দেশের উত্তরে চলছে শীতের মৌসুম। জেঁকে বসা শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে বগুড়ার প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা সহ পাড়া -মহল্লা ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে শীতের পিঠা বিক্রির ধুম পড়েছে। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় পিঠার নাম ভাপা পিঠা। ভাপা ছাড়া চিতই, ঝালের পিঠা পুলি এবং পাটিসাপটা পিঠা। আগে শীত এলেই বাড়ি বাড়ি গৃহবধুরা পিঠা বানাতে বসতেন। চুলার পাশে বসে বাড়ির সদস্য পিঠার স্বাদ নিতেন। এখন দিন পরিবর্তন হয়েছে, বাড়িতে কষ্ট করে পিঠা তৈরী করতে হচ্ছে না। শহরের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা বিক্রি করেন স্বল্প আয়ের নারী-পুরুষ। এমন শীতে হাত বাড়ালে যখন দোকান অথবা রাস্তার মোড়ে পিঠা কিনতে পাওয়া যায় তখন আর কষ্ট করে পিঠা তৈরি করার কিবা দরকার। আজ সন্ধ্যার দিকে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা,সরকারি আজিজুল হক কলেজ গেট, মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ গেট,কলোনি, শ্যামলী মোড়,শাকপালা,খান্দার ও রহমান নগর জব্বার ক্লাবের পাশে ছোট বড় অসংখ্য মানুষ দোকান সাজিয়ে নানা ধরনের পিঠা বানাচ্ছেন বিক্রির আশায়। সরেজমিনে ঘুরে এসব দেখা মেলে। পিঠাপুলি তৈরির জন্য বিভিন্ন এলাকার নারী ও পুরুষ বাড়ীর কাজ সেরে বিকেল হতেই উনুনে আগুন দিয়ে ভাপাসহ হরেক রকম পিঠা তৈরীর পসরা সাজিয়ে বসেন। আর নবান্নের নতুন ধানের পিঠা খাওয়ার জন্য বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ভিড় করে থাকে দোকানে। এসব পিঠা প্রকারভেদে প্রতিটি ভাপা পিঠা ১৫ থেকে ২০ টাকা, চিতই পিঠা ১০ থেকে ১৫ টাকা, ঝাল পিঠা ২০ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। বগুড়ার সাথমাথায় দেখা মেলে ভ্যানের ওপর ভাপা,পিঠা সাজিয়ে রেখে বিক্রি করছে আব্দুল হান্নান। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শীত মৌসুম এলেই জেলা শহরে ভাপা পিঠা বিক্রি করতে চলে আসেন। ২১ বছর ধরে তিনি এই পেশায় রয়েছেন। গরমের সময় লেবুর শরবত বিক্রি করেন । বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের সাতমাথা সহ বিভিন্ন মোড়ে এই পিঠা বিক্রি করেন। তিনি প্রতিদিন সাড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ ভাপা পিঠা বিক্রি করেন। সব খরচ বাদে ১২০০ থেকে পনেরশো টাকা প্রতিদিন আয় হয়। ভাপা পিঠা খেতে আসা আব্দুল আলিম বলেন, শীতের রাতে গরম গরম ভাপা পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। তবে বাড়িতে সব সময় তো সুযোগ হয় না। তাই বাইরে কিনে খেতে হয়। বাহিরের পিঠার স্বাদ অন্যরকম লাগে। প্রতিদিন বিকেলে একটা করে পিঠা খেতে আসেন। বগুড়া শহরের রহমান নগর জব্বার ক্লাবের পাশে দেখা মেলে ছোট দোকান সাজিয়ে সোলাইমান ও তার স্ত্রী বুলি নানা ধরনের পিঠা বানাচ্ছেন বিক্রির আশায় । তাদের সাথে কথা হয় ভাপা ও চিতই পিঠা খেতে খেতে। তারা জানান, ২২ বছর ধরে শীতকাল এলেই এসব পিঠার দোকান দেন।প্রতিদিন বিকাল চারটার দিকে রাস্তার ধারে দোকান শুরু করে, আর বন্ধ করেন রাত দশটার দিকে । প্রতিদিন ১৬ কেজি চালের আটা,৬ কেজি গুড় ভাপা পিঠার জন্য নিয়ে আসনে। সাথে চিতই পিঠা,পাটিসাপটা ও ঝালের পিঠা বিক্রি করেন তারা। প্রতিদিন পিঠা বিক্রি করেন ২৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, এতে প্রতিদিন আয় করেন ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এই ছোট দোকান থেকেই পরিবার স্বচ্ছলভাবে চালাতে পারে তারা। ভাপা পিঠা খেতে আসা মেলন মিয়া বলেন, বাজারে মেয়ে নিয়ে কিছু কেনাকাটা করতে এসেছি। এখানে গরম গরম ভাপা পিঠা দেখে খেতে ইচ্ছা হলো। তাই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে খাচ্ছি, বেশ ভালো লাগছে। এ পিঠায় নারিকেল দেওয়া, যা অন্য দোকানে পাওয়া যায় না এবং স্বাদও ভালো লাগে। মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের পাশে করিম নামের এক পিঠাবিক্রতা সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পিঠা মানুষের মুখরোচক খাবার। এ অঞ্চলের মানুষ পিঠা পছন্দ করে তাই আমাদের বিক্রিও বেশি। শীতের আগে ফেরি করে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করলেও পিঠা বিক্রিতে লাভ বেশি তাই রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করছি। পিঠা কিনতে আসা রুবেল হোসেন বলেন,শীতের সময় গ্রামে মায়ের হাতে তৈরি করা পিঠা খাইতাম। এখন চাকরি করার কারণে শীতের সময় গ্রামে যাইতে পারি না, মায়ের হাতের সেই পিঠাগুলো আর তেমন একটা খাইতে পারি না। তাই শহরেই বাধ্য হয়ে খাইতে হয় তবে এগুলো পিঠা খেয়েও খারাপ লাগে না ভালই লাগে। শীতের শুরুতে পিঠাপুলির উৎসবে মেতেছে বগুড়া তথা উত্তরবঙ্গের মানুষ। বাড়িতে বানিয়ে ধুমধাম করে পিঠা বানোনোর দিন ফুরিয়ে আসতে শুরু হয়েছে। এই শীতে এমন মৌসুমে ছোট ব্যবসা করে অনেকেই নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করছে।