সম্প্রতি সারা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি দেশীয় কোম্পানি মার্কিন দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করে। তারা আবেদনে উল্লেখ করে- দেশটিতে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য তারা যেতে চায় এবং সেজন্য সে দেশের একটি কোম্পানির সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করবে তারা। এসব বিষয় ছাড়াও প্রমাণ হিসেবে সারা এন্টারপ্রাইজ ১২ লাখ ডলারের প্রমাণাদিসহ যাবতীয় কাগজপত্র জমা দেয়। কিন্তু এমন আবেদন পাওয়ার পর সন্দেহ জাগে দূতাবাস কর্তৃপক্ষের। তারা বিষয়টি যাচাই বাছাই শুরু করে। কারণ এ ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য সাধারণত কোনো দেশ থেকে আবেদন করার কথা। কিন্তু সেটি একটি কোম্পানি করায় তাদের সন্দেহের জায়গাটা বাড়তে থাকে। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে তারা জানতে পারে সারা এন্টারপ্রাইজ নামের কোম্পানিটি ভুয়া। তারা মূলত মার্কিন ভিসা নিয়ে দেশটিতে যাওয়ার জন্য এমন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল। পরে তারা বিষয়টি পুলিশকে জানালে এ ঘটনায় ৬ জনকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানায় একটি মামলা করে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে নিযুক্ত সহকারী আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাইকেল লি। এর আগে ওইদিন সকালের দিকে তাদেরকে ডাকা হয়। এ সময় তাদের ইন্টারভিউয়ের জন্য আনা ডিজিডিপির নথি, সারা এন্টারপ্রাইজ থেকে পাওয়া ই-মেইল ও ডিজিডিপির স্ট্যাম্প নিয়ে চ্যালেঞ্জ করলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। এরপর তাদেরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে কর্তৃপক্ষ।
এই মামলার আসামীরা হলেন- মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের হারপাড়া গ্রামের আবুল হাসেম ব্যাপারি, একই জেলার সিরাজদিখান উপজেলার পশ্চিম রাজদিয়া গ্রামের আবদুুল বাকেরের ছেলে সাইফুল ইসলাম, ওই উপজেলার মালখানগর গোরাপিপাড়ার মোহাম্মদ শাখাওয়াতের ছেলে মোহাম্মদ শাহরিয়ার হোসেন বিক্রম, কুসুমপুরের মো. হাসমত আলীর ছেলে মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, শ্রীনগর উপজেলার হাসারার কেওটাখালি গ্রামের মো. দিন ইসলামের ছেলে মো. খায়রুল কবির ও পাশের গ্রাম পশ্চিম দেউলি ভোগের আবদুল কাদেরের ছেলে সাদাকুর রহমান।
এই ছয়জনকে বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) আদালতে তোলা হয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ড চাইলে আদালত শুনানির জন্য আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। পরে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। সেই মামলার সূত্র ধরে জানা গেছে, চক্রটির ব্যাপারে জানতে পারে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। সেই কথিত সারা এন্টারপ্রাইজের মালিক সবুজ আলম। তার নেতৃত্বে মূলত এই চক্রটি এসব কাজ করেছে। তবে সবুজ আলম এখনও পলাতক রয়েছে। তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ।
মাইকেল লি মামলায় উল্লেখ করেন, সারা এন্টারপ্রাইজের নামে সবুজ আলম একটি ভুয়া ডিরেক্টরেট জেনারেল ডিফেন্স পারচেস (ডিজিডিপি) নথি উপস্থাপন করেছে। তারা প্রতারণার জন্য আমেরিকান সিগনাল করপোরেশন নামের একটি মার্কিন কোম্পানিকে বিভ্রান্ত করেছেন। মার্কিন দূতাবাস অফিস অব ডিফেন্স কো-অপারেশনের মাধ্যমে ডিজিডিপির নথি যাচাই করে দেখা যায়, সবুজের প্রতিষ্ঠান থেকে মার্কিন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পাঠানো নথি, সিল ও স্বাক্ষর সবই জাল। স্বাক্ষরকারীর নাম দেওয়া হয়েছে মেজর মো. বসির আহমেদ। তিনি ৫ বছর আগে ডিজিডিপির জন্য কাজ করেছিলেন এবং টেন্ডার সিরিয়াল নম্বর-২১১.৩৯৯এফ-২২, তারিখ ২০-০৩-২২, যার সব কিছুই জালিয়াতির মাধ্যমে করা। গ্রেফতার ছয়জনই এই জাল নথি তৈরির কাজ করেছিল।
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সারা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি কোম্পানি মার্কিন সিগনাল করপোরেশন নামের একটি কোম্পানির সাথে চুক্তি করবে এবং দেশটিতে গিয়ে তারা সামরিক প্রশিক্ষণ নেবে। এজন্য তাদের ভিসার আবেদন করেছেন তারা। আর প্রমাণাদি হিসেবে ১২ লাখ ডলারের বেশি টাকার চুক্তি ক্রয় হয়েছে সেই কোম্পানির সাথে। এজন্য সারা এন্টারপ্রাইজ তাদেরকে সেই চুক্তির কাগজপত্রও জমা দিয়েছে। সেই দেশের কোম্পানি তাদেরকে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছে।
মার্কিন দূতাবাস বিষয়টির অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পারে, মূলত যে ছয় ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছে তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। তারা মূলত অবৈধভাবে অভিবাসনের জন্য মার্কিন ভিসা পেতে এই নাটক সাজিয়েছিল। তারা জেনে শুনে সত্য গোপন করেছে বলেও মামলায় উল্লেখ করেন লিও। এজন্য মামলার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ পুলিশকে অনুরোধ করা হয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে।
এদিকে ডিবির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মূলত তারা প্রতারক চক্র। এই সারা এন্টারপ্রাইজ নামে কোনো প্রতিষ্ঠানই নেই। তারা এই নামে দিয়ে প্রতারণা করে ভিসা নিতে চেয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি দূতাবাস কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরে তাদেরকে কৌশলে ডেকে নেয়। এরপর ভাইভার কথা বলে আটকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। পরে কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে। এ ঘটনায় জড়িত সেই প্রতারক চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি রিফাত রহমান শামীমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।