আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমরা চাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি পূর্ণ শক্তি নিয়ে অংশ নিক। সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর নির্বাচন হোক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বিএনপি সব সময় নির্বাচন থেকে পালিয়ে যায়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবির রিজভী সাহেবের বক্তব্য নির্বাচন থেকে পালিয়ে যাওয়ার একটা ছুঁতা। এজন্যই তারা এসব বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর হবে। আমরা সেই নির্বাচনে বিএনপি’র সঙ্গে খেলে জিততে চাই। আমরা ওয়াক ওভার চাই না। শুক্রবার (১৬ জুন) দুপুরে মন্ত্রীর মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচনের আগে বিএনপিকে মাঠ ছাড়া করার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। এজন্য পুরনো স্থগিত মামলা চালু করেন নেতাদের কারাগারে রাখা হচ্ছে- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অগ্নি সন্ত্রাসের হুকুমদাতা ও অর্থদাতা হিসেবে মামলা আছে। মামলা তো সরকার চালু করতে পারেনা। আদালতে সময় নিয়ে তারা মামলা নিয়ে সময়ক্ষেপণ করেছে। কোন কোন সময় উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলা স্থগিত হয়েছে। সেগুলো যখন ভ্যাকেট হয়ে যায় তখন সেই মামলাগুলো অটোমেটিক চালু হয়। সে ক্ষেত্রে কিছু কিছু মামলা অটোমেটিক চালু হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন যারা অগ্নি সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। তারা সারা বাংলাদেশের মাদক মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন করে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে যে যারা অগ্নি সন্ত্রাসের হুকুমদাতা ছিল, অর্থদাতা ছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। অগ্নি সন্ত্রাসের সঙ্গে যারা সরাসরি যুক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও বিএনপির যেসব নেতা হুকুমদাতা ও অর্থদাতা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে আসলে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এটা জনগণের দাবি। সুতরাং বিএনপির এসব নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সরকারেরও দায়িত্ব। কারণ রাজনীতির নামে এভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা জীবন তো মানুষকে পুড়িয়ে মারা, যারা রাজনীতি করে না রাজনীতি বোঝেনা। নিছক জীবিকার তাগিদে তারা ঘর থেকে বেরিয়ে ছিল। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তাদেরকে এভাবে হত্যা করা এটি তো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। তো এই অপরাধের বিচার হবে না? অবশ্যই এই অপরাধের বিচার হওয়া বাঞ্ছনীয়। দেশের মানুষ চায় এই অপরাধের বিচার হোক। তবে আমরা চাই বিএনপি আগামী নির্বাচনে পূর্ণ শক্তি নিয়ে অংশ নিক। একটি প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষ আগামী দিনের সরকার নির্বাচিত করুক। ঈদের পর এক দফা আন্দোলন ও কাফনের কাপড় পরে সরকার পতনের আন্দোলন করবে এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ঈদের পরে আন্দোলন করবে এটা তো তারা প্রায়ই বলে। রমজানের ঈদের আগে তারা বলেছিল রমজানের ঈদের পর আন্দোলন করবে। সামনে কোরবানীর ঈদ। এখন তারা বলছে ঈদের পর আন্দোলন করবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কোন ঈদের পর তার আন্দোলন করবে? এ বছর ঈদের পর নাকি আগামী বছরের ঈদের পর? বিএনপি ভোটে আসার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি’র উদ্দেশ্য নির্বাচন করা নয়। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনকে ভন্ডুল কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ করা। বিএনপি নির্বাচনে জেতার গ্যারান্টি চায়। কিন্তু নির্বাচনে জেতার গ্যারান্টি তো সরকারও দিতে পারবে না জনগণও দিতে পারবে না। নির্বাচন কমিশনও দিতে পারবে না। তাদের বক্তব্যে মনে হয় যে নির্বাচনে জেতার গ্যারান্টি পেলেই তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে আমি বিএনপিকে অনুরোধ করব আপনারা নির্বাচনে অংশ নিন। একটি কথা সঠিক বিএনপি বর্জন করলেও জনগণ যে ব্যাপকভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়, সেটি সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখানে কোন দল নির্বাচনে অংশ নিল সেটির চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে জনগণ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে কিনা। সেটি হচ্ছে মুখ্য বিষয়। তবে আমরা চাই বিএনপি দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। বিএনপি বড় একটা রাজনৈতিক দল। তাদেরও জনসমর্থন আছে। তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। আমরা তাদের সঙ্গে খেলে জিততে চাই। আমরা ওয়াক ওভার চাই না। বিএনপি গণমাধ্যমের কালো দিবস পালন করছে, এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমের উপর যদি নিপীড়ন নির্যাতন কেউ চালিয়ে থাকে সেটি হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির সময় সারা বাংলাদেশে অনেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছিল। সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বালু থেকে শুরু করে অনেক সাংবাদিককে তারা হত্যা করেছে। বিএনপির সময় যেসব সাংবাদিক মুক্তমনা ছিল তাদের উপর ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে। আজকে বাংলাদেশে কেউ স্বীকার করুক আর না করুক বাস্তবতা হচ্ছে এই গণমাধ্যম অত্যন্ত স্বাধীনভাবে কাজ করে। গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ হচ্ছে। আগে ১০ টি টেলিভিশন চ্যানেল ছিল এখন ৩৮ টি। সাড়ে চারশ দৈনিক পত্রিকা ছিল এখন সাড়ে ১২ শ। হাতেগোনা কয়েকটি অনলাইন ছিল এখন কয়েক হাজার। এইভাবে বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। এটি ঘটেছে জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণেই। আর সাংবাদিকদের কল্যাণে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, স্বাভাবিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে করোনা কালে বিশেষ সহায়তা এগুলো আগে ছিল না। আর বিএনপির আমলে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট ছিল না। তাদের সময় সাংবাদিক নির্যাতন হয়েছে।