চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এর বন্দর জোনের অধীন ইপিজেড, কর্ণফুলী, পতেঙ্গা ও বন্দর থানার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সকল পুলিশ প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড দেখভালোর দায়িত্ব পালন করছেন উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা। সিএমপি থেকে বদলি হওয়া বর্তমান ডিআইজি আমেনা বেগমের পর সিএমপির ক্রাইম ডিভিশনে কাজ করার সুযোগ পান ২৫ তম বিসিএস ক্যাডারের এই নারী পুলিশ কর্মকর্তা। শুধু নারী ডিসি পদে নয়, মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দিন দিন নারী কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে। বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্ক বলছে, নারীরা সফলভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারছেন বলেই মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শুধু প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারে নয়, অন্যান্য ক্যাডারেও নারীদের সংখ্যা বাড়ছে। ওদিকে, একজন নারী হয়েও সিএমপি বন্দর জোনে দক্ষ পুলিশ কর্তকর্তা হিসেবে চারটি থানার প্রশাসনিক কাজ ও জনগণের মধ্যে পুলিশি সেতু বন্ধন তৈরি করে সেবা দিয়ে যাস্থেন তিনি। চ্যালেঞ্জিং পেশা পুলিশে ক্রাইম জোন খ্যাত বন্দর বিভাগে তিনি অভাবনীয় সাফল্য দেখাস্থেন। মিলেছে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিও। থানা এলাকায় সংঘটিত একাধিক ক্লুলেজ মামলার জট খুলছেন। হত্যা মামলার আসামিদের ২৪ ঘন্টায় আইনের মুখোমুখি করছেন। ফলে, অপরাধ দমন ও নিরাপত্তায় নারী পুলিশ সদস্য হয়েও সমানতালে এগিয়ে যাস্থেন তিনি। বন্দর জোনের ইপিজেড, কর্ণফুলী, পতেঙ্গা ও বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জদের সাথে কথা হলে তাঁরা জানান, ডিসি স্যারের সার্বিক দিকনির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে হত্যা খুনসহ ডাকাতি, ধর্ষণ, চুরি, সংঘবদ্ধ অপরাধ, মানবপাচার, বন্দর থানা এলাকা থেকে চুরি হওয়া শিশু ফেনী থেকে উদ্ধারসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর মামলার প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা। এছাড়াও দীর্ঘদিন মুলতবি থাকা অমীমাংসিত অনেক মামলার দ্রুত তদন্ত ও সুষ্ঠুভাবে নিষ্পত্তিতে সহায়তা করছেন বন্দর জোনের চার থানা পুলিশ। ফলে, কর্মক্ষেত্রে কাজের স্বীকৃতিতে পেশার উৎকর্ষতা বাড়াতে কাজে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। যাতে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারে পুলিশ।
গত ২০২২ সালের ১১ আগস্ট বন্দর জোনে যোগদান করা ডিসি শাকিলা সোলতানার বয়স এখন ১০ মাস ৮ দিন। এই অল্প সময়ে তিনি সিএমপি পুলিশের ভাবমূর্তি অনেকটা উজ্জ্বল করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন হত্যা মামলার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কর্ণফুলীতে জমি নিয়ে বিরোধের জোড়া খুনের ঘটনায় তাৎক্ষণিক আসামি গ্রেপ্তার করে রহস্য উন্মোচন করেছেন। উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘অন্য যে কোনো পেশার চেয়ে পুলিশে নারীদের চ্যালেঞ্জ খুব একটা কম নয়। তবে এখন এই পেশায় নারীরা অনেক বেশি আসছে। এটি আমাদের জন্য সুসংবাদ। প্রতিটি নারীই তাঁর স্ব স্ব জায়গায় যোগ্য। শুধু সুযোগের অপেক্ষা। আমি দীর্ঘদিন ধরে বন্দর জোনের ট্রাফিক বিভাগের ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সে হিসেবে বন্দর জোন আমার কাছে পরিচিত বরে কাজ করতে সুবিধা হস্থে।’ বন্দর ডিসি আরও বলেন, ‘নারী পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে। সবক্ষেত্রেই নারীদের অবদান লক্ষনীয়। মেয়েরাও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে এগিয়ে যাস্থে। অনেকেই নারীদের কর্মক্ষেত্রে কার্যক্রম পছন্দ করেন। কারণ একজন নারী সঠিকভাবে যত্ন সহকারে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। কাজ করতে গেলে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ থাকে। আমরাও চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবিলা করি। সরকারি কাজ সঠিকভাবে পালন করি। সুতরাং পুলিশ জনগণের শত্রু নয়, বরং বন্ধু। তিনি জনগণকে আহ্বান করে বলেন, ‘পুলিশকে সব সময় প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে সঠিক সেবা গ্রহণ করুন।’ প্রসঙ্গত, বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার শাকিলা সুলতানার ডাক নাম মিতু। নিজ জেলা চট্টগ্রাম। বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি। চুনতি ডিপুটি বাড়ির কৃতি সন্তান চুনতি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলহাজ্ব আমিন খান জুনু মিয়ার সুযোগ্য কন্যা শাকিলা সুলতানা মিতু। দীর্ঘদিন তিনি সিএমপির বিভিন্ন বিভাগে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে সিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ও বন্দর ট্রাফিক বিভাগে ডিসি হিসেবে কাজ করেছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে প্রথম আট নারী কনস্টেবল নিয়োগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে তাঁরা কাজ করতেন সাদা পোশাকে। এরপর পুলিশি পোশাকে নারী সদস্যদের নিয়োগ শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। সে সময় মাত্র ১১ নারী সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে যে পথচলা শুরু সে সংখ্যাটা আজ ১৫ হাজার ছাঁড়িয়েছে।