ফরিদপুরের মধুখালীতে এক সময় পাটকাঠি অবহেলার পণ্য হলেও বর্তমানে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির আশীর্বাদে বহু ক্ষেত্রে পাটকাঠির ব্যবহার বেড়েছে। যার ফলে দিন দিন বাড়ছে পাটকাঠির কদর। এতে করে শুধু পাট আঁশ নয়, পাটকাঠিতেও কৃষকরা দেখছেন আশার আলো। সোনালী আঁশের সঙ্গে কদর বেড়েছে পাটকাঠিরও। বাড়ি, পাকা সড়ক, মাঠ-ঘাট যেখানে চোখ যায় সেখানেই চোখে পড়ে পাটকাঠি শুকানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় জ্বালানি, পার্টিকেল বোর্ড ও পাটকাঠি পুড়ে ছাই এবং পানের বরজ তৈরিতে। উপজেলার কৃষকেরা পাট বিক্রি করে যেমন লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে পাটকাঠি বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া বেশিরভাগ বাড়িতে জ্বালানি হিসেবে বেশ নাম-ডাক রয়েছে পাটকাঠির। বেশ কিছু মানুষকে পাটকাঠি শহরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেও দেখা যায়। মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি পাটখড়ির আঁটি বেঁধে রোদে শুকাতে দিয়েছেন কৃষকেরা। ভালোমতো শুকিয়ে গেলে কৃষকদের বাড়ি থেকেই কিনে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। তারা পাটকাঠি কৃষকদের কাছ থেকে মোটামুটি দামে কিনে ভ্যানে করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন। এতে করে বাড়তি আয় করছেন অনেকেই। বাড়িঘর, সবজি ক্ষেতের বেড়া, মাচা, পান-বরজ ও বিভিন্ন হস্তশিল্পভিত্তিক পণ্য তৈরির কাজে পাটকাঠির আলাদা ব্যবহার লক্ষ করা যায় আগে থেকেই। কিন্তু বর্তমানে ব্যাপক হারে পার্টিকেল বোর্ড, রং তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে পাটকাঠি। বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাট কাঠি আগের মতো অবহেলায় ফেলে না রেখে যত্ন করে শুকিয়ে মাচা তৈরি করে রাখছেন বিক্রির জন্য পাট চাষিরা। আবার অনেকেই এখন পাটকাঠির ব্যবসা করে জীবিকা নিবার্হ করছেন। স্থানীয়রা জানান, পাটকাঠি কোথাও আবার পাটখড়ি নামেও পরিচিত। আগে পাটকাঠির ব্যবহার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছিল শুধু জ্বালানি হিসেবে। আর কিছু ভালো মানের পাটকাঠি বিভিন্ন উপজেলা ও জেলায় পানের বরজের আর ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন আর মূল্যহীনভাবে পড়ে থাকে না পাটকাঠি। অনেক কৃষক পাটের দাম খুব একটা ভালো না পেলেও পাটকাঠির দাম দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের কৃষক রফিকের সাথে কথা হয় তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর আগেও পাটকাঠির তেমন চাহিদা ছিল না। কিন্তু এখন বেশ চাহিদা। দূর দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাটকাঠি কিনছেন, ভালো দামও দিচ্ছেন। মেপে এক হাত দড়ি দিয়ে এক আটি পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। শুধু পাট বিক্রি করেই নয়, এবার পাটকাঠিও কৃষকের আশা জাগিয়েছে । তিনি আরও বলেন পাটকাঠি আমাদের গ্রামঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। মাটির চুলায় রান্নার প্রধান জ্বালানি হিসেবে পাটকাঠির ব্যবহার করি । আবার আমরা মিলে বিক্রি করি সেখানে মেশিনের সাহায্যে ছাই তৈরী করে বিদেশে রপ্তানী করা হয়। । মধুখালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র থেকে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ৮ হাজার ৬ শত ১০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে সবই প্রায় বিভিন্ন জাতের পাট।