নাগেশ্বরীতে বংশ পরম্পরা টিকিয়ে রাখতে ৫১ বছর ধরে ঘানিতে খাঁটি সরিষার তেল উৎপাদন করছেন মজিবর রহমান। জিইয়ে রেখেছেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। রামখানা ইউনিয়নের আস্করনগর ব্যাপারীটারী গ্রামে মজিবর রহমানের বাড়ি। আধভাঙ্গা দো-চালা একটি টিনের ঘরে ঘর-ঘর-ক্যাঁচ-ক্যাঁচ শব্দে ঘুরছে কাঠের তৈরি ঘানি। ফোটায় ফোটায় চুইয়ে পড়ছে বিশুদ্ধ সরিষার তেল। গরুর পরিবর্তে ঘানি টানছে চোখ বেঁধে দেওয়া একটি ঘোড়া। নিজে পাটাতনে বসে প্রয়োজনীয় ভর দিচ্ছেন মালিক। দিনশেষে সঞ্চিত তেল নিয়ে বাজারে গিয়ে পসরা সাজিয়ে বসবেন। বাইরে দাঁড়িয়ে কয়েকজন মানুষ। কেউ এসেছেন তেল কিনতে, কেউ এসেছেন সরিষা ভাঙ্গিয়ে তেল বের করে নিতে। ঘরের দুয়ারে খাঁটি তেলের ঘানি। চারিদিকে যখন অবিশ্বাস আর ভেজালে সয়লাব, তখন সবকিছু চোখের সামনেই হয়। কালচে সোনালী রঙ্গের ফোটায় ফোটায় তেলের সাথে বের হয় বিশ্বাস। শুধু তাই নয় একমাত্র কোলপ্রেস পদ্ধতিতে কাঠের তৈরি ঘানিতে ভাঙ্গানো সরিষার তেলেই অক্ষুণ্ণ থাকে স্বাস্থ্যমান। এই তেলে রয়েছে অনেক প্রয়োজনীয় ও পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান। যারা এর সঠিক গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তারা এখনো ঘানিতে ভাঙ্গা সরিষার তেল ব্যবহার করেন। তাই মজিবরের ঘানিতে উৎপন্ন তেলের চাহিদা ব্যাপক। আনিছুর রহমান, কামাল হোসেন, প্রদীপ সরকার, মিজানুর রহমানসহ অনেকেই জানান, শুধু পুষ্টিগুণেই নয় ঘানিতে ভাঙ্গানো সরিষার তেলে যে কোন ভর্তার স্বাদ জুড়ি মেলা ভার। রান্না ও গায়ে মাখার জন্যও তারা এ সরিষার তেল ব্যবহার করেন। খাঁটি সরিষার তেলের এ যোগান দিতে মজিবর রহমান টানা ৫১ বছর ধরে ঘানিতে তেল উৎপাদন ও বাজারে বিক্রি করে আসছেন। কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধিতেও তেমন একটা প্রভাব পড়েনি এতে। বাজারে সরিষার দাম বাড়ায় উৎপাদিত তেলের দাম বাড়িয়েছেন। উৎপাদন খরচ বাদে কিছু লাভ রেখে প্রতি কেজি সরিষার তেল তিনি ৪শত ২০ থেকে সাড়ে ৪শত টাকায় বাজারে বিক্রি করেন। অনেকে সরিষা ভাঙ্গাতে আসলেও তিনি তা চুক্তিতে করে দেন। এক কেজি তেল উৎপাদনে কি পরিমাণ সরিষা ভাঙ্গাতে হয়? জানতে চাইলে তিনি জানান, ৩ কেজি সরিষা ভাঙ্গিয়ে পাওয়া যায় ১ কেজি সরিষার তেল। বাড়তি খৈলে ভাল দাম পাওয়া যায়। বাজারে যতদিন এর চাহিদা থাকবে ততদিন তিনি এ কাজ করে যেতে চান।