সার্ভারে অবৈধভাবে প্রবেশ করে ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের ঘটনায় আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। গ্রেপ্তারকৃতরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসে হোয়াটস অ্যাপে যুক্ত হয়ে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি করছিল। এদের মধ্যে তিনজন ‘হ্যাকার’ বলে দাবি পুলিশের।
গত ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম, নড়াইল, ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় টানা অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)-র কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মো. লিয়াকত আলী খান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মো. সাগর আহমেদ জোভান (২৩), শেখ সেজান (২৩), মেহেদি হাসান (২৩), শাকিল হোসেন (২৩) ও মাসুদ রানা (২৭)। এদের মধ্যে শেখ সেজান, শাকিল হোসেন ও মাসুদ রানা ভুয়া জন্ম নিবন্ধন হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে করে দিত বলে তথ্য দিয়েছে সিটিটিসি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইতঃপূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া জহির ও মোস্তাকিমের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে সিটিটিসি ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের মুরাদপুর থেকে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি চক্রের অন্যতম হোতা মো. সাগর আহমেদ জোভানকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, নড়াইল থেকে হ্যাকার শেখ সেজান, সিরাজগঞ্জ থেকে শাকিল হোসেন ও গাজীপুর থেকে মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ঢাকার কলাবাগান থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জন্ম নিবন্ধন অফিসের সরকারি সীল ও অফিসপ্যাডসহ মেহেদি হাসানকে গ্রেফতার করা হয়।
সিটিটিসি উপ-কমিশনার মো. লিয়াকত আলী খান বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতির ঘটনায় ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে আমরা জোভানের খোঁজ পাই। যে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতিতে জড়িত অনেকগুলো চক্রের মধ্যে একটির প্রধান। মূলত অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে জোভান পুরো দেশে একটি চক্র গড়ে তোলে। চট্টগ্রাম, নড়াইল, ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় এক একটি গ্রুপে ৩০ থেকে ৪০ জনের দল এই জালিয়াতিতে জড়িত।
এপর্যন্ত পুলিশের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ইউনিট অনলাইন ও অফলাইনে সক্রিয় অন্তত ৩০টি চক্রের বিষয়ে জানতে পেরেছে। এরা অন্যের আইডি, পাসওয়ার্ড হ্যাক বা ব্যবহার করে অন্তত পাঁচ হাজার জাল জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে। মূলত দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর দীর্ঘসূত্রিতার সুযোগ নিয়ে এসব চক্র ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকায় এসব জাল জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে মানুষকে প্রতারিত করছে, বলেন মো. লিয়াকত আলী খান।
সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘যাদের আমরা হ্যাকার বলছি তাদের কারোরই তেমন কোনো ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। অনেকে কম্পিউটার অপারেটর বা স্টুডিও পরিচালনা করেন। কিন্তু জাল জন্ম নিবন্ধন কাজে জড়িয়ে তারা এ বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে উঠেছেন বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। তিনজন হ্যাকারই জাতীয় জন্ম নিবন্ধন সার্ভারে অবৈধভাবে প্রবেশ করে জাল জন্ম নিবন্ধন করেছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তাদের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত ডিজিটাল আলামতও জব্দ করা হয়েছে’।
গত ৮ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নগরীর ৬টি ওয়ার্ডে ৭৯৭টি ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের প্রমাণ পাবার তথ্য দেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা, ১৪ নম্বর লালখান বাজার, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা এবং ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে এসব জালিয়াতির ঘটনায় তিনটি মামলা ও একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়।
নগরীর খুলশী থানায় দু’টি ও হালিশহর থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলা তদন্ত করছে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এসব মামলায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বরখাস্ত হওয়া কর্মচারী জয়নাল আবেদিনসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছিল সিটিটিসি। সর্বশেষ পাঁচজনসহ এ ঘটনায় মোট গ্রেপ্তার করা হলো ১২ জনকে।