“যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে,
যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে,
সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না”—কাজী নজরুল ইসলাম।
“দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হলো দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে ভারত উপমহাদেশে প্রচলিত একটি হিন্দু উৎসব।এটি সারা বিশ্বের হিন্দুরা উদযাপন করলেও প্রধানত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ,আসাম,ওড়িশা, বিহার, ত্রিপুরা,ঝাঁড়খণ্ড,উত্তরপ্রদেশ (পূর্বাঞ্চল) এবং বাংলাদেশে বিশেষভাবে উদযাপিত হয়।এটি বাংলা বর্ষপুঞ্জীর আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।দুর্গাপূজা মূলতঃ দশ দিনের উৎসব,যার মধ্যে শেষ পাঁচটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে “দুর্গাষষ্ঠী”, “দুর্গাসপ্তমী”, “মহাষ্টমী”, “মহানবমী” ও “বিজয়াদশমী” নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় “দেবীপক্ষ”। আশ্বিনের নবরাত্রির পূজা শারদীয় পূজা এবং বসন্তের নবরাত্রির পূজা বাসন্তিক বা বসন্তকালীন দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কলকাতার দুর্গাপূজা ইউনেস্কোর অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করা হয়।
দুর্গা অর্থাৎ “যিনি দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন”; এবং “যে দেবী দুর্গম নামক অসুরকে বধ করেছিলেন”।হিন্দু সংস্কৃতিতে তিনি জনপ্রিয় এক দেবী। তাঁকে আদ্যাশক্তির রণরঙ্গিনী এক মহাদেবীর রূপ বলে হিন্দু ধর্মালম্বনকারিরা মান্য করে থাকে।তিনি শিবের স্ত্রী পার্বতীর উগ্র রূপ, কার্তিক ও গনেশের জননী, এবং কালীর অন্যরূপ। বাংলা মঙ্গলকাব্য গুলোতে এবং আগমনী গানে দুর্গারূপে শিবজায়া হিমালয়দুহিতা পার্বতীর সপরিবারে পিতৃগৃহে অবস্থানের আনন্দময় দিনগুলোর (দুর্গাপুজা) এবং তাঁর বিবাহিত জীবনের অপূর্ব বর্ণনা পাওয়া যায়। মহাদেবী দেবতাদের অনুরোধে দুর্গম অসুরকে বধ করেন তাই দেবী পার্বতী দুর্গা নামে অভিহিত হন। তিনি চণ্ডিকা, যোগমায়া, অম্বিকা, বৈষ্ণবী, মহিষাসুরসংহন্ত্রী, নারায়ণী, মহামায়া, কাত্যায়নী, দাক্ষায়ণী, অদ্রিজা, নগনন্দিনী, সিংহবাহিনী, শারদা, আনন্দময়ী ইত্যাদি নামেও পরিচিতা। দুর্গাদেবীর বর্ণনা মহাভারতের বিরাট পর্ব ও অন্যান্য পুরাণে পাওয়া যায়। হিন্দুদের মতে,দেবী দুর্গার ভিন্ন ভিন্ন অবতার সমূহ হল: কালিকা, নন্দী, ভ্রামরী,স্বাকম্ভরি, রক্তদন্তিকা, কৈশিকী,ভীমা উগ্রচন্ডা,ভদ্রকালী কাত্যায়নী,শান্তা দুর্গা, অজিতা,অপরাজিতা ইত্যাদি। দুর্গার বাহুসংখ্যা অনেক। তাঁর সহস্রভুজা, ত্রিংশতিভুজা, বিংশতিভুজা, অষ্টাদশভুজা, ষোড়শভুজা, দশভুজা, অষ্টভুজা ও চতুর্ভুজা মূর্তির উল্লেখ পুরাণ গ্রন্থাদিতে পাওয়া যায় বা বিভিন্ন স্থাপত্য-ভাস্কর্যে দেখা যায়। তবে দশভুজা রূপটিই সমধিক জনপ্রিয়। তাঁর বাহন সিংহ (উত্তর ও পশ্চিমভারতে আঞ্চলিকভাবে বাঘ)। মহিষাসুরমর্দিনী-মূর্তিতে তাঁকে মহিষাসুর নামে এক অসুরকে বধরত অবস্থায় দেখা যায়। ক্ষমতা আর বিজয়গর্বে মত্ত অসুর এবার চতুর্বেদকে হস্তগত করলে সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষায় দেবী মহামায়া এক দশভুজারূপী মঙ্গলময়ী দেবী রূপে আবির্ভূতা হন আর দুর্গমাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করেন। বিন্ধ্যাচলে ১০ দিন ব্যাপী ঘোরযুদ্ধে দেবী ও তাঁর অংশোদ্ভূতা গুহ্যকালী, ছিন্নমস্তা, ত্রিপুরা, ভৈরবী প্রভৃতি দেবীগণ দুর্গমাসুরের কোটি সৈন্যকে নিধন করেন। এরপর দেবী দুর্গমাসুরকে সুতীক্ষ্ণ শূলের আঘাতে বধ করেন এবং চতুর্বেদ এ সকল মন্ত্র উদ্ধার করেন। হিন্দু ধর্মালম্বনকারিদ্র মতে দেবী তাই সর্বমন্ত্রময়ী। ক্ষমাশীলা পরমাজননী দেবী এরপর অনুতাপদগ্ধ দুর্গমাসুরকে অদ্বৈত ব্রহ্মের জ্ঞান প্রদান করে মোক্ষলাভ করান। দেবী দুর্গা স্বয়ং সচ্চিদানন্দময়ী পরব্রহ্মস্বরূপা আদ্যাশক্তি মহামায়া। তাঁর অনেক রূপ, যার মধ্যে কালী রূপটি অন্যতম ।সম্ভবত খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বাংলায় দুর্গোৎসব প্রবর্তিত হয়। জনশ্রুতি আছে, রাজশাহীর তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রথম সাড়ম্বরে শারদীয়া দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন।
বছরে এক বার উমা/দূর্গা আসেন বাপের বাড়ি। সঙ্গে চার সন্তান। হিমালয় পর্বতের কন্যা পার্বতীর আগমনে বোধন থেকে বিসর্জন মেতে ওঠে বাংলার প্রতি কোণ। কিন্তু জানেন কি, একমাত্র বাংলার মাটিতেই দেবী হিন্দু ধর্মালম্বনকারিদের দ্বারা পূজিতা হন সপরিবারে। ভারতের বাকি অংশে তিনি পূজিতা হন একা। সেখানে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিক তাঁর সন্তানও নন। তাঁরা স্বতন্ত্র দেবদেবী। এই বাংলার মাটিতেই তাঁদের কল্পনা করা হয়েছে পার্বতীর সন্তান হিসেবে। বৈদিক কাব্য থেকে রামায়ণ, মহাভারত হয়ে লৌকিক কাব্য বা মঙ্গলকাব্যের যাত্রাপথ সুদীর্ঘ। সেই পথেই এই বিবর্তন। কালের স্রোতে স্বতন্ত্র দেবদেবীরা হয়ে গেলেন দুর্গতিনাশিনীর সন্তান-সন্ততি। কিন্তু বেদ বা পুরাণ অনুযায়ী, চারজনের কেউ মা দুর্গার গর্ভজাত নন।”—-সংকলিত।
—————————
বাংলাদেশ একটি ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ।এখানে আমরা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- সবাই মিলেমিশে এক সঙ্গে চলি,যার যার ধর্মীয় বিশ্বাস মতে যার যার উৎসব পালন করি।বাংলাদেশের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ের। আর ইসলাম সব ধর্মের মানুষকে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দিয়েছে। যদি না তা অন্য ধর্মের মানুষদের স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘দ্বিনের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। সত্যপথ ভ্রান্তপথ থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে। যে তাগুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহতে ঈমান আনবে সে এমন এক মজবুত হাতল ধরবে, যা কখনো ভাঙবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৬)
ইসলাম অপরাধী নয়—এমন সব মানুষের বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘দ্বিনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি, তোমাদের স্বদেশ থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করবেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)
প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। মুসলিম সমাজেও অমুসলিমরা নিজেদের পরিমণ্ডলে ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করবে।আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের দ্বিন তোমাদের, আমার দ্বিন আমার।’ (সুরা : কাফিরুন, আয়াত : ৬) সব ধর্মের মানুষ প্রতিবেশী হতে পারে। প্রতিবেশী যে ধর্মেরই হোক প্রতিবেশী হিসেবে তাদের প্রতি সদয় আচরণ, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রদর্শনে কোনো প্রকার ত্রুটি করা যাবে না। প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষায় ইসলাম অত্যন্ত তৎপর।
আল্লাহ সবাইকে সম্প্রীতি, সহমর্মিতা ও সংবেদনশীলতা দান করুন। হিন্দু ভাই-বোনদের প্রতি শুভ কামনা,শুভ বিজয়া॥
“যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে,
যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে,
সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না”—কাজী নজরুল ইসলাম।
“দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হলো দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে ভারত উপমহাদেশে প্রচলিত একটি হিন্দু উৎসব।এটি সারা বিশ্বের হিন্দুরা উদযাপন করলেও প্রধানত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ,আসাম,ওড়িশা, বিহার, ত্রিপুরা,ঝাঁড়খণ্ড,উত্তরপ্রদেশ (পূর্বাঞ্চল) এবং বাংলাদেশে বিশেষভাবে উদযাপিত হয়।এটি বাংলা বর্ষপুঞ্জীর আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।দুর্গাপূজা মূলতঃ দশ দিনের উৎসব,যার মধ্যে শেষ পাঁচটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে “দুর্গাষষ্ঠী”, “দুর্গাসপ্তমী”, “মহাষ্টমী”, “মহানবমী” ও “বিজয়াদশমী” নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় “দেবীপক্ষ”। আশ্বিনের নবরাত্রির পূজা শারদীয় পূজা এবং বসন্তের নবরাত্রির পূজা বাসন্তিক বা বসন্তকালীন দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কলকাতার দুর্গাপূজা ইউনেস্কোর অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করা হয়।
দুর্গা অর্থাৎ “যিনি দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন”; এবং “যে দেবী দুর্গম নামক অসুরকে বধ করেছিলেন”।হিন্দু সংস্কৃতিতে তিনি জনপ্রিয় এক দেবী। তাঁকে আদ্যাশক্তির রণরঙ্গিনী এক মহাদেবীর রূপ বলে হিন্দু ধর্মালম্বনকারিরা মান্য করে থাকে।তিনি শিবের স্ত্রী পার্বতীর উগ্র রূপ, কার্তিক ও গনেশের জননী, এবং কালীর অন্যরূপ। বাংলা মঙ্গলকাব্য গুলোতে এবং আগমনী গানে দুর্গারূপে শিবজায়া হিমালয়দুহিতা পার্বতীর সপরিবারে পিতৃগৃহে অবস্থানের আনন্দময় দিনগুলোর (দুর্গাপুজা) এবং তাঁর বিবাহিত জীবনের অপূর্ব বর্ণনা পাওয়া যায়। মহাদেবী দেবতাদের অনুরোধে দুর্গম অসুরকে বধ করেন তাই দেবী পার্বতী দুর্গা নামে অভিহিত হন। তিনি চণ্ডিকা, যোগমায়া, অম্বিকা, বৈষ্ণবী, মহিষাসুরসংহন্ত্রী, নারায়ণী, মহামায়া, কাত্যায়নী, দাক্ষায়ণী, অদ্রিজা, নগনন্দিনী, সিংহবাহিনী, শারদা, আনন্দময়ী ইত্যাদি নামেও পরিচিতা। দুর্গাদেবীর বর্ণনা মহাভারতের বিরাট পর্ব ও অন্যান্য পুরাণে পাওয়া যায়। হিন্দুদের মতে,দেবী দুর্গার ভিন্ন ভিন্ন অবতার সমূহ হল: কালিকা, নন্দী, ভ্রামরী,স্বাকম্ভরি, রক্তদন্তিকা, কৈশিকী,ভীমা উগ্রচন্ডা,ভদ্রকালী কাত্যায়নী,শান্তা দুর্গা, অজিতা,অপরাজিতা ইত্যাদি। দুর্গার বাহুসংখ্যা অনেক। তাঁর সহস্রভুজা, ত্রিংশতিভুজা, বিংশতিভুজা, অষ্টাদশভুজা, ষোড়শভুজা, দশভুজা, অষ্টভুজা ও চতুর্ভুজা মূর্তির উল্লেখ পুরাণ গ্রন্থাদিতে পাওয়া যায় বা বিভিন্ন স্থাপত্য-ভাস্কর্যে দেখা যায়। তবে দশভুজা রূপটিই সমধিক জনপ্রিয়। তাঁর বাহন সিংহ (উত্তর ও পশ্চিমভারতে আঞ্চলিকভাবে বাঘ)। মহিষাসুরমর্দিনী-মূর্তিতে তাঁকে মহিষাসুর নামে এক অসুরকে বধরত অবস্থায় দেখা যায়। ক্ষমতা আর বিজয়গর্বে মত্ত অসুর এবার চতুর্বেদকে হস্তগত করলে সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষায় দেবী মহামায়া এক দশভুজারূপী মঙ্গলময়ী দেবী রূপে আবির্ভূতা হন আর দুর্গমাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করেন। বিন্ধ্যাচলে ১০ দিন ব্যাপী ঘোরযুদ্ধে দেবী ও তাঁর অংশোদ্ভূতা গুহ্যকালী, ছিন্নমস্তা, ত্রিপুরা, ভৈরবী প্রভৃতি দেবীগণ দুর্গমাসুরের কোটি সৈন্যকে নিধন করেন। এরপর দেবী দুর্গমাসুরকে সুতীক্ষ্ণ শূলের আঘাতে বধ করেন এবং চতুর্বেদ এ সকল মন্ত্র উদ্ধার করেন। হিন্দু ধর্মালম্বনকারিদ্র মতে দেবী তাই সর্বমন্ত্রময়ী। ক্ষমাশীলা পরমাজননী দেবী এরপর অনুতাপদগ্ধ দুর্গমাসুরকে অদ্বৈত ব্রহ্মের জ্ঞান প্রদান করে মোক্ষলাভ করান। দেবী দুর্গা স্বয়ং সচ্চিদানন্দময়ী পরব্রহ্মস্বরূপা আদ্যাশক্তি মহামায়া। তাঁর অনেক রূপ, যার মধ্যে কালী রূপটি অন্যতম ।সম্ভবত খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বাংলায় দুর্গোৎসব প্রবর্তিত হয়। জনশ্রুতি আছে, রাজশাহীর তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রথম সাড়ম্বরে শারদীয়া দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন।
বছরে এক বার উমা/দূর্গা আসেন বাপের বাড়ি। সঙ্গে চার সন্তান। হিমালয় পর্বতের কন্যা পার্বতীর আগমনে বোধন থেকে বিসর্জন মেতে ওঠে বাংলার প্রতি কোণ। কিন্তু জানেন কি, একমাত্র বাংলার মাটিতেই দেবী হিন্দু ধর্মালম্বনকারিদের দ্বারা পূজিতা হন সপরিবারে। ভারতের বাকি অংশে তিনি পূজিতা হন একা। সেখানে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিক তাঁর সন্তানও নন। তাঁরা স্বতন্ত্র দেবদেবী। এই বাংলার মাটিতেই তাঁদের কল্পনা করা হয়েছে পার্বতীর সন্তান হিসেবে। বৈদিক কাব্য থেকে রামায়ণ, মহাভারত হয়ে লৌকিক কাব্য বা মঙ্গলকাব্যের যাত্রাপথ সুদীর্ঘ। সেই পথেই এই বিবর্তন। কালের স্রোতে স্বতন্ত্র দেবদেবীরা হয়ে গেলেন দুর্গতিনাশিনীর সন্তান-সন্ততি। কিন্তু বেদ বা পুরাণ অনুযায়ী, চারজনের কেউ মা দুর্গার গর্ভজাত নন।”—-সংকলিত।
বাংলাদেশ একটি ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ।এখানে আমরা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- সবাই মিলেমিশে এক সঙ্গে চলি,যার যার ধর্মীয় বিশ্বাস মতে যার যার উৎসব পালন করি।বাংলাদেশের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ের। আর ইসলাম সব ধর্মের মানুষকে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দিয়েছে। যদি না তা অন্য ধর্মের মানুষদের স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘দ্বিনের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। সত্যপথ ভ্রান্তপথ থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে। যে তাগুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহতে ঈমান আনবে সে এমন এক মজবুত হাতল ধরবে, যা কখনো ভাঙবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৬)
ইসলাম অপরাধী নয়—এমন সব মানুষের বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘দ্বিনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি, তোমাদের স্বদেশ থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করবেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)
প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। মুসলিম সমাজেও অমুসলিমরা নিজেদের পরিমণ্ডলে ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করবে।আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের দ্বিন তোমাদের, আমার দ্বিন আমার।’ (সুরা : কাফিরুন, আয়াত : ৬) সব ধর্মের মানুষ প্রতিবেশী হতে পারে। প্রতিবেশী যে ধর্মেরই হোক প্রতিবেশী হিসেবে তাদের প্রতি সদয় আচরণ, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রদর্শনে কোনো প্রকার ত্রুটি করা যাবে না। প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষায় ইসলাম অত্যন্ত তৎপর।
আল্লাহ সবাইকে সম্প্রীতি, সহমর্মিতা ও সংবেদনশীলতা দান করুন। হিন্দু ভাই-বোনদের প্রতি শুভ কামনা,শুভ বিজয়া॥
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সিলেট।