ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নবীন এক শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগকে মিথ্যা বলে পাল্টা অভিযোগ জানিয়েছে অভিযুক্ত ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) বিকালে ভুক্তভোগী ছাত্রীর বিরুদ্ধে লিখিত একটি অভিযোগ জানায় বলে নিশ্চিত করেন হল প্রভোস্ট ও ছাত্র-উপদেষ্টা।
অভিযোগপত্রে তিনি বলেন ‘গত ১১ তারিখ গণরুমের কিছু মেয়ে আমার কাছে অভিযোগ দেয়, আমার নাম নিয়ে গণরুমে যেয়ে একজন ছাত্রী মোছা. ফুলপরি খাতুন ফিন্যান্স ও ব্যাকিং বিভাগ ২০২১-২০২২ শিক্ষার্থী তাদের সিট কাটা ও নানান হুমকি দিচ্ছে এবং সে নিজেকে আমার ফুফাতো বোন ও আমাদের ছাত্রলীগের সভাপতির চাচাতো বোন বলে পরিচয় দেয়। সে হলের দক্ষিণ ব্লক-৩০৬ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছে বলে আমাকে তারা জানায়।
পরে আমি তাকে ডেকে পাঠাই এবং তার পরিচয় এবং সে হলে কার কাছে আছে জিজ্ঞাসা করার পরিপ্রেক্ষিতে সে জানায় যে, সে কথা আপুর সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্তরা আপুর মাধ্যমে উঠেছি। তখন আমিই অন্তরা এ কথা বলায় সে কথা বদলিয়ে আবার বলে সহ-সভাপতি মামুন ম্যানেজমেন্ট ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের এক ভাইয়ের মাধ্যমে হলে ওঠেছি। তারপর তাকে আমি কিছুক্ষণ বুঝাই। কিছুক্ষণ পরে আলামিন নামে ফুলপরির এক ভাই তার ফোনে ফোন দিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। ফোনে সে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকির পাশাপাশি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
আমি এবং অন্যান্য মেয়েরা রাতেই প্রভোস্ট স্যারকে বিষয়টি অবগত করি। প্রভোস্ট স্যার পরের দিন অর্থাৎ ১২ তারিখ দুপুর ২টার সময় দেখা করতে বলেন। প্রভোস্ট স্যারের কথামত আমরা ২টায় ফুলপরিকে সঙ্গে নিয়ে স্যারের সঙ্গে প্রভোস্ট রুমে দেখা করতে যাই এবং এ বিষয়ে কথা বলি।
পরবর্তীতে প্রক্টর স্যার মো. আমজাদ হোসেন এবং মুর্শিদ আলম স্যারদের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধান হয়। পরবর্তীতে তার পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কথা শোনার পর তাকে হলের গণরুমে থাকতে বলেন এবং আমাকে তুলে দিতে বলেন। এরপর আমি আমার কাজে ব্যস্ত থাকি।
রাত ১২টার দিকে আমি ৩০৬ নম্বর রুমে যাই। যেয়ে ফুলপরিকে বলি স্যার আমাকে গণরুমে তুলে দিতে বলেছেন তুমি যদি চাও সকালেই যেতে পার সে উত্তরে বলে সে এখনই যেতে চাই। আমার হলের দুই ছোট বোনকে দিয়ে দোয়েল-১ তুলে দিয়ে আসতে বলি। আমি পরবর্তীতে ৩০৬ নম্বর রুমেই ওই রুমের ছোট বোনদের সঙ্গে রাত ১.৪০ পর্যন্ত অবস্থান করি। পরবর্তীতে আমি রুমে চলে যাই এবং ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় তাকে হ্যারেজমেন্টের সংবাদ শুনি যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এর আগে, মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে রাতভর র্যাগিং ও বিবস্ত্র করে নির্যাতনের অভিযোগ তোলে ফুলপরি নামে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নবীন ছাত্রী। অভিযোগে তিনি বলেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতভর তার উপরঅমানবিক নির্যাতন করা হয় এবং সেসময় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীরা তাকে মারধর করে তার বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে রাখে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
পাল্টপাল্টি এই অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডলকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে উক্ত কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদাস্যরা হলেন- অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন আরা সাথি, অধ্যাপক ড. মুর্শিদ আলম, মোঃ আলীবদ্দীন খান। এছাড়াও হল থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এবং শাখা ছাত্রলীগ থেকে চার সদস্যের পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল বলেন, আমরা তদন্তেত নির্দেশ পেয়েছি। শনিবার থেকেই আমরা আমাদের কাজ শুরু করব। আশা করছি সঠিক তথ্য আমরা বের করতে পারব।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কখনো র্যাগিং এর নামে অসুস্থ জিনিসকে প্রমোট করেনা। আমরা অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তদন্ত কমিটি ঘোষণা করে দিয়েছে, দোষী যেই হোক আইন অনু্যায়ী আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।