প্রিয়াঙ্কা নস্করের সঙ্গে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের এক যুবকের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর ভারত থেকে অবৈধভাবে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে দালালের সহযোগিতায় বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন। সেই সময় তিনি মহেশপুর বিজিবি-৫৮ সদস্যদের হাতে আটক হন।
আটকের পর তাকে ঝিনাইদহ জেলা আদালতে হাজির করলে আদালত ২ বছরের সাজা প্রদান করেন।
দুই বছর সাজা ভোগ শেষে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টম্বর) দর্শনা সীমান্ত চেকপোস্টের শূন্যরেখায় বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে ফেরত দেওয়া হয়।
প্রিয়াঙ্কা নস্কর ভারতের হাওড়া জেলার শ্যামপুর থানা গোপীনাথপুর গ্রামের প্রতাব নস্করের মেয়ে।
দুই দেশের পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেন- বিজিবির দর্শনা সীমান্ত আইসিপি ক্যাম্পের কমান্ডর সুবেদার মোস্তফা মিয়া, ইমিগ্রেশন ইনচার্জ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমান, কাস্টমস ইন্সপেক্টর কাবিল সাদিক, দর্শনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফাহিম হাসান ও ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের একটি দল।
ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- বিএসএফর গেদে ক্যাম্প কমান্ডার এসি তাপশসর, ইমিগ্রেশন ইনচার্জ সঞ্জীব কুমার, কাস্টমস কর্মকর্তা আরপি জাদব, কৃষ্ণগঞ্জ থানা উপ-পরিদর্শক (এসআই) তন্ময় দাস ও এনজিও কর্মী চিত্তরঞ্জন রায় প্রমুখ।
আদালতে নেয়া হলে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দু’বছরের জেল হয় প্রিয়াকার। এরপর ২৩ মাস ছিল ঝিনাইদহ কারাগারে।
দর্শনা সীমান্তে প্রিয়াংকা বলেন, ‘সে ভুল করেছে। প্রেম করে বাংলাদেশে যে ছেলের কাছে আসতে গিয়ে ধরা পড়ে, কারাগারে যাওয়ার পর সে কোনদিন খোঁজ নেয়নি। তাকে ভুলে গেছে। জীবন থেকে দু’বছর ঝরে গেল। তার মতো ভুল যেন কোনো মেয়ে না করে।’
প্রিয়াংকার বাবা প্রতাব নস্কর ও মা তনুশ্রী নস্কর মেয়ে নিতে এসেছিলেন দর্শনা সীমান্তে। এ সময় মেয়েকে ফিরে পেয়ে বুকে নিয়ে হাউ-মাউ করে কেঁদে ওঠেন।
মা তনুশ্রী জানান, দু’বছর মেয়েকে হারিয়ে কত কষ্ট ছিলাম। রাতে ঘুমোতে পারিনি। আমার মেয়ে ভুল করেছে।
প্রিয়াংকার বাবা প্রতাব নস্কর বলেন, ‘মেয়ে হারিয়ে যাওয়ার কোন খোঁজ পায়নি। ৮ মাস আগে বাংলাদেশ থেকে একজন মোবাইল করে জানায় মেয়ে ঝিনাইদহ কারাগারে আছে। দুটি বছর বাংলাদেশের কারাগারে আমার মেয়ে ভালছিল। আজ দু’দেশের সরকারের মাধ্যমে আজ মেয়েকে ফিরে পেলাম। যারা আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিল আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’
পশ্চিমবঙ্গের এনজিও কর্মী চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘মেয়েটির বয়স অল্প। সে ভুল করেছে। এ রকম ভুল যেন কেউ না করে। এ জন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।
ঝিনাইদহ কারাগারের ডেপুটি জেলার তানিয়া বলেন, ‘প্রিয়াংকা প্রায় দু’বছর আমাদের কারাগারে ছিল। সে ভদ্র মেয়ে। আমরা তাকে যতদুর পারি কারাগারে ভাল রেখেছিলাম। আজ তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিতে পেরে আমরা খুশি।’