বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ১৯৯ রানে আউট হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন লংকান ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। সব মিলিয়ে বিশ্বের ১২তম ব্যাটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র এক রান আগে থামেন তিনি। এতেই ৩৯৭ রানে শেষ হয় শ্রীলংকার ইনিংস। আর ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের নাইম।
সোমবার চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনের শেষভাগে চান্দিমালের পর একই ওভারে নতুন ব্যাটসম্যান নিরোশান ডিকওয়েলাকে ফেরান নাঈম। আগের দিনের প্রথম সেশনের মতো এই অফ স্পিনারের কল্যাণে স্বস্তির দেখা পেলেও অপ্রতিরোধ্য ম্যাথিউস।
মুমিনুল হকের দল সুযোগ অবশ্য পেয়েছিল দিনের শুরুতে। ১১৪ রানে দিন শুরু করা ম্যাথিউসকে ফেরানো যেত ১১৯ রানে। সেটি ছিল দিনের চতুর্থ ওভার। খালেদ আহমেদের লেংথ বলে খোঁচা মারেন ম্যাথিউস। তবে বাংলাদেশ দলের কেউই বুঝতে পারেননি ম্যাথিউসের ব্যাট ছুঁয়ে বল জমা পড়ে কিপার লিটন দাসের হাতে। একটুর জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি ভেবে হতাশা প্রকাশ করলেন বোলার-কিপার। পরে রিপ্লেতে দেখা গেছে ম্যাথিউসের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে লিটনের গ্লাভসে গিয়েছিল বল।
৪ উইকেট হারিয়ে ২৫৮ রান নিয়ে দিন শুরু করা শ্রীলংকার হয়ে ৩৪ রানে অপরাজিত থেকে ব্যাটিংয়ে নামেন চান্দিমাল। প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ দলকে পেলে যেন আরো ঝলসে ওঠে তার ব্যাট। দেখেশুনে খেলে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের ২১তম ফিফটি তুলে নেন এই ডানহাতি। বাংলাদেশের বিপক্ষে চান্দিমালের এটি তৃতীয় ফিফটি। তবে মনোযোগে চিড় ধরে তার। যখন মনে হচ্ছিল, উইকেট শূন্য থেকে এই সেশন পার করবে স্বাগতিকরা, তখন নাঈমের মাধ্যমে রীতিমত নিজের উইকেটটি উপহার দেন চান্দিমাল।
ইনিংসের ১১৪তম ওভারে অফ স্পিনার নাঈমকে রিভার্স সুইপ করতে চেয়েছিলেন চান্দিমাম। বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হন। রিভিউ নিয়েছিলেন, তবে কাজে আসেনি। ২ চার ও ৩ ছয়ে ১৪৮ বলে ৬৬ রান করেন চান্দিমাল। তার আউটে ভেঙে যায় ম্যাথিউসের সঙ্গে ১৩৬ রানের জুটি। একই ওভারে ডিকওয়ালাকে বোল্ড করে সাজঘরের পথ দেখান নাঈম। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে আসে ৩ রান। এটি ইনিংসে নাঈমের চতুর্থ শিকার।
এই সেশনে এ দুটি উইকেটই হারিয়েছে শ্রীলংকা । তবে অন্যপ্রান্তে দুই উইকেট হারালেও টলানো যাচ্ছে না ম্যাথিউসের ব্যাট। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিটাকে দেড়শর দিকে টিনে নিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশন শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে লংকানদের সংগ্রহ ৩২৭ রান।
লাঞ্চ বিরতির পরও চাপ ধরে রাখল বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই দলকে দুটি উইকেট এনে দিলেন সাকিব আল হাসান। রমেশ মেন্ডিসের স্টাম্প এলোমেলো করার পরের বলেই লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে এলবিডব্লিউ করে ফেরালেন বাঁহাতি এই স্পিনার।
ওভারের দ্বিতীয় বলটি জোরের উপর করেন সাকিব। নিচু হয়ে যাওয়া সোজা বল ব্যাটে খেলতে পারেননি রমেশ। বোল্ড হয়ে যান ১ রান করে। পরের বলটি হালকা ভেতরে ঢোকে বাঁহাতি এম্বুলদেনিয়ার জন্য। কিন্তু ব্যাটে বল লাগাতে পারেননি তিনি। জোরাল আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের সঙ্গে কথা বলে রিভিউ নেন ব্যাটসম্যান। ইমপ্যাক্ট ছিল আম্পায়ার্স কল, তাতে টিকে থাকে রিভিউ, তবে ফিরে যেতে হয় ব্যাটসম্যানকে।
পরের ওভারে দেড়শতে পার রাখেন ম্যাথিউস, ২৯৩ বলে। ১৯৯ থেকে ডাবল সেঞ্চুরির জন্য বড় শট খেলতে গিয়েছিলেন ম্যাথিউজ। কিন্তু নাইম হাসানের সেই ডেলিভারি তার ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে চলে যায় সাকিব আল হাসানের হাতে। ফলে ১৯৯ রানে থামতে হয় ম্যাথিউজকে।
নয় ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের ম্যারাথন ইনিংসে ৩৯৭ বল খেলে ১৯ চার ও ১ ছয়ের মারে এ ইনিংস সাজিয়েছেন ম্যাথিউজ। তার ব্যাটে ভর করে অলআউট হওয়ার আগে ৩৯৭ রান করেছে শ্রীলংকা।
শুরুতে ছিলেন না দলেই। মেহেদী হাসান মিরাজ চোটে পড়ায় সুযোগ মেলে দলে। এরপর সুযোগ মিলে যায় একাদশেও। দুই উইকেট পেলেও প্রথম দিন ছিলেন কিছুটা অধারাবাহিক। দ্বিতীয় দিন দারুণ বোলিংয়ে নিলেন আরো তিন উইকেট নিলেন নাঈম হাসান।
১৪৮তম ওভারে আসিথা ফার্নান্দোকে বোল্ড করে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট নেন তরুণ এই অফ স্পিনার।
ওভারের পঞ্চম বলটি একটু টার্ন করে ভেতরে ঢোকে। কিন্তু বলের লাইন পড়তে ভুল করেন আসিথা। তার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল এলোমেলো করে দেয় স্টাম্প। ১ রানে ফিরলেন একাদশ ব্যাটসম্যান হিসেবে নামা আসিথা। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন নাইম।