দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে পদ্মায় প্রবল স্রোত বইছে। সেখানে চলচলকারী ফেরিগুলো স্রোতের মুখে স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। পাশাপাশি শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথের প্রভাবে বিভিন্ন গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ব্যস্ততম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরিপারাপার ব্যহত হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরিপারের অপেক্ষায় আটকা পড়ে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ শত শত বিভিন্ন গাড়ি। পাশাপাশি সকাল থেকে কর্মমুখী মানুষের ঢল নামে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে। করোনা উপেক্ষা করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সেখানে গাদাগাদি করে হাজার হাজার যাত্রী লঞ্চ ও ফেরিতে পারাপার হয়। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাট সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের বাংলাদেশ হ্যাচারিজ পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তার একপাশে যাত্রীবাহী বাস, অপর পাশে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি। পাশাপাশি ঘাট টার্মিনালের টিকিট কাউন্টার থেকে ৫ নম্বর ফেরিঘাট পর্যন্ত এক কিলোমিটার বাইপাস সড়কের একপাশে ফেরিপারের অপেক্ষায় রয়েছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন ছোট গাড়ি। বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট অফিস ও ঘাটসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে পদ্মা ও যমুনায় প্রবল স্রোত বইছে। সেখানে চলচলকারি ফেরিগুলো স্রোতের মুখে স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। স্রোতের কারণে পারাপারে সময় অনেক বেশি লেগে যাওয়ায় ফেরির ট্রিপসংখ্যা কমে গেছে। পাশাপাশি শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথের প্রভাবে গাড়ির চাপ বেড়ে দৌলতদিয়া ঘাটে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দৌলতদিয়া ঘাটে কর্তব্যরত রাজবাড়ী জেলা ট্রাফিকপুলিশের উপপরিদর্শক (টিএসআই) মো. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, দৌলতদিয়া ঘাটে সৃষ্ট যানজট পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজবাড়ী সদর থানার গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় দৌলতদিয়া ঘাটগামী অপঁচনশীল পণ্যবোঝাই দুই শতাধিক ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান আটকে রেখেছে পুলিশ। ঘাটের যানজট পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই ট্রাকগুলো পর্যায়ক্রমে ছেড়ে দেয়া হবে। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কর্মস্থল ঢাকাগামী মানুষের ঢল নেমেছে। লঞ্চঘাট সড়কের প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে ওভারব্রিজ ও লঞ্চটার্মিনালে হাজার হাজার যাত্রীর উপচে পড়া ভিড়। টার্মিনালে ভিরে থাকা বিভিন্ন লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপদে উঠানোর দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ, আনছার, ফায়ার সার্ভিস ও রোভার স্কাউট সদস্যরা। সেখানে হ্যান্ড মাইকে বার বার ঘোষণা করা হচ্ছে, ‘মাস্ক ছাড়া কেউ লঞ্চে উঠবেন না, করোনা থেকে রক্ষা পেতে সামাজিক দূরত্ব মেনে লঞ্চে উঠুন।’ কিন্তু এ ঘোষণায় কোন কাজ হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে লঞ্চে উঠছে মানুষ। এ সময় দৌলতদিয়া লঞ্চটার্মিনালে কর্মরত বিআইডাব্লিউটিএ’র ট্রাফিক পরিদর্শক আফতাব হোসেন জানান, শুক্রবার সকাল থেকে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে ঢাকাগামী কর্মজীবী মানুষের ঢল নামে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যাত্রীর চাপ বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে বর্তমান এই নৌপথে ২২টি লঞ্চ সার্বক্ষণিক ভাবে যাত্রী পারাপার করছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে লঞ্চে গাদাগাদি করে যাত্রী পারাপার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে যাত্রীপারার করার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু অধিকাংশ যাত্রী আমাদের কথা মানছেন না। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, তাদের (যাত্রী) মনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো ভয় নেই।’ বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যাবস্থাপক মো. আবু আব্দুল্লাহ বলেন, ‘পরিস্থিতি সামাল দিতে বর্তমান দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ১৬টি ফেরি সার্বক্ষণিকভাবে সচল রাখা হয়েছে।’ তবে, মানুষের দুর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।