আর্থিক সমস্যার কারণে ট্যুরে যেতে না চাওয়ায় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ‘ফকিন্নির জাত’ বলে সম্মোধন করেছেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ। গত ২৯ জানুয়ারি বিভাগের নিজ অফিস কক্ষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় বিভাগের আরও কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও ট্যুরে যেতে রাজি না হওয়ায় ৫০ ব্যাচের নবীণ বরণ আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয় নি এমন অভিযোগও করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সংক্রান্ত একটি রেকর্ডিং প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীর সূত্রে জানা যায়, বিভাগ কতৃক আগামি ৫ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন ট্যুরের আয়োজন করা হয়েছে। ট্যুর বাবদ শিক্ষার্থী প্রতি চাঁদা নির্ধারন করা হয়েছে সাত হাজার টাকা। নির্ধারিত চাঁদা অত্যধিক দাবি করে ৪৯ ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীই ট্যুরে যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। এছাড়া ৫০ ব্যাচেরও অধিকাংশ শিক্ষার্থী ট্যুরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৫০ ব্যাচের নবীণ বরণ আয়োজনের অনুমতি নিতে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদের কক্ষে যায় ৪৯ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী। এসময় ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ শিক্ষার্থীদের ‘ফকিন্নির জাত’ বলে উল্লেখ করেন। রেকর্ডিং এ আরও শুনা যায় অধ্যাপক ইস্রাফিল বলেন, ‘অন্যান্য শিক্ষকরা এখন তোমাদের বিন্দুমাত্র পাত্তা দিচ্ছে না তারপরও তোমাদের লজ্জা হচ্ছে না। তোমরা এমন ভাবে বন্ডিং তৈরি করছ যে আমরা একজনও যাব না। কারণ তোমরা প্রমাণ করতেছ যে তোমরা একটা ‘ফকিন্নির জাত’। কারো কাছে কোনো পয়সা নাই, দিন আইনে, দিন খাও। তোমাদের কেউ নিষেধ করে নাই তো। তোমরা জুনিয়রদের বরণ করবা যেখানে খুশি কর। গাছতলায় যাও, ডিপার্টমেন্টের যে কোনো রুমে করা যায় করো, আমার আর অনুমতির কিসের দরকার?’
বিভাগের কয়েকটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থী আর্থিক সমস্যার প্রসঙ্গ তুললে ইস্রাফিল আহমেদ বলেন, ‘যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের আর এই বিভাগে ভর্তি করবো না। গরীবের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় চলে এই নীতি কথায় কাজ হবে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪৯ ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ট্যুরের চাঁদা আমাদের অনেকের জন্যই বেশি হয়ে গেছে। কিছুদিন প্রডাকশন আছে, ৫০ ব্যাচেরও প্রডাকশন আছে। সবারই তিন/চার হাজার টাকা করে খরচ এখানে। এরমধ্যে ট্যুরের এতগুলো টাকা দেয়া সম্ভব না অনেকের ক্ষেত্রেই। সাত হাজার টাকায় অনেকে দুই মাস চলে। অনেকে টিউশনি করিয়ে প্রডাকশনের টাকা ম্যানেজ করছে।’
আজ (৩১ জানুয়ারি) অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা তো আমাদের ছেলে-মেয়েদের কত কিছুই বলি। আমরা বকা দিব, আদর করব। আমার সন্তানকে আমি কালকে বকা দিছি, আবার আজকে আদর করলাম। আমার ডিপার্টমেন্ট হচ্ছে অন্যরকম, এখানে আমরা ছাগল বলি, পাগল বলি। আবার আদরও করি। আমাদের এখানে নবীনবরণ হলেই র্যাগিং হয়, তাই বলছি সামনে তো ট্যুর, একটু সময় দাও। তারা এখনি করবে। তারপরে আবারও বলছি যে তোমরা সব ব্যাচ মিলে একসাথে যাও।’
আজ (৩১ জানুয়ারি) শিক্ষার্থীদের কাছে দু:খ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান তিনি।