সাম্প্রতিক সময়ে একটি প্রতারক চক্র নিজেদেরকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে কাস্টমস্সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ মানুষকে চাকুরী দেয়া, বিদেশে পাঠানো, ভিসা তৈরি, বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে মালামাল ছাড়িয়ে আনা, জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত দালালি কার্যক্রম করে প্রতারণামূলকভাবে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল। এছাড়াও চক্রটি কাস্টমসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সীল ও স্টীকার গাড়ীতে ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিত। বর্ণিত বিষয়ে গত ১৫ আগস্ট ২০২৩ তারিখে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী র্যাব-১০ এর নিকট আইনি সহায়তা চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। র্যাব উক্ত প্রতারকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চক্রটির মূলহোতা মোঃ নজরুল ইসলাম (২৯), পিতাঃ মোঃ সফি মিয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ ও তার সহযোগী মোঃ ওয়ায়েশ করোনী @সেলিম (৪৭), পিতাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান, ব্রাহ্মনবাড়ীয়া সদর, ব্রাহ্মনবাড়ীয়া ও মোঃ নাসির উদ্দিন (২৬), পিতাঃ মোঃ হাবিব হোসেন, ফতুল্লা, নারায়নগঞ্জ, সৈয়দ মোঃ এনায়েত (৪৮), পিতাঃ সৈয়দ আফসার, বিমানবন্দর, বরিশালদের’কে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তার ইউনিফর্ম, আইডি কার্ড, ওয়াকিটকি, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সীল, স্টীকার, ভিজিটিং কার্ড, নগদ অর্থ, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিম কার্ড ও চেক বহি, মোবাইল, ০১টি প্রাইভেটকার ও ০২টি মোটরসাইকেল সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন প্রতারণার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, উচ্চাভিলাশী জীবন-যাপন করার উদ্দেশ্যে এই চক্রটি প্রতারণার কাজ বেছে নেয়। চক্রটি প্রায় ২ বছর যাবৎ এই প্রতারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। চক্রটির মোট সদস্য সংখ্যা ৭-৮ জন এবং চক্রটির মূলহোতা গ্রেফতারকৃত নজরুল। চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার চাকুরী প্রত্যাশীদের অর্থের বিনিময়ে চাকুরী দেয়ার কথা বলে এই চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত নজরুলের নিকট নিয়ে আসত। গ্রেফতারকৃত নজরুল কাস্টমস এর ইউনিফরম পরিহিত অবস্থায় চাকুরী প্রত্যাশীদের বলত যে, কাস্টমসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে তার সু-সম্পর্ক রয়েছে। এভাবেই চাকুরী প্রত্যাশীদের বিশ^াস অর্জন করে এবং চাকুরী দেওয়ার কথা বলে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিত। তারা প্রতারণার মাধ্যমে চাকুরী দেয়াসহ বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অসংখ্য ব্যক্তির নিকট হতে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও চক্রটি তাদের গাড়ীতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টিকার ব্যবহার করে প্রতারণা মূলকভাবে রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ ঢাকার বাহিরে বিভিন্ন রিসোর্ট ও ব্যবসায়ীদের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিত। গ্রেফতারকৃত নজরুল মূলত চক্রের অন্যান্য সহযোগীদের যোগসাজসে মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছিল। চক্রটির স্থায়ীভাবে কোন অফিস ছিল না বিধায় গ্রেফতারকৃত ওয়ায়েশ করোনীর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ভাড়া বাসাকে তারা অস্থায়ী অফিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। আত্মগোপনের জন্য তারা প্রায়শই নিজেদের মোবাইল নম্বর বন্ধ রেখে নিকট আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবের বাসায় অবস্থান করত। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।