমান্ডের কাছে তাদের কৈফিয়ত দিতে হবে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সম্পাদকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি উপকমিটিতে সর্বোচ্চ ৩৫ জন সদস্য রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বুধবার দুপুরে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় এসব নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা নিজেরা কিছু বিষয় আলোচনা করেছি। যেসব জেলা, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে সেগুলোকে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রত্যেক সম্পাদককে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট উপকমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার (শেখ হাসিনা) একটা গাইডলাইন চাই।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সীমিত আকারে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দিচ্ছি। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর আপনার জন্মদিন। এটা আমরা খুব সীমিত আকারে পালন করব। আপনি না বললেও আমরা করব।
জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমার জন্মদিন পালনের প্রস্তাব আমি গ্রহণ করছি না। বাকিগুলোর মধ্যে উপ-কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার সিদ্ধান্ত খুবই ভালো। এটা করা উচিত। যাতে উপ-কমিটিগুলো বসতে পারে। বিষয়ভিত্তিক সেমিনার করা, আলোচনা করা দরকার। আগামী দিনে আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি সেগুলো ঠিক করা দরকার। উপ-কমিটিগুলো এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বৈঠকে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুজিত রায় নন্দী, অসীম কুমার উকিল, ফরিদুন্নাহার লাইলী, প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, ড. সেলিম মাহমুদ, মেহের আফরোজ চুমকি, মৃণাল কান্তি দাস, হাবিবুর রহমান সিরাজ, হারুনুর রশিদ, বিপ্লব বড়ুয়া, শাম্মী আহমেদ, ওয়াসিকা আয়েশা খান, শামসুন্নাহার চাপা, ডা. রোকেয়া, আমিনুল ইসলাম, সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কোনোভাবেই বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের যাতে দলে জায়গা না দেয়া হয় সে বিষয়ে বক্তব্য দেন মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ সম্পাদকমণ্ডলীর বেশ কয়েকজন নেতা।
সভায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়েও আলোচনা হয়। এছাড়া জেলা ও মহানগরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকা, কেন্দ্রীয় উপকমিটিগুলোতে বিতর্কিত লোকদের ঢুকে পড়া, সহযোগী সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপনের কর্মসূচিও ঠিক করা হয়।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, উপকমিটিগুলো অনুমোদনের আগে যেন কেউ ওই কমিটির পরিচয় ব্যবহার না করে। আর অনুমোদনের আগে যেন কমিটির কোনো আনুষ্ঠানিক সভা না করা হয়। আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, উপ-কমিটি গঠনের আগে যাচাই-বাছাই করতে হবে। ইচ্ছামতো কমিটি গঠন করা যাবে না। কারও ওপরে দায় চাপিয়ে দিয়ে রেহাই পাওয়ার বিষয় নেই। এতে করে সংগঠনের ভাবমূর্তি আরও বেশি নষ্ট হয়।
সূত্র জানায়, সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবলীগ ছাড়া অন্য সংগঠনগুলো তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি আওয়ামী লীগের কাছে জমা দিয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিও আওয়ামী লীগের দফতরে জমা দিতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট উপ-কমিটি গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ত্রাণ উপ-কমিটির আকার কিছুটা বড় করার দাবি তোলেন সুজিত রায় নন্দী। তিনি বলেন, এই উপ-কমিটির কাজের আওতা অনেক বড়। দুটি মন্ত্রণালয় মিলিয়ে আমাদের এক উপকমিটিকে কাজ করতে হয়। সুতরাং এ কমিটির পরিধি বাড়ানোর অনুমতি দিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ ছিল : সভায় ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ ছিল এবং এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ফারুক, রশিদ, মাজেদরা বলেছে। খুনিদের পুনর্বাসন ও বিচারকার্য বাধাগ্রস্ত করতেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংবিধানে পাশ করে দায়মুক্তির বিধান করেছিল। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রাণ ভোমরাকে আবদ্ধ করে সামরিক ছায়ায় হ্যাঁ-না ভোটের ক্যানভাসে ১১০ ভাগ ভোটও জিয়াউর রহমান সেদিন পেয়েছিলেন। এটাই হচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নমুনা।
‘১৫ আগস্ট নিয়ে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে’- বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খুনিদের কারা নিরাপদে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল? দূতাবাসে চাকরি দিয়ে কারা পুরস্কৃত করেছিল? যাতে খুনিদের বিচার না হয় সেজন্য মোশতাকের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে কারা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করেছিল? এর জবাব দিতে হবে।’