শীতের রিক্ততার বিদায়ঘন্টা বাজিয়ে প্রকৃতি এখন ফাগুনের উষ্ণতায় বসন্তের অভাস দিচ্ছে। ঋতুরাজ বসন্ত তার আগমনী বার্তা নিয়ে প্রকৃতির দরজায় কড়া নাড়ছে।
বসন্তের আভাস জানান দিচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও, ক্যাম্পাস জুড়ে লালের সমারোহ, এ যেন লালশাড়ী পরে তরুণীদের মেলা বসেছে। পাতাহীন ডালে ডালে ফুটে থাকা রক্ত লাল পলাশ প্রকৃতিকে নতুন এক রূপে সাজিয়েছে। ফুলে বসতে শুরু করেছে পাখিরা। বসন্তকে বরণে ওরাও আনন্দে মেতেছে। সবুজের সমারোহে সমৃদ্ধ হয়ে রঙিন বসন্ত এক অপরূপ দৃশ্যের প্রতিচ্ছবি যেন রূপকথার মতো।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ এবং খেলার মাঠ সংলগ্ন রাস্তার পাশে সারি সারি আগুনরাঙা পলাশ ফুলের গাছ। রক্তলাল পলাশে মুগ্ধ শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কর্মকর্তা- কর্মচারি এবং ছুটির দিনে ক্যাম্পাস ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাও। গাছের প্রতিটি ডাল ছেয়ে গেছে রক্তাভ পলাশে। চোখ জুড়ানো পলাশের হাসি যেন সবার মন কেড়েছে।
রাস্তার পাশের সারিবদ্ধ গাছভরা পলাশের সৌন্দর্য একদিকে যেমন ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে, তেমনি এ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই শিক্ষার্থীদের মাঝে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন কেউ ফুলের সাথে সেলফি তুলছেন, আবার অনেকে গ্রুপ ফটোসেশন করছেন। কেউবা ফুল ছিঁড়ে তার প্রিয় মানুষের ফুলের আবদার মেটাচ্ছেন।
মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রাবণী বলেন, পলাশ মনোযোগ আকর্ষণকারী একটি ফুল, ক্যাম্পাসে প্রতিবছর এই সময়ে ফাল্গুনের সাজে সেজে ওঠে পলাশ ফুল। এই সৌন্দর্য দেখার জন্য ক্যাম্পাসে বাইরের লোকজন ভিড় জামায়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইন্দ্রাণী সরকার বলেন, পলাশের রঙিন উচ্ছ্বাস হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়।
চারিদিকের থোকা থোকা পলাশফুল দেখে মনে হয় যেন কোন শিল্পির আপন মনে তুলিতে আঁকা নিখুঁত কোন শিল্পকর্ম।
পলাশ মাঝারি আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ। সাধারণত ৮-১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। গাছের গোড়ার বাকল ফাটা হলেও আঁকাবাঁকা শাখা-প্রশাখার বাকল মসৃণ। একটি বোঁটায় তিনটি পাতা থাকে এবং আকারে অবিকল পারিজাত বা মাদার পাতার বড় সংস্করণ। পলাশের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল যে ফাল্গুনে গাছের পাতা ঝরে যায় আর তখনিই গাছে কুঁড়ি আসে। চৈত্রে যখন সারা গাছে কমলা বা লাল রঙের ফুল ফোটে তখন সেই অগ্নিকান্তি রুপ দেখে মনে হয় যেন আগুন রেগেছে। ফুলের কুঁড়ি দেখতে অনেকটা বাগের নখের মতো এবং ফুলের গঠন অনেকটা বক ফুলের মতো। এ ফুলের বৃতি ভেলভেটের মতো লোমশ এবং নরম। পলাশ ফল ছোট শিমের , ২-৪ সে. মি. পর্যন্ত লম্বা।