দেশে কোনো সংকট নেই, কিন্তু বিএনপির মধ্যে সংকট রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
২৭ জুলাই বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের সমাবেশ নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগ সংঘাত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এমন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে৷ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যেদিন সমাবেশ ডাকবে সেদিন এতবড় শহরে অন্য কেউ সমাবেশ ডাকতে পারবে না এমন তো নিয়ম নেই। বিএনপি যখন সমাবেশ ডাকে জনগণ তখন আতংকে থাকে।
তিনি বলেন, সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কিংবা এর সহযোগী সংগঠনগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে-মানুষের পাশে থাকা। কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা। এটা তাদের দায়িত্ব। সে কারণেই ২৭ জুলাই ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ যৌথভাবে সমাবেশের ডাক দিয়েছে। আমরা কখনোই সংঘাত তৈরি করতে চাই না। কারণ আমরা সরকারে আছি। দেশে যদি কোনো সংঘাত সৃষ্টি হয় তবে সরকারকেই বদনাম হয়। সুতরাং আমরা সংঘাত চাই না। বিএনপিই সংঘাত তৈরি করার অযুহাত খুঁজছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, এর আগে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্বে আমরা এবং তারা বড় সমাবেশ করেছি। সেখানে কোনো সংঘাত হয়নি৷ সেখানে আমাদের দল সর্বোচ্চ সংযমের পরিচয় দিয়েছে৷ আমরা এখনো চাই বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পালন করুন৷ কিন্তু বিএনপি অতীতে সময়ে সময়ে মানুষের সহায় সম্পত্তির ওপর হামলা করেছে, পুলিশ, পথচারী, গাড়ি ভাঙচুর করেছে, আগুন দিয়েছে এবং সম্পদের ক্ষতি করেছে। আমরা সরকারি দল হিসেবে দায়িত্ববোধ থেকে ২৭ তারিখ সমাবেশ ডাকেছি।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, দেশে কোনো সংকট নেই৷ কিন্তু বিএনপির মধ্যে সংকট রয়েছে৷ তাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচন করতে চায় কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের থেকে তারা সিদ্ধান্ত পায় না৷ এটা একটি বড় সংকট৷ বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল যারা নেতাকর্মীদের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও করতে দেয় না। এমনকি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদেও নির্বাচন করতেও বারণ করছে। এটি একটি দলের অভ্যন্তরীণ সংকটেরই বহিঃপ্রকাশ অথচ তারা গণমানুষের দল হিসেবে নিজেদের দাবি করে।
মন্ত্রী বলেন, এভাবে যদি তাদের নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখা হয় তাহলে দ্রুতই দলের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটবে। এরই মধ্যে ছোটখাটো একটা বিস্ফোরণ অবশ্য ঘটেছে। নির্বাচনে তাদের দলীয় নেতা কর্মীদের অংশগ্রহণ করতে বারণ করেছিল। কিন্তু নির্বাচনে তাদের কয়েকজন নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেছেন৷ কেউ কেউ নির্বাচনে জয়ীও হয়েছেন৷ তাদের আক্ষেপ আমরা পত্র পত্রিকায় ও টিভির পর্দায় দেখেছি ও শোনেছি। আগামী সংসদ নির্বাচনে তারা যদি বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে দলের মধ্যে বড় বিস্ফোরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটার প্রভাব দেশের মানুষের মধ্যে নয়, বিএনপির মধ্যেই পড়বে। বিএনপির ভেতর থেকে তাদের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটবে।
শোকের মাসে জামায়াতের কর্মসূচির অনুমতির প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, জামায়াত ডাকতে চেয়েছে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সিদ্ধান্ত দিবে৷ শোকের মাসের ভাবগাম্ভীর্যের বিষয়টি মাথায় রেখেই আইনশৃংখলা বাহিনী সিদ্ধান্ত দিবে। জামায়াত চেয়েছে তারা চাইতেই পারে কিন্তু সব কিছু বিবেচনা করে করতে হবে।
জামায়াত এক আগস্ট বিক্ষোভ করবে সে বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা বিক্ষোভ করতেই পারে। যদি সে বিক্ষোভ সহিংস না হয় তাহলে দোষের কিছু নেই। এ বিক্ষোভ যদি অতীতের মতো বিএনপির সঙ্গে যোগ দিয়ে সহিংসতা ছড়ানোর জন্য অপচেষ্টা হয়, তাহলে সেটা বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর আমাদের দলও বসে থাকবে না।
বিএনপি বলেছে, বর্তমানে দেশে যে সংকট চলছে এ সংকট সমাধানের কোন পথ সরকার খোঁজে পাবে, এ বিষয়ে মতামত জনতে চাইলে তিনি বলেন, দেশে কোনো সংকট নেই৷ বিএনপি একটি সংকট তৈরি করতে চেষ্টা করছে কিন্তু তারা সেটি পারেনি। ২০১৪ সালেও তারা চেষ্টা করেছিল। তখনো তারা সফল হয়নি। তারা ভেবেছিল সরকার তিন মাসের মধ্যে পড়ে যাবে কিন্তু সরকার পাঁচ বছর মেয়াদ পূরণ করেছে।
২০১৮ সালে তারা চেষ্টা করেছিল। ভেবেছিল সরকার মনে হয় টিকবে না। নানা দেন-দরবার করেছিল বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের কাছে। দেশ বিদেশে লবিং করেও তারা কিছুই করতে করতে পারেনি। দেশের মধ্যে তারা কোনো সংকট তৈরি করতে পারেনি৷ বরং বিএনপির মধ্যেই সংকট ঘনীভূত হয়েছে।