গত বছর জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস ন্যাটোর মানদণ্ড অনুযায়ী জিডিপি-র দুই শতাংশ ব্যয়ের অঙ্গীকার করলেও বিপুল সরকারি ব্যয়ের চাপে আপাতত সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
গত বছর ইউক্রেন যুদ্ধের আচমকা ধাক্কায় জার্মানি কার্যত রাতারাতি প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় অভূতপূর্ব মাত্রায় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কয়েক দশকের ব্যয় সংকোচে মুমূর্ষু জার্মান সেনাবাহিনীকে চাঙ্গা করার জন্য দশ হাজার কোটি ইউরোর এককালীন ব্যয়ের ঘোষণা করেছিলেন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে এক ভাষণে তিনি সেইসঙ্গে সামরিক জোট ন্যাটোর ঘোষিত মানদণ্ড অনুযায়ী বছরে প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপি-র দুই শতাংশ বাড়ানোরও অঙ্গীকার করেছিলেন।
প্রায় ১৭ মাস ধরে চলে আসা ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবার সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলা এবং অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে একাধিক খাতে বিপুল ব্যয়ের কারণে জার্মানির কোষাগারে চাপ সৃষ্টি করেছে। সংবিধান মেনে বাজেট ঘাটতির মাত্রাও আরো বাড়ানোর সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতিতে জার্মান সরকার ব্যয় সংকোচের পথে এগোতে বাধ্য হচ্ছে।
বুধবার এক সরকারি মুখপাত্র বলেন, আপাতত ন্যাটোর মানদণ্ড মেনে জিডিপি-র দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয় হিসেবে ধার্ষ করা সম্ভব হচ্ছে না।
শলৎসের মন্ত্রিসভা বুধবার বাজেটের অর্থায়ন সংক্রান্ত যে আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে, তাতে বিষয়টি শেষ মুহূর্তে বাদ দিতে হয়েছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জার্মান সরকারের এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে। সংবাদ সংস্থা ডিপিএ-র সূত্র অনুযায়ী ২০২৪ সালের জন্য জিডিপির এক দশমিক সাত শতাংশ বরাদ্দ করা হচ্ছে।
আইন করে ন্যাটোর মানদণ্ড অনুযায়ী দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয় নিশ্চিত করা আপাতত সম্ভব না হলেও আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গড় হিসেবে সেই অঙ্গীকার মানতে চায়। দশ হাজার কোটি ইউরোর এককালীন ব্যয়ের হিসেব ধরলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হলেও সেই অর্থ ব্যয় করা হয়ে গেলে কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
গত বছর থেকে জার্মানি নিজস্ব সেনাবাহিনীর বেহাল অবস্থা উন্নতির চেষ্টা চালিয়ে যাবার পাশাপাশি ইউক্রেনকেও আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র না পাঠানোর অতীত নীতি বর্জন করে যাবতীয় দ্বিধা কাটিয়ে একের পর সে দেশকে এক ভারি অস্ত্র পাঠিয়ে চলেছে জার্মানি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইউক্রেনের বাজেট ও সামরিক ব্যয়ের একাংশও জার্মানি বহন করছে। ন্যাটোর সার্বিক প্রতিরক্ষার স্বার্থে অন্যান্য সদস্য দেশগুলিতেও জার্মানির সামরিক তৎপরতা বেড়ে গেছে। সম্প্রতি পোল্যান্ড ও আইসল্যান্ডেও জার্মানি আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
সূত্র : রয়টার্স ও ডয়চে ভেলে।