অপেক্ষা বাড়াল না। অতিথিদের সমতাও ফেরানো হলো না। প্রত্যাশিত জয়ে বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ডকে চতুর্থ ম্যাচে ৬ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশ সহজেই জিতে নিল টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগে ওয়ানডে সিরিজে একাধিকবার জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে অনন্য অর্জনে নিজেদের নাম লিখল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের নবম সিরিজ জয়। এর আগে অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই তালিকায় এবার কিউই বধ্যের কাব্য লেখা হলো।
টস হেরে ফিল্ডিং করতে নেমে বোলাররা নিউ জিল্যান্ডকে বড় সংগ্রহ পেতে দেয়নি। ৯৩ রানে গুটিয়ে যায় অতিথিরা। বাংলাদেশের ব্যাটিংও ছিল ভুলে ভরা। তবুও শেষ হাসিটা হেসেছে স্বাগতিকরাই। ৫ বল আগে ৬ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ জয় নিশ্চিত করে। এক ম্যাচ হাতে রেখে ৩-১ ব্যবধানে মাহমদউল্লাহরা জিতে নেয় সিরিজ।
১২০ বলে লক্ষ্য মাত্র ৯৪। কিন্তু এ রান করতে গিয়েই ‘লেজেগোবরে’ অবস্থা। লিটন স্পিনার ম্যাককনচি বল মিড উইকেট দিয়ে চার মারার পর স্লগ সুইপে ক্যাচ তুলে আউট হন ৬ রানে। তিনে ফেরা সাকিব এজাজ প্যাটেলের বল ইয়র্কার বানিয়ে স্টাম্পড ৮ রানে। নিজের ছায়া হয়ে থাকা মুশফিক এজাজের ওই ওভারেই সুইপ করতে গিয়ে বল মিস করে বোল্ড। কিউইদের বিপক্ষে তার পারফরম্যান্সের সূচক অবশ্য নিম্নমুখী। আট ইানিংসের চারটিতেই খুলতে পারেননি রানের খাতা। পাওয়ার প্লে’তে ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ছিল চাপে।
সেখান থেকে চতুর্থ উইকেটে পরিস্থিতি সামলে নেন মাহমুদউল্লাহ ও নাঈম। তবে রানের গতি ছিল একেবারেই কম। ৫০ বলে তারা করেন মাত্র ৩৪ রান। ওপেনার নাঈম খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। দলের প্রয়োজন অনুযায়ী রানও তুলতে পারেননি। ৩৫ বলে ২৯ রান করে নাঈম যখন রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তখনও বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৭ রান। হাতে ৩৩ বল। তরুণ আফিফকে সঙ্গে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ দলকে বিপদে পড়তে দেননি।
শেষ ১২ বলে দরকার ছিল ১১ রান। টিকনারের করা স্লোয়ার বলটি মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ সব চাপ নিমিষেই উড়িয়ে দেন। শেষ ওভারে তার ব্যাটেই জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। তার অপরাজিত ৪৮ বলে ৪৩ রানের ইনিংসে ছিল ১ চার ও ২ ছক্কার মার। আফিফ ১০ বলে ৬ রান করে সঙ্গ দিয়েছেন ভালোভাবেই।
এর আগে নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিং ইনিংস গুঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের দুই বোলার। শুরুতে স্পিনার নাসুম ৪ উইকেট নিয়ে ব্যাটিং অর্ডারের মাথা ও পেটে আঘাত করেছেন। সমান উইকেটে লেজটা কেটেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। দুজনের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগিতা ছিল কে কাকে ছাপিয়ে যাবেন।
ইনিংসের প্রথম ওভারে উইকেট পাওয়া নাসুম ৪ ওভারে ২ মেডেনে রান দিয়েছেন মাত্র ১০। দুই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র ও ফিন অ্যালেনকে সাজঘরে ফেরত পাঠানোর পর হেনরি নিকোলস ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকেও আউট করেন নাসুম। নিকোলসের উইকেটটা নিশ্চয়ই দীর্ঘদিন মনে রাখবেন। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বল করে অফস্টাম্পে পিচ করিয়ে ব্যাট প্যাডের ফাঁক দিযে নিকোলসের মিডল ও লেগ স্টাম্পে আঘাত করে।
মোস্তাফিজ ষষ্ঠ ওভারে প্রথম বোলিংয়ে এলেও তাকে শেষের জন্য জমিয়ে রেখেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তাতে কাজের কাজও হয়েছে। প্রথম ওভারে ৩ রানে উইকেটশূন্য থাকা মোস্তাফিজ পরের ২.৩ ওভারে ৯ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ১৬তম ওভারে ফিরে এসে টম ব্লান্ডেল ও ম্যাককনচির উইকেট নেন। পরের দুই ওভারে তার শিকার টিকনার ও ইয়াং।
নাসুম ও মোস্তাফিজের দ্যুতি ছড়ানোর দিনে সাকিব অবশ্য উইকেটশূন্য। অনেক কিছু করার চেষ্টায় সাকিব তালগোল পাকিয়ে উইকেটই পাননি। ফলে তার টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড হতে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
অতিথিদের ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন উইল ইয়াং। শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ৪৮ বলে ৪৬ রান করেন ৫ চার ও ১ ছক্কায়। এছাড়া দুই অঙ্কের ঘর ছুঁয়েছেন টম ল্যাথাম (২১) ও অ্যালেন (১২) ।
জয় পাওয়া ম্যাচেও বেশ কিছু প্রশ্ন থেকে গেল। প্রশ্নটা ব্যাটসমানদের ঘিরেই। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা যেভাবে দিনের পর দিন ব্যর্থ হচ্ছেন, বিশ্বকাপের আগে তাদের অফ-ফর্ম মাথা ব্যথার বড় কারণ। দায়িত্ব নিয়ে কেউই যে রান করতে পারছেন না। পারছে না দলের চাহিদা মেটাতেও।