দুর্নীতিকে জাতীয়করণ করা হয়েছে উল্লেখ করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেছেন, বিগত দিনে দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে তা বিদেশে পাচার করেছে প্রভাবশারীরা। ওই সকল দুর্নীতিবাজরা এখন জেলখানায় রাজারহালে জীবন-যাপন করছে। তারা জনগণের অর্থ লুটে নিয়েছে, অথচ তাদেরকে জামাই আদরে খাওয়াচ্ছে রাষ্ট্র। গত সোমবার বাংলা একাডেমী মিলনায়তনে দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় সমম্বয় কমিটির প্রথম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। আমরা চান্স পেলেই দুর্নীতি করি। আর চান্স না পাইলে সৎ থাকি। আমাদের মধ্যে শৃঙ্খলা বোধের অভাব রয়েছে। দুর্নীতি বন্ধ করতে চাইলে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অন্তর্র্বতী সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতি বন্ধে আইন ও নীতিমালা পরিবর্তনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বিচারপতি আবদুর রউফ বলেন, আইনে এমন বিধান করতে হবে, কেউ ঘুষের টাকা ধরিয়ে দিতে পারলে সে ওই টাকার ৫০ শতাংশ পাবে। কেউ অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছে, এমন তথ্য দিলে এবং তা প্রামাণিত হলে সেই ওই অর্থের ২৫ শতাংশ পাবে। এধরণের বিধান করলে অনেকের ঘরের মানুষ তথ্য দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করবে। এক্ষেত্রে বৃটিশ আইনের পরিবর্তে মার্কিন আইন চালু করতে হবে। অপরাধীকে প্রমাণ করতে হবে, তিনি নির্দোষ। জোর যার মুল্লুক তার, দেশ এমন পরিস্থিতি চলছে উল্লেখ করে বাংলা একাডেমীর সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, দেশের আর্থিক অবস্থা প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত আর্থিক অবস্থার যে উন্নয়ন হয়েছে, তার থেকে কয়েকগুন দুর্নীতি বেড়েছে। বেনজীরের মতো কর্মকর্তারা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে বিদেশে পাচার করেছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতা পেয়েছে। এই অবস্থায় দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে বিকল্প রাজনৈতিক দল গড়তে হবে। দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, দেশের পরিস্থিতি অতীতের যে কোন সময়ের থেকে খারাপ। অথচ অন্তর্র্বতী সরকার তামাশা শুরু করেছে। উপদেষ্টারা কোন কাজ করতে পারছেন না। আমরা বলেছিলাম, কাজের সুবিধার্থে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১০জন বিশেষজ্ঞকে নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি করুন। সরকার আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। এই কমিটি জাতীয় স্বার্থে যে কোন কাজে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে। দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক শাহজাহান সাজুর সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরো বক্তৃতা করেন জাতীয় ব্যক্তিত্ব কাইয়ুম রেজা চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আ. আমিন, ড. জাহাঙ্গীর আলম রুস্তম, দেওয়ান সুলতান আহমেদ, অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধ ডি এম সরকার, অধ্যাপক ড. আসিফ এস ইসলাম, অ্যাডভোকেট শেখ আলী আহমেদ খোকন, আলীম সরকার, সেতারা রেজভী লাকী, মির্জা আজম প্রমুখ। সম্মেলনে উত্থাপিত ১১ দফায় বলা হয়, রাষ্ট্রের সকল সেক্টরে দুর্নীতিমুক্ত করে প্রকৃত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের মাধ্যমে যারা আইন অমান্য করেছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। আইন বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক ও দলীয় শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সকল আদালতে সৎ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। দ্রুত একটি ব্যাংক কমিশন গঠন করে ব্যাংকিং সেক্টরে সংস্কার করতে হবে। এই কমিশন অবশ্যই দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে। আরো বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনকে নতুন করে সাজাতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী করতে হবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারে যোগ্য, নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন নতুন করে পুনর্গঠন করতে হবে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে পরীক্ষা পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা আনতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়ম চিরতরে দূর করতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্প খাতে আরো বেশি নীতি সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। সংবিধান সংশোধনের পাশাপাশি সরকারকে একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে সৎ যোগ্য প্রকৃত নিবেদিত দেশপ্রেমিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় সমম্বয় কমিটির ১ম জাতীয় সম্মেলনে ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষনা করা হয়। সভাপতিঃ বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ, সহ সভাপতিঃ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, সাধারন সম্পাদকঃ সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী, যুগ্ন সাধারন।