আওয়ামী লীগ ‘পুতুল সরকার’ হিসেবে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আধিপত্যবাদের পুতুল সরকারে পরিণত হয়েছে। তারা শুধুমাত্র তাদেরই এজেন্ডা এখানে বাস্তবায়িত করছে।
তাদের সরিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার, জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা- এটাই হবে আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। এ লক্ষ্য সফলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে বুধবার বিকালে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
১/১১‘র সরকারের আমলে ২০০৭ সালে ২ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে এই দিনটি বিএনপি কারাবন্দি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে এ ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়া অবদানের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী একজন ক্যারিশমেটিক লিডার। তিনি তো ছিলেন হ্যামিলনের বংশীবাধক। লন্ডন থেকে আসলেন, রোহিঙ্গারা এসে গেছে তখন। আমরা তাকে বললাম, আপনার একবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিজিট করা দরকার। তিনি রাজি হলেন। আমরা কক্সবাজারে গেলাম। পথে পথে লক্ষ লক্ষ মানুষ যাওয়ার সময়ে এবং ফেরার সময়েও। আমাদের নেত্রীকে নতুন করে উজ্জীবিত করেছে যে মানুষ তার সঙ্গে আছে, এখনো আছে। আমার বিশ্বাস এই মানুষগুলোকে সংগঠিত করে আমরা যদি রাজপথে নামতে পারি এই গণতন্ত্র বিরোধী সরকারকে সরাতে পারব।
বিএনপি বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিভিন্ন নাটক তৈরি করেছে। ১/১১‘র সেনা সমর্থিত সরকার তৈরি হয়েছে। দুই বছর সম্পূর্ণ অসাংবিধানিকভাবে সরকার নিয়ে গেছে তারা। তারপর একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে যে নির্বাচনটা ছিল ষড়যন্ত্রমূলক। কিন্তু দেশনেত্রী খালেদা জিয়া একবারের জন্যও মাথা নোয়াননি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন,১/১১’র সরকার দেশে বিরাজনীতিকরণের জন্য এসেছিল। দেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করা ও মাইনাস টুয়ের নামে মাইনাস ওয়ান অর্থাৎ খালেদা জিয়াকে মাইনাস করাই তাদের উদ্দেশ্য। আজকে যারা ক্ষমতায় তারা সেই ধারাবাহিকতার সরকার। মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার যেমনিভাবে গায়ের জোরে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় ছিল, আজকের সরকারও গায়ের জোরে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে এবং একই কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের অধিকার হরণ করছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করছে এবং দেশকে একটা অন্ধকার গহবরে ফেলে দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে যেতে হয়েছে। এটা ষড়যন্ত্রের অংশ। একই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজকে বিদেশে অবস্থান করছে। এই অবস্থা থেকে মুক্ত হতে দলকে সংগঠিত করে রাজপথে নামতে হবে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এই সরকারের ভিত্তি হচ্ছে মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের সময়ে। ওই সরকারের একই ধারাবাহিকতায় আজকে এই সরকার চলছে। এখন যেটা আমাদের করতে হবে খালেদা জিয়ার সম্পূর্ণ মুক্তি করতে হবে। অর্থাৎ উনার মুক্তি মানে গণতন্ত্রের মুক্তি। উনার মুক্তির সঙ্গে দেশের গণতন্ত্রের মুক্তি একবারে ওতোপ্রতোভাবেই জড়িত হয়ে গেছে এখন। আসুন আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে একেবারে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত কাজ করি, আমাদের নেত্রীর মুক্তির ব্যবস্থা করি, গণতন্ত্রের মুক্তির ব্যবস্থা করি।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে এখনো অনেক বেঈমান রয়ে গেছে। যারা শেখ হাসিনা ওয়াজেদকে টিকে থাকতে সাহায্য করছে। শুধুমাত্র সরকারের সংস্থা নয়, আমাদের সেদিকেও একটু খেয়াল রাখতে হবে। দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সুসংগঠিত করে আমরা আন্দোলনে যাবো। কর্তৃত্ববাদী সরকারকে আন্দোলন ছাড়া সরানো যাবে না। দলকে সুগঠিত করার প্রয়োজন রয়েছে। আশা করছি, সুগঠিত দলের মাধ্যমেই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বের করে নিয়ে আসব।
খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু ও জিয়া পরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে তিনি বলেন, আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, জিয়া পরিবার ছাড়া বাংলাদেশে বিএনপির রাজনীতির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। সুতরাং এই পরিবারকে আমাদের লালন করতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ডিপ স্টেট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এটাকে সরকার বলা যায় না, এটাকে একটা শাসন বলতে পারি। এই শাসনের অধীনে যে ডিপ স্টেট অপারেট করছে বাংলাদেশে রাইট নাউ। ১/১১ থেকে শুরু করে সেই ডিপ স্টেট অব্যাহত আছে এখনো। বরং এটা আরো ডিপার হয়েছে। এই ডিপ স্টেটের বিরুদ্ধে আমাদেরকে যদি জয়ী হতে হয়, আমাদেরকে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হবে। এর বিরুদ্ধে কিছু কাজ আছে- এদেরকে ইউ হেভ টু ব্ল্যাইম দেম এন্ড শেইম দেম এভরি ডে। তাদের কাজগুলো সারফেইসে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিনিয়ত দেশের ভেতরে, দেশের বাইরে তাদেরকে আমাদের পুরোপুরি এক্সপোজ করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।