সাবেক ডেপুটি স্পীকার ও পাবনা-১ আসনের সাবেক সাংসদ শামসুল হক টুকু, তার ছেলে বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন এবং টুকুর ভাই সাবেক মেয়র আব্দুল বাতেনসহ ১১ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাবনার বেড়ায় দখল, চাঁদাবাজি, অর্থ আত্মসাৎ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে বুধবার (৩০ অক্টোবর) দ্রুত বিচার আইনে পাবনা আমলী আদালত-১ এ এই মামলাটি করা হয়। মামলার বাদী বেড়া পৌর সদরের বৃশালিখা মহল্লার বাসিন্দা মির্জা মেহেদি হাসান। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী এবং বেড়া পৌরসভার এক নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন শাহীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পাবনা আমলী আদালত-১ এর বিচারক মোরশেদুল আলম মামলাটি আমলে নিয়ে বেড়া মডেল থানাকে এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় বাদী অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্তরা ২০১৪ সালের ৬ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিতে অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে বৃশালিখা মহল্লার বাসিন্দা মির্জা মেহেদি হাসানের কাছে গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় অভিযুক্তরা মেহেদি হাসানের পৈত্রিক জমিতে থাকা ২০টি দোকান ও ৫০টি গোডাউন জবর দখল করে নেন। সেইসাথে ওই সব দোকান গোডাউনের ভাড়া না তুলতে বাদীকে হত্যার হুমকি দেন তারা। ২০১৪ সাল থেকে বিগত ১০ বছর ধরে অভিযুক্তরা হুমকি-ধামকি দিয়ে ভাড়ার টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়ে একাধিকবার থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে গেলে তারা কোনো অভিযোগ এমনকি জিডি পর্যন্ত নেয়নি। এতে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মেহেদী হাসানের গত ১০ বছরে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। বাদীর অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর ১০ সেপ্টেম্বর ওইসব দোকান গোডাউনের ভাড়া তুলতে গেলে মেহেদী হাসানকে আবারো ভয়ভীতি দেখিয়ে ভাড়ার টাকা তুলতে নিষেধ করেন অভিযুক্তদের কয়েকজন। এছাড়া ১২ সেপ্টেম্বর জমির মালিকরা অভিযুক্ত কয়েকজনকে দোকান ও গোডাউন ভাড়া তুলতে নিষেধ করলে তারা উল্টো জমির মালিকদের কাছে আবারো এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং হত্যার হুমকি দেন। এ বিষয়ে থানায় মামলা করতে গেলে তারা আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে মামলার বাদী মির্জা মেহেদী হাসান বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে মামলা করতে বা জিডি করতে অনেকবার বেড়া মডেল থানায় গেলেও পুলিশ তাদের ক্ষমতার প্রভাবে কখনও আমাদের কোনো অভিযোগ বা মামলা নেয়নি। দেশের পট পরিবর্তনের পর টুকু, তার ভাই বাতেন ও ছেলে রঞ্জন পলাতক থাকলেও, তাদের অন্য সহযোগীরা এখনও দখল বাণিজ্য করে চলেছে। থানার ওসি, ইউএনও, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার সবার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে আমার জমি ও সম্পদ দখলের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আশা করছি ন্যায়বিচার পাবো।’ মামলার নামীয় ১১ জন আসামী হলেন, সাবেক ডেপুটি স্পীকার শামসুল হক টুকু (৭৬), তার ভাই বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল বাতেন (৭০), টুকুর ছেলে বেড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট আসিফ শামস রঞ্জন (৪৫), বেড়া পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম (৫৫), আব্দুল হালিম (৪৫), আলতাফ হোসেন (৬৭), আবু হানিফ (৭৫), আশরাফ প্রামাণিক (৫২), শাহজাহান আলী ইউনুস (৬১), আলহাজ মোল্লা (৫৮), আব্দুস সাত্তার সরদার (৬২)। তাদের সবার বাড়ি বেড়া পৌরসভার বৃশালিখা মহল্লায়। এর বাইরে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামী করা হয়েছে মামলায়। মামলার প্রধান অভিযুক্ত টুকু গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। তার ছেলে ও ভাই ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক। এ কারণে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। চার নাম্বার অভিযুক্ত বেড়া পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের মুঠোফোনে বুধবার বিকেলে কয়েকবার চেষ্টা করে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।