গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ আলাউদ্দিন এর নামে দূর্নীতি ও প্রতারণার অভিযোগ করেছেন ফোরাদ হোসেন নামের এক ইটভাটার ব্যবসায়ী। এছাড়াও বেপরোয়া এই পিআইও আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অফিসে বসে ধূমপান, সাংবাদিক ও ইউপি চেয়ারম্যানকে শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ী ফোরাদ হোসেনের সাথে সদ্য ঘটে যাওয়া প্রতারণার ঘটনায় গত ২৭ ও ২৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, গোপালগঞ্জ জেলা দূর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক ও প্রেসক্লাব এর সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত ভাবে এ অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগকারী ফোরাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, দুর্নীতিগ্রস্থ ও প্রতারক পিআইও আলাউদ্দিনের অনিয়ম তুলে ধরে অভিযোগ করায় আমার নিজের জীবন নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছি। অভিযোগ তুলে নিতে প্রতিদিন আমাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও তার পক্ষের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ পত্রের বর্ণনা থেকে জানা যায়, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ আলাউদ্দিনের মাধ্যমে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থ বছরে মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণের জন্য ফোরাদ হোসেনের মালিকানাধীন ইটের ভাটা থেকে ইউএনও এর নির্ধারণ করা মূল্যে নগদ ও বাকিতে ইট সরবরাহ করেন। যার হিসাব-নিকাশ ২০২২-২৩ অর্থ বছরে অফিসিয়াল ভাবে শেষ হয়। কিন্তু মাদকাসক্ত, দূর্নীতি বাজ ও প্রতারক পিআইও আলাউদ্দিন দুই বছরের ইট বিক্রয়ের লভ্যাংশের কমিশন নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। ব্যবসায়ী ফোরাদকে ১০লক্ষ টাকা ধার দেওয়ার মন গড়া গল্প সাজায়। গত ৯ আগস্ট তার অফিসের কার্য-সহকারী মোঃ কামরুল ইসলাম এর ০১৭১০৫২২১৫৪ মোবাইল নম্বর থেকে ফোরাদ হোসেনকে ফোন করে ১০ লক্ষ টাকা ফেরত চান। ফোরাদ টাকা ধার নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলে পিআইও আলাউদ্দিন অকাথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, আমি তোর কাছে ধারের টাকা পাবো ১০ লক্ষ। তোর পুরো ১০ লক্ষ টাকাই দিতে হবে। যদি ভালোভাবে টাকা না দিস তোর চেহারা পাল্টে যাবে। এভাবে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ৪-৫ মিনিট কথা বলে ফোন কেটে দেন। এরপর থেকে প্রতিনিয়ত ঐ ব্যবসায়ী কে গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন চিহ্নিত মাস্তান ও রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে ফোনে ও সরাসরি ভয়-ভীতিসহ বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। অভিযোগে আরো জানা যায়, প্রভাবশালী এই পিআইও দীর্ঘদিন ধরে গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ ও নিজ দপ্তরের বড় বড় কাজের ঠিকাদারি করছেন। কৌশল হিসেবে তিনি বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স এর নাম ব্যবহার করে আসছেন। এছাড়াও পিআইও আলাউদ্দিন ২০২০ সালে মুজিব বর্ষের ঘর তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছিল। তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তার দূর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর একাধিক তদন্ত হলেও আলাউদ্দিনের দূর্নীতির চেরাগ কেউই নিভাতে পারেনি। অবৈধ টাকার গরমে উল্টো বেড়েছে তার নারী নেশা ও মাদক সেবনের আড্ডা। দুই বছর আগে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিজ দপ্তরের পিয়ন আলী আহাম্মদ শিকদারের সুন্দরী স্ত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগে গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও তার মাস্তান বাহিনীর সহায়তায় ভিকটিম পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করে ৮ লক্ষ টাকা জরিমানা দিয়ে মামলার দফারফা করেন। গোপালগঞ্জ জেলা জুড়ে জনশ্রুতি আছে পিআইও মোঃ আলাউদ্দিন প্রথমে কাশিয়ানী ও পরে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় এসে অবৈধভাবে সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ ও চেয়ারম্যান – মেম্বরদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। যা তিনি গোপালগঞ্জ ও নিজ জেলা কুষ্টিয়ায় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন ও ব্যবসায়ী বন্ধুদের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। ঢাকায় কিনেছেন ফ্লাট, কুষ্টিয়ায় রয়েছে একাধিক প্লট ও গ্ৰামে কিনেছেন প্রচুর পরিমাণে কৃষি জমি। তার নামে বে-নামে রয়েছে একাধিক ব্যাংক একাউন্ট। এছাড়াও স্ত্রী সন্তান ও নিজ নামে রয়েছে বড় অংকের ফিক্সড ডিপোজিট। দূর্নীতি দমন কমিশন গোপালগঞ্জ জেলার উপ-পরিচালক মোঃ মশিউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ব্যবসায়ী ফোরাদ হোসেনের কাছ থেকে এধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। এটি ঢাকা হেড অফিসে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আলাউদ্দিন এর কার্যালয়ে গেলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।