চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শ্রাবন্তী সরকার নামে ১১ বছর বয়সী আরেকটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় জনমনে ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগ অনেক বেশি বেড়ে গেছে। গত মঙ্গলবার রাতে নগরীর বেসরকারি মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালে শ্রাবন্তীর মৃত্যু হয়। খবরটি বিদ্যুতের বেগে সামাজিক মাধ্যমসহ ভার্চুয়াল জগতে ছড়িয়ে পড়লে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। শ্রাবন্তী সরকার নগরীর সেন্ট স্কলাসটিকা স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে নগরীর সদরঘাটের বিশ্বজিত সরকারের কন্যা। এ নিয়ে গত বুধবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। ডেঙ্গু যতটা ভয়াবহভাবে নীরবে বিস্তার লাভ করছে, সে তুলনায় সিটি করপোরেশনসহ নগর সেবা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা একদম নেই বলেই নগরবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে। সামাজিক সংগঠন পিপলস ভয়েসের প্রেসিডেন্ট শরীফ চৌহান বলেন, দালানকোঠা, ঘরবাড়িতে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে প্রাণঘাতী ডেঙ্গু মশার জন্ম হয়—এই কথাটি প্রচারে চট্টগ্রামের সেবা কর্তৃপক্ষসমূহ দুঃখজনকভাবে নীরব। এদিকে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী সরকারের মা বিটু সরকার ও ভাই সদীপ সরকারও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নগরীর মেহেদিবাগের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের শারীরিক অবস্থা গত বুধবার পর্যন্ত স্থিতিশীল ছিল বলে পারিবারিক সূত্র জানান। সদীপ সরকার সরকারি কমার্স কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাবা বিশ্বজিত সরকার সিইপিজেডের একটি কারখানায় কর্মরত। পরিবার সূত্র আরও জানায়, গত ২৯ জুন শ্রাবন্তী সরকারের জ্বর আসে। পরদিন রক্ত পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়লেও চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় রেখেই তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। মঙ্গলবার হঠাৎ তার পেট ফুলে যায় এবং পাতলা পায়খানা শুরু হয়। সন্ধ্যার পর শ্রাবন্তীকে মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় শ্রাবন্তীর। এদিকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে নতুন করে আরও ৪৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান। আক্রান্তদের মধ্যে ৩৪ জন বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে, ১০ জন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং চার জন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৬৬১ জন ছিল। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ১২৬ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৬ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১০ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৮০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী জানান, মেডিক্যাল সেন্টার থেকে মঙ্গলবার রাতে পাঠানো প্রতিবেদনে শ্রাবণী সরকারের মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ আছে। এ হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরে মোট ১২ জনের মৃত্যু হলো। যার মধ্যে শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিন জন, জুন মাসে ছয় জন এবং জুলাই মাসে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।