ঠাকুরগাঁও পৌরসভার প্রথম নারী মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা ইতিমধ্যে ২ বছর পার করেছেন। তিনি ঠাকুরগাঁও পৌরসভাকে উন্নত ও আদর্শ পৌরসভা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ২ বছরের বিভিন্ন সাফল্যের বর্ননা দেন। ১২ মে শুক্রবার তিনি একান্ত সাক্ষাতকারে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা বলেন, জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল। সে কারনেই বারবার পৌর কাউন্সিলর নির্বাচন করেছি। সেখানে কেন জানি পরাজিত ফলাফল হলেও আমি হাল ছাড়িনি। পরে সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করি। গ্রামের মানুষ আমাকে এত বেশি ভালবেসে ভোট দিয়েছিলেন। বেশিরভাগ ইউনিয়নে আমি বিজয়ী হলেও শেষের দিকে ৫টির মত ইউনিয়নে ভোট থামিয়ে দেওয়া হয়। পরে আমি পরাজিত হই। পরে প্রতিজ্ঞা করি এর শেষ আমি দেখবো। পরে আবারও জনগনের কাছে যাওয়ার জন্য, তাদের সেবা করার জন্য আবারও কাজ শুরু করি। মাঠে থেকে, অসহায় মানুষের পাশে থেকে, তাদের উপকারে যা যা করা দরকার সেগুলো করা শুরু করি। এরপর পৌরসভার নির্বাচনের মুহুর্তের সময় কখনও ভোলার মত নয়। জেলা আ’লীগ থেকে আমাকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দিতা করতে বললে আমি ভয় পাই, কারণ আমার জনবল নাই, আমার টাকা পয়সা নাই। আমি ভয় পেয়েছিলাম যে কি হবে। তবে জনগন আমাকে চাইতো। সাধারণ মানুষজন আমাকে ভীষনভাবে ভালবাসতো। কারণ আমি অসহায়দের পাশে সবসময় থাকতাম। পরে আমি জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়ার পর দ্বিধা দন্দে ছিলাম। পরে দেখা গেছে দলীয় ফোরাম আমার সিভি ও প্রয়োজনীয় তথ্য কেন্দ্রে প্রেরন করে। তবে আমার মনে একটা প্রত্যয় ছিল যে, আপা (আ’লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আমার নামটা দেখলে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেবেন। আমি কোন তদবিরও না করলেও সত্যি সত্যি আপা আমাকে মনোনয়ন প্রদান করেন। পরে আমাকে পৌরবাসী ভালবেসে স্বত:স্ফুর্তভাবে ভোট প্রদানের মাধ্যমে নির্বাচিত করেন। পৌর মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি যখন পৌরসভায় আসি আমার খুব ভাল লাগে। কারণ এখানে কাজের মাধ্যমে শোয়াবের কাজ করারও সুযোগ আছে। মানুষের কাজ করলে আল্লাহ খুশি হউন। আমি এ কাজগুলো করতে পেরে খুব সুখি, শান্তি, ও মানুষের সেবা দিতে পারছি। যদিও কিছু যন্ত্রনা আছে, চাপ আছে বিভিন্ন ভাবে। দায়িত্বও আছে অনেক। যদি আমি মনে করি যে, এগুলো করলে অনেক কিছু হবে, তাহলে করবো। ২ বছর পার হয়েছে, এক বছর করোনা কালীণ সময় গেছে। তখনও আমি সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম। জনগন নিয়ে কাজ করেছি। উন্নয়নমূলক কাজগুলো পরের এক বছরে করেছি। সময় সময় আমি ঢাকা, মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, সচিব, জনস্বাস্থ্যের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে অনেক কাজ যোগাতে পেরেছি। এখন সময় সাপেক্ষে এ কাজগুলো হবে। রাজনৈতিক সকল নেতা যেমন ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, জেলা আ’লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষধ চেয়ারম্যান মুহ: সাদেক কুরাইশী, সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, সদর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এ্যাড. অরুনাংশু দত্ত টিটো, সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকারসহ সকলেই আমার কাজের প্রশংসা করে এভাবেই চালিয়ে যেতে বলেছেন। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন। আমি তাদেরকে বলেছি, আমরা একে অপরের পরিপূরক। পৌরসভার পক্ষ থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়েছে, এর মধ্যে পুরো শহর সৌন্ধর্য বন্ধনে বেশ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়। কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে, রাস্তার ডিভাইডারে সবুজায়নের জন্য গাছপালা লাগানো হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড গোল চত্ত্বর থেকে বালিয়াডাঙ্গী মোড় পর্যন্ত গাছগুলি লাগানো হয়েছে। টাঙ্গন নদীর উপরে এসএস পাইপ দিয়ে ঘেড়া দেওয়া হয়েছে। নতুন ড্রেন-কালভার্টের কাজ চলছে। এক তৃতীয়াংশ কাজের মধ্যে এক ভাগ কাজ হয়ে গেছে, বাকিগুলো চলামান। প্রকল্প ধরা আছে, প্রকল্পও পেয়েছি। খুব দ্রুত হবে। এলজিএসপি’র সার্ভে চলছে, জনস্বাস্থের ২০ কিলোমিটার কাজ চলছে। রাস্তা, পুকুর খনন ও বড় বড় বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় বাড়িঘর ভেঙ্গে যাচ্ছিল, সেগুলো আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি। এতে অনেকগুলো এলাকা ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেয়েছে। কাজ করতে গিয়ে সামান্য সমস্যা থাকলেও সেগুলো ওভারকাম করে চালিয়ে নিচ্ছি। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপুর্ন পরিবর্তন এনেছি। তাদের কথা চিন্তা করে তাদের সেবা দেওয়ার জন্য কিছু নীতিমালা করেছি। কিছু মার্কেট, ট্রেড লাইসেন্সসহ সব পৌর সুবিধা যাতে করে সাধারণ জনগণ খুব সহজেই পেতে পারে সে লক্ষ্যেই তাদের গড়ে তুলার চেষ্টা করছি। আমি চাইবো সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের উপকার বা সেবা দেওয়ার জন্য সরকার আমাকে সহযেগিতা করুক। আমি যেন তাদের কাছে থাকতে পারি সেটাই চাওয়া। নতুন কিছু জিনিস করেছি, এর মধ্যে শহরের গোবিন্দনগর আড়ৎ এলাকায় একটি সম্প্রীতি চত্বর বানাতে চাই। ইতিমধ্যে ডিজাইনারকে বলা হয়েছে, তারা ডিজাইন করা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শহরের আর্ট গ্যালারীতে শেখ রাসেল চত্ত্বর উদ্বোধন করা হয়েছে। সেটির কাজও হয়ে যাবে। পৌরসভা চত্ত্বরে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল করেছি। চত্ত্বরে সাধারণ বা সেবা নিতে আসা মানুষদের বসার জন্য স্থাপনা করেছি। পুরো পৌরসভা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় এনেছি। জাতির পিতার বিভিন্ন স্মৃতিকে ধরে রাখতে পৌরসভায় বঙ্গবন্ধু কর্নার, সকলের জন্য একটি ক্যান্টিন, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য একটি আধুনিক গ্যারেজ তৈরী করবো। পৌরসভার চারপাশ বাউন্ডারী দিয়ে ঘেরা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩য় তলার কাজ শুরু হয়েছে, আর কিছুদিনের মধ্যে কাজ শেষ হলে কর্মকর্তা, কর্মচারী, কাউন্সিলরসহ সেবা নিতে আসা মানুষজনের সেবা নিতে সহজ হবে। নারী মেয়র হিসেবে দেখেছি পৌরসভায় নারী সেবা গ্রহীতারা আমার কাছে আসে বিভিন্ন রকম কথা বলে। আমার ভাল লাগে। তারা আমাকে মন খুলে কথা বলে কাজ করে নিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য ২ বছর স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সকলের সহযোগিতা পেলে আগামীতে একটি উন্নত ও আদর্শ পৌরসভা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।