সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বাহারী রঙ্গের রঙ্গিন মাছের স্বপ্নে বিভোর হয়ে শখের বসেই হাত খরচের টাকা দিয়ে কয়েকটি রঙ্গিন মাছ কিনে বর্তমানে কয়েকজনের কর্মসংস্থানসহ গড়ে মাসিক ৫০ হাজার আয় করছেন মো: মুছাদ্দিক মন্ডল রাহাত নামে এক যুবক। তবে এ বাহারী রঙ্গিন মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকা স্বত্ত্বেও আরো ব্যপক পরিসরে করার ইচ্ছা থাকলেও আর্থীক সংকটের ফলে পারছেনা তিনি। তবে সরকারী ভাবে কোন সহযোগিতা পেলে রাহাতের এ রঙ্গিন মাছের ব্যবসা যেমন দেশের আর্থিক জিডিপির হার বাড়বে, তেমনি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বিশ^ বাজারেও এর প্রভাব ব্যাপক আকারে সাড়া পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। রাহাত ফরিদপুর সদর উপজেলার ৬নং মাচ্চর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দয়ারামপুর গ্রামের মো: মিজানুর রহমান মন্ডলের পুত্র। বর্তমানে রাহাত ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি রঙ্গিন মাছের চাষ করে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে ইতিমধ্যে জাতীয় মৎস সপ্তাহ ২০২৩ এ ফরিদপুর মৎস অধিদপ্তর কর্তৃক সম্মাননা স্মারকে ভূষিত হন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোয়েকাপ, গোল্ড ফিস, জেবরা, কমেটসহ ৪ প্রজাতির রঙ্গিন মাছ নিয়ে ৩ একর জমির উপর চাচা ও বাবার সমষ্টিগত পারিবারিক ৪ টি পুকুর ও ৫০ টি চৌবাচ্চা নিয়ে গড়ে তুলেছেন আর এম অর্নামেন্টাল ফিস জোন নামে একটি ফার্ম। তার এ ফার্মে অন্তত ৫ থেকে ৭ জন লোক কাজ করছে। এ ছাড়াও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তার প্রতিষ্ঠানটি পুরো সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা সহ এ ফিস জোনে রয়েছে হাউস, অক্সিজেন সরবরাহকারী মেশিন, মটর ও অন্যান্য নানা উপকরণ। এ বিষয়ে তরুন উদ্যোক্তা মো: মুছাদ্দিক মন্ডল রাহাত জানান, স্কুলে পড়া অবস্থায় বাবার দেওয়া হাত খরচের টাকা দিয়ে শখের বসেই কয়েকটি রঙ্গিন মাছ কেনার পর থেকে ধীরে ধীরে মাছের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে ১৫০০০ মাছ উৎপাদন হচ্ছে। মাছ গুলি ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি হলে তা দেশের অন্তত ২৫ থেকে ৩০ টি জেলায় প্রতিনিয়তই বিক্রি করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ঢাকায়। বর্তমানে সর্বচ্চো ৪ থেকে সাড়ে ৪ কেজি ওজনের কৈকাপ মাছ তার পুকুরে রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে গোল্ড ফিস ব্যাপক পরিসওে করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। তিনি জানান, এ ধরনের রঙ্গিন মাছের চাহিদা আমাদের দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ পর্যন্ত আমার ফার্মে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। যা পরিবার, আত্মীয় স্বজনসহ অধিক সুদে ঋন নিয়ে এ ফার্মটি দাঁড় করেছি। তবে আমার আর্থীক অসচ্ছলতার কারনে ক্রেতাদের চাহিদামত মাছ সরবরাহ করতে পারছিনা। পুকুরে গ্যাস সৃষ্টি হয়ে ইতিমধ্যে আমার প্রায় ৪ প্রায় লাখ টাকার মাছের ক্ষতি সাধন হয়েছে। যদি সরকারি ভাবে কোন সাহায্য-সহযোগিতা পেলে আমার ফার্ম আরো বড় করতে পারব। একই সাথে অধিক মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি হবে। এদিকে রাহাত মন্ডল একজন সফল উদ্যোক্তা আখ্যা দিয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মোছা: শিরীন শারমিন জানান, এ ধরনের মাছ চাষ করে তরুন রাহাত এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমি তার ফিস জোন পরিদর্শন করেছি। যদিও এ ধরনের মাছ চাষের বিষয়ে আমাদের তেমন কোন প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থা না থাকলেও রাহাতকে এ মাছ চাষের বিষয়ে মৌখিক ভাবে পরামর্শ দিয়েছি। এ ছাড়াও তাকে আর্থীক সহযোগিতা করতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। একই সাথে যে কোন পরামর্শ বা তার প্রয়োজনে ফরিদপুর সদর উপজেলা মৎস অফিস সর্বদা পাশে থাকবে।