গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের অনিয়ম-দুর্নীতি অনুসন্ধানে কোনো মহলের চাপ নেই বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর আলম অনিয়ম করেছেন কি না- তা অনুসন্ধান করে বের করতে হবে। এখানে আমাদের নিজস্ব কোনো বিষয়, চাপ বা কোনো মহলের বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। উনি (জাহাঙ্গীর) কী করেছেন বা করেননি সবকিছুই অনুসন্ধান শেষে বের হয়ে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার পরে সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হন জাহাঙ্গীর আলম। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে দুপুর সোয়া ২টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান। এরপর জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন দুদক সচিব মাহবুব হোসেন। এদিন দুদক কার্যালয় থেকে বের হয়ে জাহাঙ্গীরও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। দুদক সচিব বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোটি টাকা লেনদেন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশে অনুসন্ধান কার্যক্রম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতায় রুটিন কার্যক্রম মাফিক জাহাঙ্গীর আলমকে তলব করা হয়েছিল। তিনি সময় প্রার্থনা করেছিলেন। আজকে তিনি বক্তব্য দিতে এসেছেন। তিনি আরও বলেন, দুদকে অভিযোগ আসার পর প্রাথমিকভাবে তা খতিয়ে দেখা হয়। দুদক আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। আইন ও বিধি অনুযায়ী জাহাঙ্গীর আলম দুদকে এসে তার বক্তব্য দিয়েছেন। ভিত্তিহীন অভিযোগে দুদক অনুসন্ধান করছে, জাহাঙ্গীরের এমন অভিযোগ বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, দুদক বিধির আলোকে যদি তফসিলভুক্ত কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে, প্রাথমিকভাবে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় কেবল তখনই কমিশনের অনুমোদন ক্রমে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়। অনুসন্ধানের পরই জানা যাবে উনি (জাহাঙ্গীর আলম) কোনো অনিয়ম করেছেন কি না। জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়েন্দা ইউনিটের মাধ্যমে তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা তথ্য সংগ্রহপূর্বক প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এছাড়াও একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘ভুয়া অ্যাকাউন্টে জাহাঙ্গীরের কোটি কোটি টাকা লেনদেন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত বছরের আগস্টে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুই সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। গাজীপুরের কোনাবাড়ী প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নামীয় একটি ভুয়া অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। দুদক সূত্র জানিয়েছে, অনুসন্ধান টিম চারজন ব্যাংক কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জনের বক্তব্য রেকর্ড করেছে। ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১ অর্থবছরে যেসব পূর্ত কাজের নির্দিষ্ট কোম্পানিকে দর দেওয়ার অনুরোধ সংক্রান্ত (আরএফকিউ) দিয়েছে সে সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। হাটবাজার ইজারা ও অন্যান্য রাজস্ব খাত থেকে যে রাজস্ব আদায় হয়েছে সে সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। কনজারভেন্সি খাতে কী কী কাজ হয়েছে বা কীভাবে অর্থ ব্যয় হয়েছে সে সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রও সংগ্রহ করা হয়েছে। জানা গেছে, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কর্মকালীন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের রাজস্বখাতভুক্ত যেসব ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হয়েছে সে সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। করোনা মহামারির সময়ে করোনা প্রতিষেধক ও খাদ্যসামগ্রী কেনার নামে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে কি না, এর রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমার মাঠে বিভিন্ন খাতে ব্যয় সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। পৃথক নোটিশে জাহাঙ্গীরকে গত ২১ ও ২২ মে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে অনুরোধ করে দুদকের উপপরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. আলী আকবর। আলী আকবরের নেতৃত্বে দুটি পৃথক অনুসন্ধান টিম জাহাঙ্গীরের অনিয়ম বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। গত ১৮ মে দুদকের তলবে হাজির হতে এক মাস সময় চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন জাহাঙ্গীর আলম। এ বিষয়ে কোনো জবাব না পেয়ে ২১ মে দুদকে হাজির হয়ে সময় চাওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন তিনি। পরে তাকে ৬ ও ৭ জুন সশরীরে দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়।