কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরে এসেও নানা সংকট নিয়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলায় তাদের নেই স্বতঃস্ফূর্ত কোন কার্যক্রম। তাছাড়া নেই কোন স্থায়ী কোচও। তার উপর রয়েছে মাঠের সংকট। এসব বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাপ্রেমী শিক্ষার্থীরা বারবার কথা বলে আসলেও তার কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
এসব সংকট নিয়েই আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্ট গুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়রা প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছে। তাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের অনুশীলন করার জন্য আলাদা আলাদা মাঠ থাকলে তারা আরো ভালো করতে পারত। তাছাড়া টুর্নামেন্ট শুরু হলে অস্থায়ী কোচ দিয়েই চলে তাদের প্রেক্টিস। তাদের দাবি সকল খেলার জন্য আলাদা আলাদা স্থায়ী কোচ নিয়োগ দেয়া হোক।
সরেজমিনে দেখা যায় কুবির কেন্দ্রীয় মাঠ রয়েছে একটি। যেখানে একটি ক্রিকেট পিচ ও দুইটি ফুটবল খেলার গোলবার রয়েছে। কিন্তু, নেই কোনো ভলিবল খেলার মাঠ, নেই হকি খেলার মাঠ, নেই বাস্কেটবল খেলার মাঠ। পাশাপাশি খেলোয়াড়দের বিশ্রামের জন্য নেই কোনো ড্রেসিং রুমের ব্যবস্থাও।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে , হকি টুর্নামেন্ট শুরু হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হকি খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় কেন্দ্রীয় মাঠে। ভলিবল টুর্নামেন্ট শুরু হলে কেন্দ্রীয় মাঠের পাশেই অস্থায়ীভাবে বানানো হয় ভলিবল মাঠ। বাস্কেটবল মাঠ না থাকায় কোনো টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণই করতে পারে না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হকি টিমের সদস্য ওয়াকিল আহমেদ বলেন, আমরা যারা আন্তবিশ্ববিদ্যালয় হকি খেলতে গিয়েছিলাম তারা দেখেছি যে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ খুবই সমান,যা হকি খেলার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মাঠ একটু উচুনিচু,মাঝেমধ্যে গর্ত রয়েছে যা হকি খেলায় একটু সমস্যা হয়,বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও যারা ক্রিড়া ক্ষেত্রে দায়িত্বে রয়েছে তাদের সুদৃষ্টি কামনা করছি যেন আমাদের মাঠটিকে মেরামত করে খেলার উপযোগী করে দেয়।
সার্বিক বিষয় দেখাশোনা করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের আর সেখানে নেই কোন পরিচালক। উপ-পরিচালক দিয়েই চলছে বিভাগটির কার্যক্রম। বিভাগ সূত্রে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে নিয়োগ না দেয়ায় অভিভাবকহীন এই বিভাগটি। তাছাড়া রয়েছে লোকবল সংকট একজন কর্মচারী ও উপপরিচালক দিয়েই চলছে এই বিভাগের কার্যক্রম। যার ফলে বিভিন্ন সময় ভোগান্তিতে পড়ছে বিভাগটির কার্যক্রম।
শারীরিক শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালক মোঃ মনিরুল আলম মূলত হকি খেলার প্রশিক্ষক। শুধু হকি খেলার প্রশিক্ষক হয়েও তিনি একাই দিয়ে থাকেন ভলিবল, ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন খেলার প্রশিক্ষণ। এতে শিক্ষার্থীরা বলছেন সঠিক প্রশিক্ষণ পাচ্ছে না তারা।
খোঁজ নিয়ে আরও দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল গত একবছরের কোনো খেলাতেই গ্রুপ পর্ব পার হতে পারেনি। যার কারণ হিসেবে প্রশিক্ষণের অভাবকে দায়ী করছে খেলোয়াড়েরা।
গত ১৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল ভলিবল খেলতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। সেখান থেকে বাদ পরে এসে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খেলোয়াড় বলেন, আমাদের ভলিবলের জন্য কোচ নেই। যদি থাকতো তাহলে আমাদের সাথে সেখানে গিয়ে খেলায় যে ভুলগুলো ছিল তা ধরিয়ে দিতে পারতো। এতে আমরা আরও ভালো করতে পারতাম৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, একজনই আমাদের সব খেলার কোচ। একজন সব খেলার প্রশিক্ষক হতে পারেন না৷ আমরা সঠিক প্রশিক্ষণের অভাবে ভালো ফল লাভ করতে পারছি না।
হকি খেলার প্রশিক্ষক হয়েও সবখেলা কীভাবে চালান এমন প্রশ্নে উপপরিচালক মোঃ মনিরুল আলম বলেন, আমাদের লোকবলের অভাব। কিছু করার নেই। বাধ্য হয়েই আমাকে সব করতে হয়।
তাছাড়া ১০ লাখ টাকা খরচ করে বানানো ক্রিকেট পিচ নিয়ে হতাশা কাজ করছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, “এটি ১০ লাখ টাকার পিচ হতেই পারে না। ১০ লাখ টাকার পিচ দেখে হতাশ আমরা।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এই পিচ দেখে মনে হয় না এটা দশ লাখ টাকা পিচ। আমরা নিজেরা বানালেও এর থেকে ভালো পিচ বানাতে পারবো।
তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ব্যায়ামাগার আছে সেখানেও নেই কোন প্রশিক্ষক। যার ফলে ব্যায়াম করতে এসেও ভোগান্তিতে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জামও।
নিয়মিত ব্যায়ামগারে শরীর চর্চা করতে আসা পারভেজ মোশাররফ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রীয় ব্যায়ামাগারে শরীর চর্চার পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই। পাশাপাশি নেই কোনো প্রশিক্ষক। আমি প্রথম প্রথম এসে ভোগান্তিতে পড়েছি। এখন ইউটিউব দেখে এসে শরীর চর্চা করি। আশাকরি প্রশাসন দ্রুত এর সমাধান করবে।
সার্বিক বিষয়ে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালক মোঃ মনিরুল আলম বলেন, আমাদের লোকবলের সংকট তাই আমরা বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছি। লোকবল নিয়োগ হলে আশাকরি এই সংকট গুলো কেটে যাবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা কার্যালয়ের পরিচালক ড. মোহাঃ হাবিবুর রহমান বলেন, আমি সবসময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলে সমাধান করার চেষ্টা করিছি। এই সমস্যা গুলো নিয়েও উপাচার্য স্যারের সাথে আলোচনা করে সমাধান করার চেষ্টা করবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সংকট রয়েছে। আমি আসার পর থেকে এগুলোর দিকে নজর দিচ্ছি। আমরা অ্যাকাডেমিক দিকটাতে আগে বেশী জোর দিচ্ছি। দ্রুতই বাকী বিষয়গুলোর দিকে নজর দিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করবো।