জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১৫ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে “পার্টিশনের ৭৫ বছরঃ বহুস্বরের সন্ধান” শীর্ষক এ আলোচনা সভা শুরু হয় সকাল ১১ টায়।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস এর সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে ছিলেন ইতিহাসবিদ ও চিন্তক বদরুদ্দীন উমর ও ডায়মন্ড হারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান অনিন্দিতা ঘোষাল। এসময় বদরুদ্দীন উমর তার লিখিত প্রবন্ধ ‘ভারত ভাগের কথা’ পাঠ করেন এবং অনিন্দিতা ঘোষাল তার ভারতভাগ ও রিফিউজি সংক্রান্ত গবেষণা কাজ সম্পর্কে আলোচনা করেন। আলোচনাসভা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
৯২ বছর বয়সী দেশের প্রবীণ চিন্তক ও ইতিহাসবিদ বদরুদ্দীন উমর দেশভাগ নিয়ে নানা বিষয় তুলে ধরেন। দেশভাগ সম্পর্কে বুঝতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বুঝা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ধর্মীয়ভাবে আলাদা হলেও মুসলমান শাসকরা হিন্দুদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে চলতো শাসন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার স্বার্থে। প্রথমে সুলতানিরা এবং পরবর্তীতে মুঘলরাও’। ‘সিপাহী বিপ্লবের পর মুসলমানরা উপলব্ধি করতে পারে যে ইংরেজি শিক্ষা বর্জন করা ঠিক হয় নি। তখন তারা ইংরেজি শিক্ষার দিকে অগ্রসর হয়। এতদিন হিন্দুরা যে সুবিধা একচেটিয়া পাচ্ছিলো, তার ভাগ মুসলমানদের দিতে হচ্ছে এমন চিন্তা থেকে বৈরিতা হয়। এখান থেকে জন্ম হলো হিন্দু জাতিয়তাবাদের’।
মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘গান্ধীর অহিংসা শুধু ভারতীয়দের জন্য প্রযোজ্য ছিল। আন্দোলন যাতে সহিংস না হয় গান্ধী তা বলতেন, কিন্তু ব্রিটিশদের সহিংসতা তিনি দেখতেন না। জালিওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করেন নি। ভগত সিং কে যখন ফাঁসি দেয়া হলো তারও প্রতিবাদ করেন নি’। এছাড়া বদরুদ্দীন উমর তৎকালীন কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতাদের সমালোচনাও করেন। ‘কংগ্রেস ও লীগের নেতারা স্বাধীনতার থেকে ভাগ বাটোয়ারায় বেশি আগ্রহী ছিল। তারা জনগনের সাথে প্রতারনা করে ভারত ভাগ করেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাপ ব্রিটিশদের দগ্ধ না করে দগ্ধ করেছিল ভারতবাসীকে’।
অনিন্দিতা ঘোষাল তার গবেষণায় তুলে ধরেন কিভাবে ভারত ভাগের ফলে এক কোটির বেশি মানুষ গৃহহীন হয় ও দেশত্যাগে বাধ্য হয়। তাদের দুঃখ, দুর্দশা এবং বর্তমান উপমহাদেশের রাজনীতিতে এর প্রভাব। এসময় তিনি বলেন, ‘পাহাড় কিভাবে ভাগ হবে, নদী কিভাবে ভাগ হবে, নাকি হবে না সব আলোচনা হলো। কিন্তু সবথেকে কম আলোচনা হলো মানুষের ব্যাপারে। র্যাডক্লিফ লাইনের রিপোর্ট পড়লে মনে হবে এখানে কোন মানুষ নেই’।
অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বাংলাদেশের রাজনীতি ও ইতিহাস বুঝতে ’৪৭ এর দেশভাগ বোঝার বিকল্প নেই উল্লেখ করে বলেন, ‘কেন বাংলাদেশে দুই দিন পর পর পূজার সময়, নির্বাচনের আগে হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয় তা বুঝতে হলে ’৪৭ এ ফিরে যেতে হবে’। ‘শিক্ষিত মহলে সেক্যুলার বনাম ইসলামপন্থী যে তর্ক, শাহবাগ হলে হেফাজত হয় এই তর্ক সবকিছুর সাথেই ’৪৭ এর সম্পর্ক রয়েছে’।
এ সময় বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।