বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) স্টার সানডে ছুটির দিনে পরীক্ষা দিয়ে স্থগিত করেছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের এমন উদাসীন সিদ্ধান্তে ভোগান্তি ও সেশনজটের আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্যালেন্ডারে ৯এপ্রিল ছুটি না থাকায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৩ সালের স্টার সানডে ৯এপ্রিল (রবিবার) হলেও ১০ এপ্রিল (সোমবার) স্টার সানডের ছুটি রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্যালেন্ডার করেছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্যালেন্ডারের সাথে সমন্বয় রেখে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর ৯এপ্রিল পরীক্ষা রেখে রুটিন তৈরি করে। গত ৫ই এপ্রিল রেজিষ্ট্রার দপ্তরের এক নোটিশে ৯এপ্রিল ছুটি ঘোষনা করায় ঐদিনের সকল পরীক্ষা প্রত্যাহার করে নেয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও জনসংযোগ অফিসের উপ-পরিচালক মো. ফয়সল মাহমুদের কাছে স্টার সানডের ছুটির অসঙ্গতির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, “মানুষ কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, আমরা ক্যালেন্ডার তৈরি করি জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত। এই বিষয়গুলে পঞ্জিকা দেখে করা হয়ে থাকে। আমরা যখন জেনেছি স্টার সানডে এবার নয় তারিখ হবে তখন আমরা রেজিস্ট্রার দপ্তরের মাধ্যমে ঐদিন ছুটি ঘোষণা করেছি।” স্টার সানডের ছুটিটা আরো আগে কেন সংশোধন করা হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ ভর্তি শিক্ষাবর্ষের রসায়ন বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগ ও অর্থনীতি বিভাগ, ২০২০-২১ শিক্ষার্বর্ষের গণিত বিভাগ,২০২০–২১শিক্ষাবর্ষের মার্কেটিং বিভাগ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মাষ্টার্সের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একটি পরীক্ষা রূটিন অনুযায়ী ৯ এপ্রিল হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু সম্প্রতি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পক্ষে স্বাক্ষরিত এক নোটিশে ৯ই এপ্রিলের সকল ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করায় ক্ষুদ্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ ভর্তি শিক্ষাবর্ষের রসায়ন বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগ ও অর্থনীতি বিভাগ, ২০২০-২১ শিক্ষার্বর্ষের গণিত বিভাগ,২০২১-২২শিক্ষাবর্ষের মার্কেটিং বিভাগ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একটি পরীক্ষা রূটিন অনুযায়ী ৯ এপ্রিল হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু সম্প্রতি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পক্ষে স্বাক্ষরিত এক নোটিশে ৯ই এপ্রিলের সকল ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করায় ক্ষুদ্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷
এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা- সমালোচনার ঝড় তুঙ্গে৷ রোকন নামের এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেন, কতটা উদাসীন হলে এমন ভাবে রুটিন করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর।পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের কাজ কি তাই হয়তো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানেন না!
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৯ তারিখের স্থগিত পরীক্ষা রসায়ন ও গণিত বিভাগের এপ্রিল মাসের ১০তারিখে, লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষ ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ১৭ই এপ্রিল, মার্কেটিং বিভাগের স্নাতক প্রথমবর্ষ ও ফিন্যান্স বিভাগের মাস্টার্সের ৭মে ও অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের পরীক্ষা আগামী ১১ মে অনুষ্ঠিত হবে৷
এদিকে অধিকাংশ বিভাগের ইদের আগেই সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ হওয়া কথা থাকলেও ৯তারিখের পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি৷ বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও সেজনজটের কবলে পড়ার কথা বলেছেন শিক্ষার্থীরা৷
মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শেসনের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ” নয় তারিখে আমাদের একটা কোর্সের ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা ছিল, আমরা সেইভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি এখন শুনছি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে, পরবর্তীতে আমাদের নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হবে। এমনিতেই জটে আছি, আর কর্তৃপক্ষ যদি এমন উদাসিনতা দেখায় তাহলে দিন দিন আমরা আরো জটে পড়বো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের মাষ্টার্সে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী কামাল(ছদ্মনাম) বলেন, পরীক্ষা শুরুর আগে থেকেই আমরা রুটিন অনুযায়ী পড়াগুলোর সাথে একটা টাইম সেট করা থাকি। যাতে মানসিক ভাবে এগিয়ে থাকা যায়। এখন পরীক্ষা পেছানোয় সব পরীক্ষাগুলোর মধ্য একটা ইমব্যাল্যান্সড সিচুয়েশন তৈরী হইলো। আবার এখন একটা পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় আমাদের ঈদের পরে যে মাস্টার্সের ২য় সেমিস্টার এর ক্লাস শুরু হয়ে এক সপ্তাহ ক্লাস হইতো সেটাও পিছিয়ে গেলো। কারন ঈদের একসপ্তাহ পরই আবার পুরো মে মাস ভার্সিটি বন্ধ। তীব্র সেশনজটের আশঙ্কায় আছি। ভার্সিটি প্রশাসন কতটা অজ্ঞ হইলে ইস্টার সানডের বন্ধ ইস্টার মানডে বানাইয়া রোববারের ছুটি সোমবার দিয়ে রাখে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে!
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আজমির হাসান রিসাদ বলেন, কতটা উদাসীন হলে এমন ভাবে একটা রুটিন তৈরি করতে পারে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর। ইস্টার সানডের বন্ধ তা দেখে রুটিন করেনি। এখন পরীক্ষার আগ মুহূর্তে নোটিশ দিচ্ছে যে পরীক্ষা স্থগিত। উদাসীনতার একটা মাত্রা থাকে।
বিষয়গুলো নিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর স.ম. ইমানুল হাকিম বলেন,’আমি ছুটিতে আছি। এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষর সম্বলিত পরীক্ষা স্থগিত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষর করেছে৷’
উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সাযজাদ উল্লাহ ফয়সালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “একাডেমিক ক্যালেন্ডার দেখে রুটিন করা হয়েছে, ক্যালেন্ডারে ছুটি ছিল না তাই এমনটা হয়েছে৷”