জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণিতক হারে বাড়ছে ব্যাটারিচালিত রিকশার পরিমাণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ দর্শনার্থীর চলাচলের জন্য প্রতিদিন প্রায় এক হাজারের মতো রিক্সা চলাচল করে জাহাঙ্গীরনগর বিশবিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। গত বছর (২০২২) জানুয়ারিতে দুইটি ব্যাটারিচালিত রিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত রিক্সা, ভ্যান ও ইজিবাইক বন্ধ ঘোষণা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদেরই চাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবার নিবন্ধনের মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচলের নির্দেশনা দেয়। প্রথম ধাপে চার হাজার টাকা করে ফি নিয়ে ৩০৯ টি অটোরিকশার নিবন্ধন দেয়া হয়। এছাড়াও তাদের প্রশিক্ষণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় নিবন্ধন নাম্বারসহ বিশেষ পোশাক দেয়া হয়।
এরপরেও থামছে না নিবন্ধন বহির্ভূত রিকশার পরিমাণ, এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবগুলো রাস্তা হেঁটে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। সাথে বিভিন্ন দূর্ঘটনার পাশাপাশি, শব্দ দূষণ এর মাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ জানান, ‘আমরা যারা হেঁটে কিংবা সাইকেল দিয়ে চলাচল করি তাদের জন্য ক্যাম্পাসের রাস্তা এখন ব্যবহার যোগ্য না। সব সময় ভয়ে থাকি যে এই বুঝি গায়ের উপর উঠিয়ে দিবে। তাছাড়াও এদের হর্ণের শব্দে তো আশে পাশে বসে থাকাও যায় না। আমাদের ক্যাম্পাসের ঐতিহ্য পরিযায়ী পাখিও কমে যাচ্ছে এই শব্দ দূষণের জন্য। আমার মনে হয় এই ব্যাপারে প্রশাসনের এখনই কোনো ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।‘
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধনকৃত নয় এমন এক অটোরিকশা চালক জানান, ‘মাঝেমধ্যে গেট এ আটাকায় রাখে, এক ঘন্টা দুই ঘন্টা করে লাইসেন্স না থাকার কারণে। কোনো কোনো দিন সারাদিন আটকায় রাখে।এখন ভাড়া গাড়িতে সারাদিন আটকায় রাখলে চলি কেমনে। এছাড়াও অনেকে টাকা দিয়েও কাগজ পায় নাই। ম্যাক্সিমাম যারা লাইসেন্স পাইছে তারা ক্যাম্পাসের নতুন, আর আমরা সেই বিশ বছর থেকে গাড়ি চালাই কিন্তু আমরা কাগজ পাই নাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (এস্টেট) আব্দুর রহমান (বাবুল) বলেন, ‘আমরা দুইদিন অভিযান পরিচালনা করেছি এবং সিকিউরিটিকে বলা আছে তারা ধরবে। আমাদের গেটগুলা খোলা থাকে এই জন্য সমস্যা হয়ে যায়। তারপরেও আমরা তৎপরতা চালাচ্ছি। রিক্সা কমছে আবার প্রতিদিনই আমাদের ভিজিটর আসে, তারা জোর করে নিয়ে আসে। বাইরের গেটগুলাতে তো সিকিউরিটি নাই এই জন্য ঢুকে যায়। গেটগুলা অরক্ষিত তো তাই এরকম হচ্ছে তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।‘
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান সুদিপ্ত শাহীন জানান, ‘রিকশা, জমি, দোকান, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি স্টেট শাখার আওতায়। আমরা কখন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করব যখন কোনো আন-অথোরাইজড রিকশা নুইসেন্সি করবে তখন। তার মানে প্রতিহত করা আমাদের কাজ। আর দেখভাল, লাইসেন্সিং সবই কিন্তু এস্টেট শাখার দায়িত্ব। এস্টেট এর কারণেই তো আমরা ক্যাম্পাস থেকে অনিবন্ধিত রিকশা বের করতে পারি না। আমরাই তাদেরকে বলেছি, একটা লোক চার হাজার টাকা দিয়ে ক্যাম্পাসে রিকশা চালাচ্ছে, আর একজন লোক ফ্রি চালাচ্ছে এতে তো তারা ফুঁসে উঠবেই। আর যারা এই ক্যাম্পাসে ২০ বছর রিকশা চালাইছে তারা কাগজ পায় নাই, কাগজ পাইছে অতিথি পাখিরা। কাগজ দিতে গিয়েও আমরা করছি দলীয়করণ। আমাদের যেন না যেতে হয় এইজন্য আমাদের থেকে দুইজন গার্ড একবারে পার্মানেন্টলি এস্টেট শাখায় দিয়ে দেয়া হয়েছে যারা তাদেরকে সহায়তা করবে। এছাড়াও স্টুডেন্টদের সুপারিশের জন্যও বন্ধ করতে পারছি না। আমার শাখা থেকে আমি জানাচ্ছি যে ২৪ ঘন্টাও নিব না এটা বিতাড়িত করতে, একদম জিরো করে দিতে। আমার শাখা এতটূকু সক্ষম, এতটুকু প্রস্তুত আছে। বিভিন্ন সুপারিশ এবং এস্টেট শাখার উদাসীনতা আমাদের এটা থেকে দূরে রাখছে।‘
নিবন্ধন করছে এমন কয়েক জন ইজিবাইক চালক আক্ষেপ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা চার হাজার টাকায় লাইসেন্স করে যে টাকা ইনকাম করি, আর তারা সাভার বা আশেপাশে থেকে নতুন এসেও সেই টাকাই ইনকাম করে। তাইলে আমাদের লাভ কি হইলো। ওরা এসে বিভিন্ন ঝামেলা করে আর দোষ হয় আমরা যারা রেগুলার চালাই এদের। আমাদের অনেকেই সুদের টাকা এনে লাইসেন্স করছে। এই টাকাও তুলতে পারি নাই। গেট দিয়েই ঢুকে, পরিচিত কারো সুপারিশ দিয়ে। আমরা তো গরীব মানুষ। আমাদের যেদিকে নাচাবে সেদিকেই যাইতে হয়। কিছু কইতে পারি না। অফিসে বলেও কোনো লাভ হয় না।