পালিয়ে যাওয়া রাজনৈতিক নেতার রাজনীতি করার কোন সুযোগ নেই। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এই মুহুর্তে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আপাতত দেয়া উচিত হবেনা। তারা নির্বাচনে আসলে ব্যাংক, শেয়ার বাজার, মেগা প্রকল্পের লুটের টাকা ও পেশীশক্তি ব্যবহার করে নির্বাচনকে কলুষিত করতে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে শেখ হাসিনার ফাঁসি হলে বা তিনি দেশে না আসলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও বিতর্ক আছে। নিষিদ্ধ করলে বিরাজনীতিকিকরণ হবে কি না এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। শুধু আওয়ামীলীগ নয় নিষিদ্ধ করতে হলে তাদের দোসর বাকী ১৪ দলকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। শেখ হাসিনার মাধ্যমে দেশে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল। তিনি রাতকে দিন ও দিনকে রাত বললে কিছু লোক এটাকে চোখ বুজে মেনে নিতো। তাই ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলের মতো ঢালাওভাবে মামলা হলে প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। এতে সঠিক বিচার পেতে বেগ পেতে হবে। প্রকৃত অপরাধীদেরই বিচার হওয়া উচিত। ন্যায় বিচার না হলে বিচার ব্যব¯’ার প্রতি মানুষের আস্থা উঠে যাবে।
আজ (২৬ অক্টোবর, ২০২৪ শনিবার) রাজধানীর এফডিসিতে জুলাই হত্যাকান্ডে জড়িত দলের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জুলাই বিপ্লবে হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া বহু মানুষকে দাফন কাফন করতেও বেগ পেতে হয়েছে। গুলি করে হত্যার পর মৃতদেহ স্তপ করে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনাও ঘটিয়েছে পতিত সরকার। তাই দাবি উঠেছে জুলাই হত্যকান্ডে জড়িত দলগুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন শুধু জুলাই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত দলগুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধ করলেই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে না। বিগত শাসনামলে ৬০ লক্ষ মানুষের নামে গায়েবি মামলা, ৪ হাজার বিচার বহির্ভুত হত্যা, ৭০০ এর বেশি মানুষকে গুম করা, বিডিআর হত্যাকান্ডসহ নানা রকম অপরাধের সাথে যুক্ত বিগত আওয়ামী সরকার ও তার দোসরদের জুলাই হত্যাকান্ডের বিচারের পাশাপাশি গত ১৫ বছরের বিচার নিশ্চিত করা গেলেই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে। তিনি আরো বলেন, যে সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ তার বেশিরভাগ মন্ত্রী, এমপি ছাত্র জনতার বিক্ষোভে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। সেই পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ পত্র কোথায় দিল না দিলো তা নিয়ে জনগণের মাথা ব্যাথা নেই। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র জুলাই গণহত্যায় শহীদদের কবরে গেলেই খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। শহীদদের নামফলকের পাশেই এই পদত্যাগ পত্র লেখা আছে। এছাড়াও গত ১৫ বছরে বিগত সরকারের আমলে যারা বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে সেই সব ব্যক্তিদের আত্মাও বলে দিতে পারবে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র কোথায় আাছে। জনাব কিরণ আরো বলেন, ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমরা ছাত্রলীগের অতীত বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই এই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা টেন্ডারবাজী, খুন, চাঁদাবাজী, হেলমেট বাহিনী গড়ে তোলাসহ কোথাও কোথাও ধর্ষণে সেঞ্চুরীও করেছে। ক্ষমতাসীনদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে পুলিশের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে এই সংগঠনটির। ছাত্রলীগের রাজনীতির কথা শুনলেই মানুষ ভয় পেত, আতংকিত হয়ে উঠতো। ছাত্র রাজীনীতির আড়ালে ক্ষমতা, সম্পদ, টাকা পয়সা, তদবির বাণিজ্যই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের কাছে। হল দখল, সিট দখল, গণরুমে নির্যাতন ও র্যাগিংয়ের মতো অপরাধে অভিযুক্ত ছিল ছাত্রলীগ। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব নিয়োগ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার করতো এই ছাত্র সংগঠনটি। তাই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে দেশে সুস্থ ছাত্র রাজনীতি চর্চা ফিরে আসবে বলে আমরা আশা করি। তবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হবার পর আমি আশা করবো ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরসহ যে ছাত্র সংগঠনগুলো এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যাতেনর শিকার হয়েছে তাদের মধ্যে যাতে কোন বিভেদ সৃষ্টি না হয়। আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের অনুপ¯ি’তিতে ছাত্রদল ও ছাত্র শিবির যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে যার যার অবস্থান থেকে শিক্ষাঙ্গনসহ সারা দেশের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখে। ইতোমধ্যে আমরা দু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান দেখতে পেয়েছি। যা আমাদের সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতির ভরসার জায়গা নষ্ট করে। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ঐতিহ্যময় যে ইতিহাস তা যাতে পুনরূদ্ধার হয়, তেমনটাই আমরা আশা করছি ভবিষ্যৎ ছাত্র নেতৃত্বের কাছে। যার মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতি পরিপূর্ণতা প্রকাশ পাবে। আমরা সেই ছাত্র রাজনীতি চাই যে ছাত্র রাজনীতি অস্ত্রবাজী করবেনা, খুনা-খুনি করবে না, হল দখল করবে না। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে জুলাই হত্যাকান্ডে জড়িত দলের ভবিষ্যৎ রাজনীতি শীর্ষক ছায়া সংসদে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিতার্কিকদের পরাজিত করে প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক আব্দুল্লাহ তুহিন, সংবাদিক আরিফুজ্জামান মামুন, সংবাদিক আহমেদ সরওয়ার, সংবাদিক মো. আব্দুল্লাহ আল রাফি। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।