ইফতাররের আইটেম গুলোর আর্কষন বাড়াতে দেদারসে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃত্রিম রং ও ক্ষতিকারক কেমিক্যাল।
অধিকাংশ স্হানে রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় পুরনো তেল ব্যবহার করে ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ইফতারের নানা খাদ্যসামগ্রী। মূলত ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ভাজাপোড়া ইফতার সামগ্রীতে বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ রঙ দেয়া হয়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রমজান মাসে সারাদিন রোজা রেখে এমন অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব খাবার পরিপাকতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। লোভনীয় খাবার পরিত্যাগ করে ঘরের তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তারা।
ইফতারকে কেন্দ্র করে রোজার প্রথম দিন থেকেই প্রতিটি অলিগলিতে বসেছে নানান খাদ্যসামগ্রীর এমন দোকান। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বেগুনি, আলুরচপ ও ভাজা সামগ্রীতে বেসনে অতিরিক্ত পরিমাণে বেকিং পাউডার ও বেকিং সোডা ব্যবহার করা হচ্ছে। যার কারনে এসব ইফতার সামগ্রী হচ্ছে মুচমুচে। টাটকা রাখতে ভোজ্য তেলের সাথে মেশানো হয় পোড়া মবিলও।
একই তেল বার বার ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও পঁচা-বাসীসহ বিভিন্নভাবে ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যের ব্যাপকতা বেড়েই চলেছে।
আপেল, মাল্টা, আঙুরসহ প্রায় সকল ফলে ফরমালিন এবং মুড়িতে ক্ষতিকর রাসায়নিক, সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব আলুর চপ, বেগুনী, পিয়াজু, চিকেন ফ্রাইসহ নানা ধরনের ভাজাপোড়া খাবার রোজাদাররা প্রতিনিয়ত কিনছেন এবং তা দিয়েই ইফতার সারছেন।
ভোক্তা অধিকার সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ভোক্তার নিরাপদ ও ভোজালমুক্ত খাদ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে। শিশু খাদ্য থেকে শুরু করে ফল-মূল, শাক-সবজি, মাছ- মাংসসহ প্রায় সব ধরনের খাবারে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়। বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ আন্দোলন কর্মী ও ভোক্তা অধিকার কর্মীদের বক্তব্যে এবং সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বাজারে মৌসুমী ফলে ফরমালিন পরীক্ষার ফলাফলে বিষাক্ত খাদ্যের ব্যাপকতার যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা রীতিমত আতঙ্কজনক।
জানা যায়, একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ইফতারের জন্য অপরিহার্য পাঁচটি সামগ্রী ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, মুড়ি ও জিলাপিতে নানাভাবে ভেজাল মিশাচ্ছেন। মুড়ি আকারে বড় ও সাদা করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্যানারির বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড। বিষাক্ত এই পদার্থটি মূলত চামড়া শোধনের জন্য ট্যানারি শিল্পে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও রাসায়নিক পদার্থটি কাপড়ের মিলে সাদা রঙ করতে ব্যবহার করা হয়। ব্যবসায়ীরা মুড়ি ভাজলে তা লাল হয়। লাল মুড়ি ক্রেতারা পছন্দ করেন না অজুহাতে এই রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে মুড়িতে। এই পদার্থটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
আন্তর্জাতিক খাদ্য আইনে উল্লেখ করা হয়েছে, খাবারে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফুড কালার বা খাবারের রং ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু যেহেতু ফুড কালার অনেক ব্যায়বহুল তাই বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুতকারীরা খুব কমদামি কাপড়ে ব্যাবহৃত রং খাবারে মিশিয়ে থাকে।
রংপুর কাচারি বাজারে ইফতার কিনতে আসা আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান,
‘একদিকে ভেজাল অন্যদিকে চড়া দামের কারণেও হতাশ। এসব ইফতার সামগ্রীর মান নিয়ন্ত্রণ ও ভেজাল প্রতিরোধে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ চাই।’
রংপুর হোটেল রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফাল্গুনি হোটেল অ্যান্ড রেস্টেুরেন্টের স্বত্বাধিকারী ইব্রাহিম হক ব্যাপারি জানান, আমরা মিটিং করে ইফতার সামগ্রী বিক্রেতাদের বলে দিয়েছি ফুড গ্রেড কালার ছাড়া অন্য কোনো রঙ খাদ্যে ব্যবহার করা যাবে না। কেউ যদি করে সেটির দায় তাদের নিতে হবে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা জানালেন, রমজান মাস উপলক্ষে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও ফরমালিকমুক্ত ফল সরবরাহ নিশ্চিত করে খাদ্যদ্রব্য ভেজাল রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোনো ব্যবসায়ীর সরবরাহকৃত খাদ্যে ভেজাল থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক নবচেতনার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন