খুলনা মহানগরীর শিববাড়ি মোড় থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত খুলনা-যশোর মহাসড়কের পূর্বপাশে রেলওয়ের পার্শ্বে দেওয়াল চিত্র আঁকা হয়েছে। সোয়া কিলোমিটার স্থানজুড়ে দেওয়াল চিত্রে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত শহিদদের বড় আকৃতির ছবি ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।
অপর অংশে তুলে ধরা হয়েছে ১৯৫২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন প্রতিকৃতি। খুলনার মানুষের নজর কাড়ছে ব্যতিক্রমী এ দেওয়াল চিত্র। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে খুলনা মহানগর যুবলীগের উদ্যোগে এসব দেওয়াল চিত্র স্থাপন করা হয়েছে।
শোকের কালো রঙে ছেয়ে আছে দেয়ালগুলো। মাঝে মধ্যে আছে আবেগ সৃষ্টিকারী ১৫ আগস্ট নিহত শহিদদের ছবি, পরিচয়। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী ইতিহাস এবং ঐতিহাসিক মুহূর্ত নিয়ে বিভিন্ন দেয়াল চিত্র শোভা পাচ্ছে সড়কের পাশের দেয়ালগুলোতে। সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় পথচারীরা থমকে দাঁড়াচ্ছেন। দেখছেন, কেউ কেউ ছবি তুলছেন। এভাবে খুলনা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো যেন এক একেকটি শোকগাথায় পরিণত হয়েছে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে খুলনা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেয়াল চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ১৫ আগস্ট নিহত শহীদদের জীবনী। খুলনা মহানগর যুবলীগ, সদর থানা আওয়ামী লীগ, জেলা আইনজীবী সমিতি, ক্রীড়া সংস্থা, বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এসব আয়োজন করেছে।
তারা জানান, নতুন প্রজন্মের মাঝে ১৫ আগস্ট শহীদদের পরিচয় ভালোভাবে তুলে ধরতে, তাদের জীবন সম্পর্কে জানতে উদ্ধুদ্ধ করতেই এই আয়োজন।
নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর শিববাড়ি মোড় থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত খুলনা-যশোর মহাসড়কের পূর্বপাশে রেলওয়ের দেওয়ালে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শহিদদের জীবনী লাগানো হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে আরেকটি দেয়ালে। খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক শফিকুর রহমান পলাশ ও যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ শাহজালাল হোসেন সুজনের উদ্যোগে এই দেয়াল চিত্র লাগানো হয়েছে।
নগরীর বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিসিএল কার্যালয় ও জেলা স্টেডিয়ামের দেয়ালেও একই আয়োজন করেছে সদর থানা আওয়ামী লীগ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগেই দেয়ালে শহীদদের জীবনী ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। বিটিসিএলের ওপর পাশে দেয়ালে এভাবেই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল।
স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ নিয়েছিলো খুলনা মহানগর যুবলীগ। ২০২০ ও ২০২১ সালে নগরীর শিববাড়ি মোড় থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও শহিদদের জীবনীভিত্তিক দেয়ালচিত্র স্থাপন করা হয়। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছিলেন সুধীজনেরা। এবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এই উদ্যোগ।
খুলনা মহানগর যুবলীগের সদস্য মশিউর রহমান সুমন বলেন, প্রথম দেওয়াল লিখন শুরু করেছিলাম, তরুণ সমাজের মধ্যে সেটি ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল। বঙ্গবন্ধু পরিবারটি সম্পর্কে তারা শিখতে ও জানতে আগ্রহী হয়েছিল। এ পরিবারের রাজনীতি এবং তারা যে আত্মত্যাগ করে গেছেন সেই সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে আরও উদ্বুদ্ধ করার জন্য এবারও দেওয়াল লিখনের আয়োজন করা হয়।
খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক শফিকুর রহমান পলাশ বলেন, আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো এসব ছবি দেখে বর্তমান প্রজন্ম শহীদদের চিনুক, তাদের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে তাদের আদর্শে নিজেদের গড়ে তুলুক। এছাড়া আমাদের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিলো, শোক দিবসে আত্মকেন্দ্রিক প্রচার থেকে বের হয়ে আসা। শহীদদের ছবি ছোট করে দিয়ে নিজের হাসিমুখের ছবি বড় করে প্রচার করার যে অপসংস্কৃতি শুরু হয়েছিলো, এটা বন্ধ করা।
খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। ফজলুল হক মনি ছিলেন মুজিব বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা। একইভাবে দেশের জন্য শহীদ শেখ আবু নাসের, শেখ জামাল, সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, কর্নেল শাফায়াত জামিল, বেগম আরজু মনির অবদান কখনো ভুলবার নয়। অথচ তাদের নাম নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানে না। দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম তাদের সম্পর্কে নতুন করে জানতে উদ্ধুদ্ধ হবে।