প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফায়ার ফাইটাররা জীবন বাজি রেখে মানুষের কল্যাণ করে। একটি মহৎ কাজে তারা নিয়োজিত রয়েছেন। কাজেই ফায়ার সার্ভিসের প্রত্যেক সদস্যই দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে প্রতীয়মান। তাই আমরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে সম্পূর্ণ সক্ষমতার সঙ্গে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিরপুরের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২২’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, সেবার ক্ষেত্র এবং কর্তব্যরতদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগুন লাগলে, ভূমিকম্প অথবা ভবন ধসে পড়লে বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসই সবার আগে ছুটে যায়। এমনকি কোনো জাহাজ বা লঞ্চ দুর্ঘটনায় পড়লেও ফায়ার সার্ভিসকেই আমরা পাই। তাই তাদের আরো যুগোপযোগী করা একান্ত প্রয়োজন। আমরা সেই পদক্ষেপই নিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠার যে ঘোষণা আমরা দিয়েছিলাম তা এখন শেষ পর্যায়ে। যারা এই কাজে সম্পৃক্ত তারা যেন উন্নতমানের প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি পান সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সেবার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ উন্নত, আধুনিক, প্রযুক্তি সুবিধা সম্বলিত বিশ্বমানের অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছি। বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার ৬৮ মিটারের লেডার সম্বলিত টিটিএল গাড়ি ফায়ার সার্ভিসের বহরে যোগ করেছি। ৬৮ মিটারের ৫টি গাড়ি ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া এ অর্থবছরেই ১১টি টার্নটেবল লেডার (টিটিএল) ক্রয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২টি রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং ভেহিকেল দেওয়া হয়েছে। নদীপথে সক্ষমতা বাড়াতে ২৪টি রেসকিউ বোট ও ১০টি ফায়ার ফ্লোট কেনা হয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, লিঙ্গ সমতা দূর করতে ‘ফায়ারম্যান’ পদের নাম ‘ফায়ার ফাইটার’ করা হয়েছে। পরিদর্শকের সংখ্যা ৫০ থেকে ২৬৮, ডুবুরির সংখ্যা ২৫ থেকে ৮৫, অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা ৫০ থেকে ১৯২, আগুন নেভানোর পানিবাহী গাড়ি ২২৭ থেকে ৬১৭ এবং ফায়ার পাম্প ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৪৬টিতে উন্নীত করা হয়েছে। আগে ফায়ার সার্ভিসের কেমিক্যাল টেন্ডার, ব্রিদিং টেন্ডার, ফোম টেন্ডার, হ্যাজমেট টেন্ডারের মত বিশেষ ধরণের কোনো গাড়ি ছিল না। আমরা এ ধরণের ৩৫টি বিশেষায়িত গাড়ি প্রদান করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পূর্ণাঙ্গ রেশন ও ঝুঁকিভাতা দেওয়া হয়েছে। অপারেশনাল কর্মীদের জন্য ৩ রঙের মর্যাদাপূর্ণ কমব্যাট পোশাক প্রবর্তন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পদকের সংখ্যা ও সম্মানী বৃদ্ধি করা হয়েছে। উদ্ধার কাজের সুবিধার্থে জার্মানির তৈরি ৩টি জাম্বু কুশন হস্তান্তর করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে ২০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছি। আরো ২০ কোটি টাকা দেওয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সারা জীবন আগুন ও ধোঁয়ায় কাজ করতে হয় বিধায় এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অনেকেই অবসর বয়সে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হন। এ কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আজীবন রেশন দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। এ প্রতিষ্ঠানের জনবল ৩০ হাজারে উন্নীত করার কাজও হাতে নেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সীতাকুণ্ডের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৩ জন অগ্নি বীরের পরিবারসহ ৪৫ জন দমকল কর্মীর হাতে ৪টি কাটাগরিতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স পদক-২০২২ তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।