কুষ্টিয়ায় ক্ষমতার দাপটে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতি করে ভুয়া দাতা-গ্রহীতার মাধ্যমে শতকোটি টাকার জমি আত্মসাৎ চেষ্টার মামলায় সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজি রবিউল ইসলামসহ ৪১ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়েছে।
৪১ জনের মধ্যে ছয়জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
এ জালিয়াতি চক্রের ৪১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গত ৩০ জুলাই বিকেলে কুষ্টিয়া সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ স্বাক্ষরিত ও কুষ্টিয়া মডেল থানায় করা চাঞ্চল্যকর এই জালিয়াতি মামলার ৩০৫ নম্বর অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করা হয়।
কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১ এর বেঞ্চ সহকারী মতিউর রহমান এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ জানান, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় করা মামলাটি পর্যায়ক্রমিক তদন্ত করেন পুলিশ পরিদর্শক আকিবুল ইসলাম, সহকারী পরিদর্শক সুজিত কুমার কর, সহকারী পুলিশ সুপার দেওয়ান আবুল হোসেন ও পুলিশ পরিদর্শক হারুন অর রশীদ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাদী কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের বাসিন্দা এম এম এ ওয়াদুদ। বাদীর পৈত্রিক সম্পত্তির ওয়ারিশান হিসেবে গোটা পরিবারের ছয় সদস্যের এনআইডি জালিয়াতি করে শতকোটি টাকার সম্পত্তি দখল করে একটি প্রভাবশালী চক্র। ২০১৭ সাল থেকে জালিয়াত চক্রটি জাল দলিল করে, এবং এম এম এ ওয়াদুদসহ তার স্ত্রী, ছেলে এবং মেয়ে এনআইডি জাল করেন। এগুলো কাজে লাগিয়ে সমস্ত সম্পত্তির পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি করে নেন। এর বিরুদ্ধে মামলা করা হলে সিআইডি ওই দলিল জব্দ করে। কিন্তু তারা আবার নকল দলিল তৈরি করে এম এম এ ওয়াদুদ ও তার পরিবারের সদস্য সেজে শত কোটি টাকার সম্পত্তি আমলাপাড়ার মহিবুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে দেন।
মামলার বাদী এম এম এ ওয়াদুদ জানান, ‘জাল এনআইডিগুলো নির্বাচন কমিশন (ইসি) বন্ধ করে দেওয়ার পরেও এগুলো ব্যবহার করে জালিয়াত চক্রটি রেজিস্ট্রি অফিসের কিছু অসাধু ব্যক্তির সাহায্যে একাধিক দলিল করেন। বিষয়টি টের পাওয়ার পরই ২০১৯ সালে আমি জালিয়াতির অভিযোগে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করি। ’
মামলাটির তদন্ত শেষে জমা আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে কুষ্টিয়ার পূর্ব মজমপুরের মৃত মতিয়ার রহমান বিশ্বাসের ছেলে আসাদুর রহমান বাবু (৫১), তৎকালীন কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান সুজন, আমলাপাড়ার হাজী মোহাম্মদ আলীর ছেলে মহিবুল ইসলামসহ মোট ৪১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন পলাতক আছেন আর বাকি সবাই জামিনে মুক্ত আছেন। এই তালিকার ১৪ নম্বরে রয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলামের নাম।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে সত্যতার ভিত্তিতে চার্জশিট দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘মামলাভুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াও হাজী বরিউলের বিরুদ্ধে এই জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে সঙ্গে জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণাদি মামলার নথিপত্রে সংযুক্ত আছে। এছাড়া মামলার প্রধান দুই আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও এই এনআইডি জালিয়াতি ও সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় হাজী রবিউলের প্রত্যক্ষ ইন্ধন, প্ররোচনা ও সার্বিক সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছেন।
জিয়াউদ্দিন বলেন, আমরা ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছি। এর বাইরে ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলেও তারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হওয়ায় তাদের বিষয়ে আদালতকে অবহিত করেছি। এখন শুনানির দিন ধার্য করলে সেখানে আদালত নথিপত্র দেখে পক্ষে-বিপক্ষে কথা শুনানি করে সিদ্ধান্ত ও আদেশ দেবেন।
তবে, চার্জশিটের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান হাজী রবিউল ইসলাম। তিনি, এসব কোনো জালিয়াতির সঙ্গে কোনো ভাবেই জড়িত নন বলে দাবি করেন।