সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেছেন, ভূমিকম্প ও দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে দুর্যোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা অর্জন করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের দুর্যোগ সহনশীল সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ শুরু করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশকে দুর্যোগ সহনশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি করেছে। তবে এখানে থেমে থাকলে হবে না। এটা চলমান প্রক্রিয়া। দুর্যোগ প্রতিরোধের বিষয়ে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। কখন কোথায় কিভাবে দুর্যোগ আসবে, তা অনেক ক্ষেত্রেই জানার উপায় নেই। ভূমিকম্প থেকে জানমাল রক্ষায় ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড মেনে পাকা বিল্ডিং ও মার্কেট নির্মাণ করতে হবে এবং পাকা স্থাপনার চর্তুদিকে চলাচলের জায়গা, অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে ওয়াটার হাইড্রেন্ট ও ফায়ার ইস্টিংগুইসার রাখতে হবে। আজ ১৮ জুন ২০২৩ ইংরেজি রোববার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সভার আয়োজন করেন। মহাপরিচালক বলেন, সরকারের যে কয়টি মন্ত্রণালয়কে গুরুত্বের দিক থেকে ওপরের দিকে রাখা হয়, এর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অন্যতম। দুর্যোগের সঙ্গে মানুষের প্রাণ ও সম্পদসহ অনেক কিছু জড়িত। তাই এ বিষয়ে মানুষের বেশি বেশি জানার প্রয়োজন আছে। প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ ঘোষণা করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ একসময় দুর্যোগের দুর্নামমুক্ত হবে। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট কাজ করছেন ও শক্তিশালী ভূমিকা রাখছেন। দুর্যোগ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের মাঝে জানান দিতে পারলে তারা এ বিষয়ে আরও সচেতন হবে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ আমিনুর রহমান এনডিসি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাসান সরওয়ার, প্রকল্প পরিচালক (ইউআরপি-ডিডিএম পার্ট) ড. এটিএম মাহবুব-উল করিম (যুগ্ম সচিব) ও পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) প্রবীর কুমার রায়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোঃ আনোয়ার পাশা। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক কাজী নাজিমুল ইসলাম, সিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ কাজী হুমায়ুন রশীদ, বাংলা সড়ক পরিবহন মালিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবদুল মান্নান, কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের প্রতিনিধি লেঃ তাকিউল আহসান, ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মোঃ আবদুল হালিম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কে.এম জুলফিকার তারেক, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শাহিনা সুলতানা প্রমূখ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান তিনি বলেন, বিশ্বের যে ক’টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকিতে রয়েছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ২০০ মিলিয়ন অর্থাৎ ২০ কোটি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ, জলবায়ুর পরিবর্তন, দরিদ্রতা ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণ আগের চেয়ে অধিক শক্তিশালী ও আত্মনির্ভরশীল। ইতোমধ্যে সরকার ভূমিকম্প ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অগ্রাধিকার দিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি বাস্তায়ন শুরু করেছে। পাশাপাশি দুর্যোগকালে ও দুর্যোগের পরে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যেমন, আহতদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তর করা ও জরুরি চিকিৎসাসেবা দেয়া, নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং জরুরি খাদ্য-বস্ত্রের ব্যবস্থা করাসহ সফলভাবে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ আজ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। অন্যান্য বক্তারা বলেন, বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন খারাপের দিকে যা”েছ। গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ বাড়ছে, এটা বাড়বে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, নদীভাঙন বাড়ছে। সময়ে বৃষ্টি না হয়ে অসময়ে হ”েছ। খরা বাড়ছে। এসব কারণে ফসলের উৎপাদন কমছে। টেকসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ধারণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর দর্শন হ”েছ-দারিদ্র্য দূরীকরণ। টেকসই উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি সবাইকে নিয়ে করতে হবে।