চট্টগ্রামের পটিয়ায় অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় দ্রুত কমছে আবাদি জমি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১০ সালে যেখানে পটিয়ায় আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ১১৫ হেক্টর। এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮৬৫ হেক্টরে। আবাদি জমিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান না করার নির্দেশনা থাকলেও পটিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে আবাদি জমিতে গড়ে উঠছে গার্মেন্টস, খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দর, কর্ণফুলী টানেল, ৩য় কর্ণফুলী সেতু এবং কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথকে কেন্দ্র করে পটিয়ায় শিল্পায়নের অপার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় উদ্যোক্তারা আবাদি জমি কিনে সেখানেই গড়ে তুলছেন শিল্পকারখানা। ১৯৮৫ সালে পটিয়া বিসিক শিল্প এলাকা গড়ে ওঠে। সেখানে ৩৫টির মতো কারখানা রয়েছে। বিসিক শিল্প এলাকায় কোনো প্লট না পাওয়ায় এবং আর কোনো শিল্প এলাকা সৃষ্টি না হওয়ায় পৌরসভা এবং উপজেলার হাবিলাস দ্বীপ, কোলাগাঁও, জিরি, চরকানাই, জঙ্গলখাইন, কচুয়াই, খরনা ইউনিয়নের আবাদি জমিতে গড়ে উঠেছে একাধিক কারখানা। যত্রতত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় এসব ইউনিয়নের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কারখানার বর্জ্য খালে-বিলে পড়ে দুর্গন্ধ ছড়ানো ছাড়াও পানিতে মাছের অবস্থান হারিয়ে গেছে। সার্জেন্ট মাহী খালে একসময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত এখন সেই খালে কোনো মাছ নেই। নেই অন্যান্য জলজ প্রাণীও। এলাকাবাসী একাধিকবার এই নিয়ে মানববন্ধন করেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মাঝে এসে জরিমানা করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রোডে যাতায়াতকারী যাত্রীরা প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা নাকে রুমাল দিয়ে পার হন। পটিয়া পৌরসভার চাঁনখালী খালের তীরে ১ নম্বর ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৫০ এর দশকে গড়ে উঠেছে লবণ শিল্প এলাকা। ঐ এলাকায় এখন শিল্প কারখানা করার মতো আর কোনো জমি নেই। ফলে নতুন ও পুরোনো উদ্যোক্তারা মিলিটারি পুল এলাকায় আবাদি জমিতে গড়ে তুলছেন নতুন নতুন কারখানা। এসব এলাকার বাসিন্দারা গত পাঁচ বছর যাবৎ পানিসংকটে ভুগছেন। তাদের টিউবওয়েলে পানি না পাওয়ায় শত শত টিউবওয়েল এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর জন্য কারখানাগুলোর গভীর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলনকেই দায়ী করছেন তারা। অতি সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি যৌথ বেঞ্চ পটিয়ার চরকানাইন, হুলাইন, পাঁচুরিয়া ও হাবিলাস দ্বীপ গ্রামকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও বিভাগসমূহকে নির্দেশ দিয়েছে। পটিয়ার শিকলবাহা ইউনিয়নে রয়েছে ২৬০ মেগোয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। তার পাশে গড়ে উঠেছে আরেকটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র। গ্যাস, বিদ্যুৎ, সড়ক, রেল, জলপথ, বন্দর সহলভ্য হওয়ায় এবং তুলনামূলকভাবে জমির দাম কম হওয়ায় উদ্যোক্তারা পটিয়ায় শিল্পায়নে এগিয়ে আসছেন। তাছাড়া শ্রমিকের সহজলভ্যতা তাদের উৎসাহিত করছে। এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর দাবি আবাদি জমি নষ্ট না করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ের পূর্ব দিকে পাহাড় ও টিলা এলাকায় শিল্পায়ন করা হোক। উল্লেখ্য, প্রায় ৪ হাজার হেক্টর এলাকা নিয়ে পটিয়ার কচুয়াই ইউনিয়নে একটি চা বাগান ছিল। সেটি এখন পরিত্যক্ত। ঐ চা বাগান এলাকার অনেক জমি বেদখল হয়ে গেছে। ঐ জমিকে শিল্প জোন করে উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দিলে এলাকার কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আবাদি জমিও রক্ষা পাবে। এই বিষয়ে পটিয়া বিসিক শিল্প এলাকার ম্যানেজার রমেশ চন্দ্র সানা জানিয়েছেন, উদ্যোক্তাতারা শিল্পকারখানা করার জন্য জমি চাইছেন। তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন একটি বিসিক শিল্প এলাকা গড়ে তোলার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বিসিকের হেড অফিসে। পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতিকুল মামুন জানিয়েছেন, কোনো আবাদি জমিতে শিল্পকারখানা না করতে সরকার উদ্যোক্তাদের বলছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।