ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর মহিলা ডিগ্রি কলেজে শিক্ষার মানোন্নয়নে বৃহস্পতিবার অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কলেজ শিক্ষার্থী ফাল্গুন জাহান তামান্নার কোরআন তেলাওয়াতের পর পরই নবীনগর মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা নবীনগরের জননন্দিত নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য, মরহুম অ্যাডভোকেট আবদুল লতিফ এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নবীনগর মহিলা ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি, ডাকসুর সাবেক ছাত্রনেতা, মোঃ সায়েদুল হক সাঈদ। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে কলেজের ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা যে সময় লেখাপড়া করেছি এ সময় এত উন্নত ছিল না, বৈদ্যুতিক বাতি ছিল না, মোবাইলফোন ছিলনা, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিল না, সেই প্রতিকূল পরিবেশ পেরিয়ে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবন শেষে নিজের প্রচেষ্টায় স্বাবলম্বী হয়েছি, আজকের আধুনিক ডিজিটাল যুগে যেখানে সবকিছুই হাতের মুঠোয় সেখানে তোমরা কেন পারবে না? তোমরা অবশ্যই পারবে, সেজন্য তোমাদের আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে এবং লক্ষ্য স্থীর করতে হবে। লক্ষ্যটা হতে হবে বিশাল বড়, ধাপে ধাপে সেই বিশাল বড় লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে সাহস এবং ধীর মনোবল থাকতে হবে। আমি বিশ্বাস করি তোমরা সেটা পারবে। তিনি বাল্যবিবাহ রোধকল্পে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, মেয়েদেরকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করলেই তাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, কেন আপনার কি চান না আপনাদের মেয়েটা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্বাবলম্বী হউক, নিজের পায়ে দাঁড়াক?। আপনার মেয়েটা যদি শিক্ষিত হয় স্বাবলম্বী হয়, তাহলে ভালো একটা বিয়ে দিতে পারবেন, শ্বশুরবাড়িতেও তার মর্যাদা বাড়বে। অল্প বয়সে মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে তার জীবনটাকে নষ্ট করবেন না। মেয়েকে স্কুল কলেজে পাঠিয়ে দিয়েই আপনাদের দায়িত্ব শেষ নয়, তার প্রতি আপনার নজরদারি থাকতে হবে। দোষটা ওদের নয় সময় ও বয়সের। তিনি বলেন, আমি নবীনগরকে একটি উন্নত আধুনিক ডিজিটাল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, সেই লক্ষ্যে আমি ৫টি বিষয়ে জিরো পয়েন্ট ঘোষণা করছি, প্রথমত দারিদ্র্য বিমোচন, উপজেলাবাসী কেউই দরিদ্র থাকবে না। দ্বিতীয়ত বেকারত্ব, বেকারত্ব নিরসনে কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেব। তৃতীয়ত মাদকমুক্ত জীবন, যুবক-যুবতীদের মাদকাসক্ত থেকে সরিয়ে আনার উদ্যোগ। চতুর্থ নিরক্ষরতা দূরীকরণ, বয়স্ক শিক্ষার চালুর মধ্যদিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু। পঞ্চমত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি আরও বলেন, নবীনগর একটি রাজনৈতিক সম্প্রীতির এলাকা, এখানে সম্প্রীতি বজায় রেখে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সকল দলের নেতাকর্মীরা সহাবস্থানে বসবাস করছি, কোন ধরনের মামলা মোকদ্দমা হয়রানি হয়নি কিন্তু গত ৫ই আগস্টের পর মিথ্যা মামলা মোকদ্দমা করে হয়রানি করা হচ্ছে, এই সকল কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যাচাই-বাছাই করে আইনি পদক্ষেপ নিবেন যাতে কোন নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তি না পায়। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব চৌধুরী। অধ্যক্ষ শুক্লা রানী ভট্টাচার্য সভায় সভাপতিত্ব করেন। সমাবেশে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার লক্ষ্যে সায়েদুল হক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রজেক্টরের মাধ্যমে একটি শিক্ষামূলক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পরিচালক মাসুকুর রহমান খান। সমাবেশে সায়েদুল হক ফাউন্ডেশন থেকে গরীব মেধাবী ও প্রতিবন্ধী ১৫জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। বক্তব্য রাখেন, কাজী ইয়াবের হাসান জামিল, অঞ্জন কুমার নাগ, মোঃ জাকির হোসেন, ফরিদা ইয়াসমিন, মমতাজ বেগম, অভিভাবকদের পক্ষে আমির হোসেন, মোঃ আবদুল মোতালিব চৌধুরী, মোসাম্মৎ সাবিহা ছিদ্দিকা শারমিন, কলেজ শিক্ষার্থী পূর্ণিমা, সুমাইয়া আক্তার, সাদিকা বেগম, প্রমুখ।