পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় ক্রমশ বাড়ছে লাশের সংখ্যা। দ্বিতীয় দিনের অভিযানে এ পর্যন্ত ২৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ জনে। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, রোববার সর্বশেষ ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম দিনের মতো উদ্ধারকাজ স্থগিত হয়। আবার সোমবার সকাল থেকেই উদ্ধার কাজে নামে ডুবুরি দল। এদিন সন্ধা পর্যন্ত মোট ২৮ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে।
এদিকে, মৃত ৪৯ জনের পরিচয় নিশ্চিতের তালিকা প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসনের জরুরি তথ্য সহায়তা কেন্দ্র। তালিকা অনুযায়ী অধিকাংশই সনাতন ধর্মাবলম্বী।
মৃতরা হলেন- হাশেম আলী (৭০) শ্যামলী রানি (১৪), লক্ষী রানি (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫) শোভা রানি (২৭), দিপঙ্কর (৩) পিয়ন্ত (২.৫) রুপালি রানি (৩৫), প্রমিলা রানি (৫৫) ধনবালা (৬০) সুনিতা রানি (৬০), ফাল্গুনী (৪৫) প্রমিলা দেবী, জ্যোতিশ চন্দ্র (৫৫), তারা রানি (২৫), সানেকা রানি (৬০), সফলতা রানি (৪০) বিলাশ চন্দ্র (৪৫), শ্যামলী রানি ওরফে শিমুলি (৩৫), উশোশি (৮) তনুশ্রী (৫), শ্রেয়সী, প্রিয়ন্তী(৮), সনেকা রানী (৬০), ব্রজেন্দ্র নাথ (৫৫), ঝর্ণা রানী (৪৫), দীপ বাবু (১০), সূচিত্রা (২২), কবিতা রানী (৫০), বেজ্যে বালা (৫০), দিপশিখা রানী (১০), সুব্রত (২), জগদীশ (৩৫), যতি মিম্রয় (১৫), গেন্দা রানী, কনিকা রানী, সূমিত্রা রানী, আদুরী (৫০), পূষ্পা রানী, প্রতিমা রানী (৫০), সূর্যনাথ বর্মন (১২), হরিকেশর বর্মন (৪৫), নিখিল চন্দ্র (৬০), সুশীল চন্দ্র (৬৫), যুথি রানী (০১), রাজমোহন অধিকারী (৬৫), রূপালী রানী (৩৮), প্রদীপ রায় (৩০), পারুল রানী (৩২) ও প্রতীমা (৩৯)। তাদের সবার বাড়ি পঞ্চগড়েই।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়া উপলক্ষে দুপুরে আউলিয়া ঘাট থেকে একটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিলেন তারা। ঘাট থেকে নৌকাটি কিছু দূর যাওয়ার পরই ডুবে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপরপাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পুজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারো ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। রোববার দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা নৌকা যোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৫০ থেকে ৬০ জনের ধারণ ক্ষমতার নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতার জানায় তীরে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা বিশেষ করে নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়। মনে করা হচ্ছে স্রোতের কারণে অনেক মরদেহ পানিতে ভেসে যেতে পারে।
নৌকা ডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া মাড়েয়া বামনপাড়া এলাকার সুবাস চন্দ্র রায় বলেন, আমিও নৌকায় ছিলাম। নৌকায় দেড়শরও বেশি যাত্রী ছিল। আমরা নৌকায় উঠার পরপরই নৌকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। এ সময় মানুষজন নৌকার মধ্যেই হরোহুড়ি শুরু করেন। পরে যে পাশেই যাচ্ছিলাম, সেপাশেই নৌকায় পানি ঢুকছিল। আমরা পাঁচজন বন্ধু ছিলাম। কোনো মতে সাঁতার কেটে প্রাণে বেঁচে যাই। অন্য যাত্রীরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি করছিল। কিন্তু চরম মুহূর্তেও বর্ণনা করতে পারবো না। তবে এতো মানুষ মারা যাবেন, তা বুঝতে পারিনি।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায়, মৃত প্রত্যেকের পরিবারকে মরদেহ সৎকারের জন্য ২০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে।