আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সকল সহযোগী সংগঠণের ভেতরে থাকা অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, নিজেরা নিজেদের ভেতরে সমালোচনা এটা আত্মহনন। এটা বন্ধ করতে হবে। যাদের আদর্শ নেই তাদের রাজনীতি করার দরকার নেই। এসব অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দলে আর কোনভাবেই অনুপ্রবেশকারী সুবিধাবাদীদের ঠাই দেওয়া যাবে না।
২৪ আগস্ট সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ উত্তরের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ও আলোচক হিসাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান বক্তব্য রাখেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ উত্তরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, তাসভীরুল হক অনু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইসহাক মিয়া, সৈয়দ মিজানুর রহমান, আজিজুল হক রানা, মহিউদ্দিন আহমেদ। সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমরা রাজনৈতিক যুদ্ধে আছি। সেই যুদ্ধের সেক্টর কমাণ্ডার হলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন থানা ওয়ার্ডের নেতারা। রাজনৈতিক যুদ্ধে জয়ী হতে হলে সাচ্চা রাজনৈতিক কর্মী হতে হবে।
ছাত্রলীগের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সময় দলের অভ্যন্তরে ভুলবোঝাবুঝি ছিল, ভাই এর রাজনীতি ছিল আজ আর ভাই এর রাজনীতি নাই। আমরা সব ঐক্যবদ্ধ শেখ হাসিনার এক কেন্দ্রে, এক নেতৃত্বের পেছনে।
তিনি বলেন, আমাদের সব চেয়ে বড় ক্ষতিকর আমাদের প্রচার যন্ত্র বড় দুর্বল। তবে প্রচার যন্ত্র সবল। কোথায়? আমার বিরুদ্ধে উনি, উনার বিরুদ্ধে উনি। নিজের বেলায় আমরা বড় সচল। এটা খারাপ অভ্যাস। এটা আত্মহনন। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে।
এসময় ফরিদপুরের ছাত্রলীগের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, সেখানে কোন কমিটিই করে নাই। ওখানকার কমিটি ভেঙে দিয়েছে। অথচ একজন স্ট্যাটাস দিল প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিকে বহিষ্কার করা হয়েছে, সেখানে কোন দায়িত্বও, ফায়িত্বও দেয় নাই, কোন কমিটিও গঠন হয় নাই। বলে মেয়াদ শেষ। ভাবখানা এমন যেন আপেল জুস। মনে হয় আপেল জুস ডেট ইজ ওভার।
নানক বলেন, একজন নেতা তিনি আবার সাংবাদিকদের কাছে লবিং করে যে ওদের মেয়াদ শেষ। আর নাই ছাত্রলীগে, এ কি অবস্থা। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। এই অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। সংগঠণের শৃঙ্খলা মানতে হবে। সংগঠনের নেত্রী শেখ হাসিনা, তাকে সামনে রেখিই রাজনীতি করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগের নেতারাই দায়ী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এমন বক্তব্যের জবাবে নানন বলেন, সেদিন বিভ্রান্ত করা হয়েছিল, আর সেই বিভ্রান্তের কেন্দ্র বিন্দু করা হয়েছিল আওয়ামী লীগকে। আওয়ামী লীগের ভেতরেই যে ষড়যন্ত্রকারীরা ছিল মোস্তাক ছিল একথা আমরা অস্বীকার করি না। আমরা এও অস্বীকার করি না সেদিন বাকশালের সদস্য সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জিয়াউর রহমানও এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, একথা আপনারা অস্বীকার করতে পারবেন না। জিয়াউ যদি এই খুনের সাথে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যদি জড়িত না থাকে তাহলে খুনিদের দেশ ত্যাগে সহায়তা করেছেন, কেন করেছেন? জিয়া খুনিদের বিদেশী দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন কেন খুশি করেছেন? কেন চাকরি দিয়েছিলেন? জিয়া একজন খুনি।
আব্দুর রহমান বলেন, ইতিহাসের দায়ভার থেকে খুনি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড থেকে কোন দিন রেহাই পাবে না। দায়ভার এড়াতে পারবে না। খুনি জিয়াউর রহমানের সন্তান তারেজ জিয়াও ইতিহাসের দায় থেকে ২১ আগস্টের ঘটনা থেকে সে রেহাই পাবে না। এই জাতি কোন দিন তাকে রেহাই দেবে না। ওই তারেক জিয়াই ২১ আগস্টের মূল পরিকল্পনা করেছিল। সেই পরিকল্পনার লক্ষ্যই ছিল ১৯৭৫ সালের তাজা খুন যে তাজা রক্ত আর ২১ আগস্টে শেখ হাসিনার রক্তকে একই স্রোতে একই মোহনায় মিলিত করে একাকার করে দিয়ে সর্বশেষ মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে নিঃশেষ করে দিতে হবে এবং এই দেশকে পাকিস্তানকে পাকিস্তান বানানোর পথ সুপ্রশস্ত করতে হবে। সেদিন তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয় নাই, পূরণ হতে পারে না।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র ছিল ষড়যন্ত্র আছে এবং ষড়যন্ত্র থাকবে। কিন্তু আমরা যদি আমাদের দরজা খুলে রাতে ঘুমাই তাহলে চোরে আমাদের ঘরে ডাকাতি করবে চুরি করবে। সেই জন্য আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা আমাদের ঘরের দরজা খুলে আমরা ঘুমাব না। আমাদের ঘরে শত্রু রেখে আমাদের ঘরের দরজা খোলা রখব না। কোন চক্রান্তকারী ষড়যন্ত্রকারীকেই আমরা কোন অবস্থাতেই ছাড় দেব না।
তিনি আরো বলেন, খুনি মোস্তাকেরা বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি আসবার সকল কৌশল তারা জানত। বেহায়া নির্লজ্জতা সবকিছু দিয়ে সেদিন ওদের মতলবকে হাছিল করবার জন্য বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি হয়ে ওদের সেই স্বপ্ন পূরণ করেছিল ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে। আওয়ামী লীগের সংসারে নানা ধরণের হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারী নানা ধরণের মতলববাজ ওরা সেদিনও ছিল আজও আছে। সুতরাং এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী প্রতিবাদী কণ্ঠ উচ্চারণ করতে হবে। যারা ৭৫ এর ১৫ আগস্ট এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে বাংলাদেশের স্বাধীনতার শেষ শিকড়টি উপড়ে ফেলতে চেয়েছিল, আমরাও বলি হয় ওরা বাঁচবে নাইলে আমরা বাঁচব। আমাদের বেঁচে থাকবার প্রয়োজনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির শেষ শিকড়টি আমরা উপড়ে ফেলতে চাই। তিনি ২১ আগস্টের মূলপরিকল্পনা তারেক জিয়ার ফাঁসি দাবি করেন। পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের মরোণত্তর বিচার দাবি করেন।
আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র হনন করার জন্য কেউ কেউ উঠে পড়ে লাগে। এটার একটাই উদ্দেশে রাজনীতিকে বিরাজনীতি করণের একটা চক্রান্ত এই চক্রান্তকারীদের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। এই চক্রান্তকারীদের হাত থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিকে রক্ষা করতে হবে। চক্রান্তকারীরা গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চায় তারা আবার বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে চায়।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগ যেভাবে কাজ করছে যদি আদর্শবান নেতাকর্মী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারেন। আপনারা যদি শেখ হাসিনার পাশে থাকেন কোন মির্জাফর মির্জাফরি করে শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, অনুপ্রবেশকারীরাই দলের বিপদে তারা থাকে না। সুদিনে আসে দুর্দিনে চলে যায়। এরা সুবিধা নেয় সুবিধা নিয়ে চলে যায়। আমরা আমাদের এই প্রিয় সংগঠণে অনুপ্রবেশকারীদের আর কোন প্রকার সুযোগ দিতে চাই না। ওরা ওদের স্বার্থের জন্য আসে। ওরা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ছাত্রলীগের জনপ্রিয়তা ধ্বংস করে ওরা স্বার্থসিদ্ধি আদায় করে করে চলে যাবে। ওদের হাত থেকে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে হবে। আমরা এই সকল অনুপ্রবেশকারীদের রুখে দেব।
নাছিম বলেন, রাজনীতি করে মানুষের কল্যাণে যদি ভূমিকা রাখতে না পারি তবে আমারে রাজনীতি করার কোন প্রয়োজন নেই। রাজনীতি করতে চাই মানুষের কল্যাণে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত ভেঙে দেব। আমরা চাই না আর কোন বিশ্বাসঘাতক দলের ভেতর ঢুকিয়ে সংগঠনের ঐক্যকে নষ্ট করুক।। যাদের নীতি নাই যাদের আদর্শ নাই তাদের রাজনীতি করার দরকার নাই।