নারীর প্রতি সহিংসতা পরিস্থিতি নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কর্মকর্তাগণ তাদের গাজীপুরের ছায়াবীথির নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন উপস্থাপন ও মতবিনিময় সভা করেছেন । বিভিন্ন বয়সের ৫১৪ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের গাজীপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে মতবনিমিয়কালে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গাজীপুর শহরের মধ্য ছায়াবিথী এলাকার আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) অফিসের সভাকক্ষে মতবিনিমিয় সভায় নারীর প্রতি সহিংসতা, অগ্নি প্রকল্পের কার্যক্রম ও অর্জন বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের গাজীপুরের জেলা ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান আমান। মতবিনিময় সভায় নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আইন ও সালিশ কেন্দ্র গাজীপুরের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন তিনি। জেলা ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান আমান বলেন, গাজীপুরের ৫টি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কাজ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অগ্নি প্রকল্প। চলতি বছরের মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৮ মাসে গাজীপুরে বিভিন্ন বয়সের ৫১৪ জন নারীর সাথে (ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, সালিশ, পারিবারিক নির্যাতন ও ফতোয়া) সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সিএসও সদস্যদের তথ্যানুযায়ী ০ থেকে ১০ বছর বয়সের ১৫ জন, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সের ৮১ জন, ২ থেকে ৩০ বছর বয়সের ৭৯ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সের ৮৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সের ৫৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সের ২০১ জন এবং ৬১ বছরের উপরে ১৫ জন এই সহিংসতার শিকার হন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মাধ্যমে ৫১৪ জন ভুক্তভোগী নারীর মধ্যে সহযোগীতার প্রয়োজন ছিল ৩৪৪ জনের। এর মধ্যে আইনী সেবায় ১৪৫ জন, চিকিৎসা সেবায় ২৯ জন এবং মনোস্তাত্বিক পরামর্শের প্রয়োজন ছিল ১৬১ জনের। অগ্নি প্রকল্পের অধীনে প্রতিকারের ব্যবস্থায় প্রাথমিক কাউন্সিলিং সেবা নিয়েছেন ১৫৭ জন, আইনী সহায়তার পরামর্শ নিয়েছেন ৫১ জন, সিএসও-এর উদ্যোগে স্থানীয় পর্যায়ে সালিশের ব্যবস্থা করা হয়েছে ১৬ জনের, চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয় ৫ জনকে এবং পরামর্শের ভিত্তিতে আদালতে মামলা করেছেন ১৬ জন নারী। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬৯ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণ ও সঙ্গবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৬ জন, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৪ জন, ধর্ষণের পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ৫ জন, বিভিন্নভাবে হত্যার শিকার ১৭ জন, লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ১২ জনের, শারিরীক নির্যাতনের শিকার ১২ জন এবং শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন ৩ জন নারী। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ তাদের মতামত ব্যাক্ত করেন। নারীর প্রতি সংহিসতা প্রতিরোধে সংবাদপত্রের ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় সাংবাদিকদের বিশ্লেষণধর্মী ও দায়িত্বশীলতার সাথে সংবাদ পরিবেশনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এসম নির্ধারিত বিষয়ে আরোও মতবিনিময় করেন অগ্নি প্রকল্পের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট আসমা খানম রুবা। উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্যামেলিয়া সাহা এ ডাটা ম্যনেজমেন্ট কনসালটেন্ট মো. মহসীন।