বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ ) কাটা ছেঁড়া ছাড়া রক্তনালীর আঁকাবাঁকা শিরা (ভেরিকোস ভেইন) চিকিৎসায় অত্যাধুনিক আরএফএ ( জঋঅ) মেশিন এর শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি -ব্লক ৬ষ্ঠ তলায় ভাসকুলার সার্জারি বিভাগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচায অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা দিন-রাত দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করেন, তাদের পায়ের গোড়ালিতে ও রক্তনালীর শিরায় নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই লোকগুলোর অধিকাংশেরই বেশি টাকা নেই যে, দুই-তিন লাখ টাকা খরচ করে এর চিকিৎসা করবেন। কোনো রকম কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই রক্তনালীর জটিল আঁকাবাঁকা শিরায় উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আরএফএ মেশিনের মাধ্যমে এ চিকিৎসা করা হবে। তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে যেখানে এই চিকিৎসায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয়, সেখানে আমাদের হাসপাতালে মাত্র ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে। এমনকি গরিব-অসহায় রোগী যারা আছে, তাদের মধ্য থেকে ৮০ জনকে আমরা বিনামূল্যে চিকিৎসা দেব। এ মেশিনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে বাড়িতে যেতে পারবে। অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কার্ডিয়াক সার্জারির জন্য প্রচুর লোক বিদেশে যায়। অথচ আমাদের হাসপাতালে এই সার্জারিগুলো হচ্ছে। রোগীদের এখন আর বিদেশ যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি আরো বলেন, একটা সময় আমাদের ভাস্কুলার সার্জারিতে শুরুতে কোনো কোর্স ছিল না, শিক্ষক ছিল না এমনকি বিভাগে কোনো বেড ছিল না। আস্তে আস্তে একজন-দুইজন করে শিক্ষক হয়েছে, বেডও হয়েছে। একটা পর্যায়ে এসে চলতি ৩০০টি সার্জারি এই বিভাগে হয়েছে। উপাচার্য বলেন, জাতির জনকের নামে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা কর্মরত তাদের সারাদেশের কথা ভাবতে হবে। কারণ সারাদেশের মধ্যে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন আমাদের এখানে শুধু। এখান থেকে পাস করে শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ হন। আর এখান থেকে পাস করেই জেলা উপজেলায় কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন। অর্থাৎ আমাদের অনেক দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্য আরও বলেন, পদ্মাসেতু হওয়ায় আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। এই সেতুর কারণে এখন খুলনা থেকেও তিন ঘণ্টার মধ্যে রোগী ঢাকায় এসে চিকিৎসা নিতে পারে। আর ওই রোগী যদি আমার স্ট্রোক সেন্টারে আসে, তাহলে সু¯’ হয়ে সাত দিনের মধ্যে বাড়ি চলে যেতে পারবে। দিনের পর দিন আর বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে না। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ও হল প্রোভোস্ট অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফ উল্লাহ খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভাস্কুলার সার্জারি সার্জন ডা. সমরেশ চন্দ্র সাহা। এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সবুজ, ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রবিকুল হাসান, সহযোগী অধ্যাপক (সার্জিক্যাল অনকোলজি) ডা. মো. রাসেল, হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রসুল আমিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফয়সাল ইবনে কবির, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাসুম আলম, কনজারভেটিভ ডেনস্ট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আসাদুজ্জামান সারোয়ার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।