দেশব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু উদ্বেগজনকহারে বেড়ে যাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে দেশে সাত দিনের কঠোর লকডাউনে চলছে। আজ শুক্রবার কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে ভোর থেকেই রাজধানীতে এক নাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে সড়কে লোকজনের উপস্থিতি একেবারে নেই বললেই চলে।
এছাড়া একই কারণে রাজধানীর বিভন্ন সড়ক ও অলিগলিতে সকাল ৮টার দিকে যানবাহন খুব একটা চোখে পড়েনি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত যানবাহনও তেমন একটা দেখা যায়নি। বিভিন্ন সড়কে অল্প কিছু রিকশা, মাইক্রোবাস, ট্রাক,কার্ভাড ভ্যান ও পিকআপ চলাচল করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় কথা হয় সাব্বির আহমেদ নামের একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, লকডাউন কেমন হচ্ছে তা বুঝতে আরো দুই একদিন সময় লাগবে। লকডাউন ও বৃষ্টির কারণে সড়কে যানবাহনের অপ্রতুলতা রয়েছে। যে রিকশাগুলো চলছে, তারা বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
আফজাল হোসেন তপু নামের আরেক পথচারী রিকশায় কুড়িল থেকে বনানী যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ২০০ টাকা রিকশা ভাড়ায় বনানী যাচ্ছি, একদিকে লকডাউন অন্যদিকে ভোর থেকে বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় খুব একটা মানুষ দেখতে পাইনি। যেহেতু গণপরিবহন নেই, তাই বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিকশায় যাচ্ছি। এ পর্যন্ত যতটুকু এসেছি সেসব সড়কে কোথাও মানুষের খুব বেশি উপস্থিতি নেই। গতকালের তুলনায় আজ যানবাহনও কম সড়কে।
এবারের লকডাউনকে সফল করতে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। প্রজ্ঞাপন অনুসারে, কঠোর লকডাউন চলাকালে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
তবে আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সার্ভিস খোলা থাকবে।
এছাড়া বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ফার্মেসিসহ জরুরি পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে যাতায়াত করতে পারবে। কোনো বিধি নিষেধ ছাড়া যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে পারবেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
পাশাপাশি শিল্প-কারখানা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
খাবারের দোকান, হোটেল রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি করতে পারবে। তবে কেউ হোটেলের মধ্যে বসে খেতে পারবে না। চালু থাকবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল।
গতকাল সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথমদিনেও রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। বিভিন্ন সড়কে তৎপর ছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার বিধিনিষেধ অমান্য করে ঘর থেকে বের হয়ে সড়কে ঘোরাঘুরি করার অপরাধে রাজধানীতে ৪৯৭ জনকে আটকও করা হয়। এর মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫৮ জনকে আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে আটজনকে। বাকিদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।